সম্মানিত যাকাত উনার আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল
, ০৮ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৬ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ২৫ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ১০ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
যে যে সম্পদ বা মালের যাকাত ফরয : সম্মানিত যাকাত মুসলমান উনাদের প্রায় যাবতীয় মালেই ফরয, যদি তার নিছাব ও শর্ত পূরণ হয়। যেমন- সোনা-রূপা, নগদ অর্থ, যমীনে উৎপন্ন ফসল ও ফলফলাদি, যমীনে প্রাপ্ত গুপ্ত ধন, খণিতে প্রাপ্ত খণিজ দ্রব্য, ব্যবসায়ের পণ্যদ্রব্য, গৃহপালিত পশু, যেমন- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া এসকল প্রকার মালেই যাকাত ফরয। (আল হিদায়া)
মাল-সম্পদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শর্তাবলী :
১. মাল নিছাব (শরীয়ত নির্ধারিত) পরিমাণ হওয়া।
২. উক্ত মাল নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য ও স্থাবর মালের অন্তর্ভুক্ত না হওয়া।
৩. উক্ত মালের উপর পূর্ণ এক বছর অতিক্রান্ত হওয়া।
৪. মালের উপর ব্যক্তির পূর্ণ মালিকানা থাকা।
৫. মুদ্রা, টাকা বা ব্যবসায়ের পণ্য হওয়া।
৬. পশুর যাকাতের ক্ষেত্রে পশু সায়িমা তথা বিচরণশীল ও বর্ধনশীল হওয়া।
৭. ফসলের সম্মানিত যাকাত তথা ওশরের ক্ষেত্রে, যমীনে উৎপাদিত ফসল কম-বেশি যাই হোক; (বিনা শ্রম ও সেচে) তার দশ ভাগের এক ভাগ অথবা (শ্রম ও সেচে) বিশ ভাগের এক ভাগ সম্মানিত যাকাত দেয়া, আমাদের সম্মানিত হানাফী মাযহাবে ফসলের কোন নিছাব নেই।
যে সব মাল-সম্পদের উপর যাকাত ওয়াজিব নয় :
১. বসবাসের ঘর।
২. পরিধেয় বস্ত্র।
৩. ঘরের আসবাবপত্র।
৪. আরোহণের পশু বা যানবাহন।
৫. কাজের জন্যে ভাতা প্রদত্ত গোলাম-বাঁদী অথবা খাদিম-খাদিমা।
৬. ব্যবহারের হাতিয়ার বা যুদ্ধাস্ত্র।
৭. হারানো বা লোকসান যাওয়া মাল।
৮. সমুদ্রে ডুবে যাওয়া মাল।
৯. ছিনতাই করে নিয়ে গেছে এমন মাল।
১০. মাটিতে পুঁতে রাখা মাল-সম্পদ যার স্থান স্মরণে নেই।
১১. ঋণ প্রদত্ত মাল যা গ্রহীতা বারবার অস্বীকার করেছে।
১২. লুণ্ঠিত মাল।
১৩. ব্যবসার অযোগ্য মাল।
১৪. স্থানান্তরের অযোগ্য ও স্থাবর ধন-সম্পদ।
১৫. এক বছর পূর্ণ হয়নি এমন মাল।
১৬. ইয়াতীম, অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও গোলাম-বাঁদীর মাল।
এ প্রসঙ্গে কিতাবে বর্ণিত আছে-
وَلَيْسَ فِيْ دُوَرِ السُّكُنِـيِّ وَوَثِيَابِ الْبَدَنِ وَاَثَاثِ الْـمَنَازِلِ وَدَوَابِّ الرُّكُوْبِ وَعَبَيْدِ الْـخِدْمَةِ وَسِلَاحِ الْاِسْتِعْمَالِ زَكٰوةٌ
অর্থ : “বসবাসের ঘর, পরিধেয় বস্ত্র, ঘরের আসবাবপত্র, আরোহনের পশু, কাজের জন্যে গোলাম-বাঁদী, ব্যবহারের হাতিয়ারের যাকাত দিতে হবে না। ” (মুখতাসারুল কুদূরী, পৃষ্ঠা ১১৫, প্রকাশনী মুওয়াসসাতুর রাইয়্যান)
অবৈধ মালের যাকাত নেই : হারাম কামাই দ্বারা অর্জিত মালের কোন যাকাত নেই। যদি কেউ যাকাত উনার নিয়ত করে যাকাত দেয় তাহলে তার কবীরা গুনাহ হবে। বৈধ মনে করলে কুফরী হবে। (ফিকাহর কিতাবসমূহ)
খনিজ দ্রব্যের যাকাত : যমীনে গচ্ছিত গুপ্তধন ও ধনভান্ডারকে ‘কানয্’ বলে। খনিতে জাত সোনা, রূপা প্রভৃতি খনিজদ্রব্যকে ‘মাআদিন’ (মা’দানিয়ত) বলে এবং উভয়কে এক সাথে ‘রেকায’ বলে। কিতাবে উল্লেখ আছে, কানযকেও এক পঞ্চমাংশ সম্মানিত যাকাতরূপে দিতে হয়। তাকেই সাধারণতঃ খুমুস বলে। (গনীমতের পঞ্চমাংশকেও খুমুস বলে। )
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْمـُؤْمِنِيْنَ السَّادِسَةِ اُمِّ سَلَمَةَ عَلَيْهَا السَّلَامُ اَنَّـهَا كَانَتْ تَلْبِسُ اَوْضَاحًا مِّنْ ذَهَبٍ فَسَاَلَتْ عَنْ ذٰلِكَ نَبِيَّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ اَكَنْزٌ هُوَ فَقَالَ اِذَا اَدَّيْتِ زَكَاتَهُ فَلَيْسَ بِكَنْزٍ الْمَعْنٰى وَاحِدٌ.
অর্থ : “উম্মুল মু’মিনীন আস সাদিসা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি স্বর্ণের বালা পরতেন। তারপর তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এগুলো কি গচ্ছিত সম্পদ বা কানয? নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যদি এর যাকাত আদায় করেন তবে তা কানয হবে না। ” (দারে কুতনী ২য় খ- ৪৯৬ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ১৯৫০; সুনানুল কবীর লিল বায়হাক্বী ৪র্থ খ- ৮৩ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ৭৪৮৫; মুস্তাদরাক ১ম খ- ৩৯০ পৃষ্ঠা : হাদীছ শরীফ নং ১৪৩৮)
মণি-মুক্তা ও মূল্যবান পাথরের যাকাত উনার বিধান :
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَلِىٍّ كَرَّمَ اللهُ وَجْهَهٗ عَلَيْهِ السَّلَامُ مَرْفُوْعًا لَا زَكٰوةَ فِىْ اللُؤْلُؤِ.
অর্থ : “হযরত কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহূ আলাইহিস সালাম তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন যে, মণি-মুক্তা তথা মূল্যবান পাথরের সম্মানিত যাকাত নেই। ” (তালখীছ ২য় খ- ৩৮৮ পৃষ্ঠা)
উল্লেখ্য যে, উক্ত মণি-মুক্তা ও মূল্যবান পাথরের ব্যবসা করলে মালে তিজারত হিসেবে ছহিবে নিছাব হলে অবশ্যই যাকাত আদায় করতে হবে। (ইবনে আবী শায়বা, আল হিদায়া)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করলে তা দ্বিগুণ-বহুগুনে বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দেয়া হয়
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (১)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












