সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
, ২৩ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৪ হাদী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ০৩ এপ্রিল, ২০২৪ খ্রি:, ২০ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার ফাযায়িল-ফযীলত মুবারক সম্পর্কে কিতাবে উল্লেখ আছে- সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন সর্বোচ্চ পর্যায়ের শরীফ, সর্বাধিক সমঝদার, সম্মানিত নসব মুবারক উনার অধিকারিণী, অত্যন্ত ধৈর্যশীলা ও ইবাদতগুজার। সুবহানাল্লাহ! তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমতী, তাক্বওয়া পরহেজগারীর অধিকারিণী ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উনাকে সম্বোধন করে ইরশাদ মুবারক করেছিলেন-
إنّكِ لإبنَةَ نبئٍ، و إن عمَّكِ لنبئٌ، و إنكِ لتحتَ نبئٍّ، فَفِيْمَ تفخَّرَ عليكِ
অর্থ: নিশ্চয়ই আপনার সম্মানিত পূর্ব-পুরুষ পিতা একজন সম্মানিত নবী আলাইহিস সালাম (অর্থাৎ হযরত হারুন আলাইহিস সালাম), আপনার সম্মানিত পূর্ব-পুরুষ চাচাও একজন সম্মানিত নবী আলাইহিস সালাম (অর্থাৎ হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম)। আপনার মহাসম্মানিত আহাল তিনিও একজন সম্মানিত নবী আলাইহিস সালাম (অর্থাৎ নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তাই অন্যান্যরা কি নিয়ে আপনার সাথে ফখর করবে?
অর্থাৎ মহাসম্মানিত তিনজন নবী ও রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার খাছ নিসবত মুবারক রয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
খায়বরের জিহাদের পূর্বে তিনি স্বপ্নে দেখেন যে, উনার কক্ষে চন্দ্র উদিত হয়েছে। তিনি এই স্বপ্নের কথা উনার মাতাকে জানালেন। ইহা শুনে উনার মাতা উনার মুখে খুব জোরে চপেটাঘাত করল, যাতে উনার চেহারা মুবারকে দাগ পড়ে যায় এবং বলল, আপনি আরবের বাদশাহর ক্ষমতার নীচে আপনার গর্দান প্রসারিত করে দিবেন। যখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সঙ্গে উনার নিসবাতুল আযীমাহ শরীফ অনুষ্ঠিত হলো উনার পবিত্র চেহারা মুবারকে উক্ত দাগ দেখে এ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি এ বিষয়ে বিবরণ দান করেন। সুবহানাল্লাহ! (ইছাবা)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন খুবই দৃঢ় চিত্তের অধিকারিনী, জীবনে কখনও ধৈর্যহারা হননি। ইহুদীদের জন্য খায়বরের জিহাদ ধ্বংসকর প্রমাণিত হয়। এই জিহাদের ফলে তাদের সকল আশা-আকাঙ্খা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। এই জিহাদে তাদের নাম করা সর্দারগণ মারা যায়। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার পিতা ও ভাইও এদের মধ্যে ছিলো। কিন্তু এদের জন্য জীবনে কখনও উনাকে দুঃখ ও শোক প্রকাশ করতে কেউ দেখেনি। এ কারণে খায়বরবাসীরা উনাকে বিশেষ মর্যাদা দিতো। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার প্রতি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুহব্বত মুবারক ছিল অনন্য ও বেমেছাল। তিনি একবার সফরে ছিলেন। অন্যান্য উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারাও সঙ্গে ছিলেন। ঘটনাক্রমে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার সওয়ারী উট অসুস্থ হয়ে পড়ে। তিনি খুব চিন্তিত হলেন এবং কাঁদতে শুরু করলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জানতে পেরে উনার নিকট গমন করলেন এবং আপন হস্ত মুবারক দ্বারা উনার চোখের পানি মুবারক মুছে দেন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম তিনিও নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অপরিসীম মুহব্বত মুবারক করতেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন অন্তিম মারিদ্বী শান মুবারক প্রকাশ করেন তখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম তিনি কান্নাকাটি করে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার সমস্ত কষ্ট যদি আমার উপর আপতিত হতো! অন্যান্য হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালামগণ ইহা শুনে আশ্চর্যান্বিত হলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! তিনি সত্য বলেছেন। সুবহানাল্লাহ! (ইছাবা)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম তিনি অত্যন্ত দানশীলা ছিলেন। উনার একটিমাত্র বাড়ী ছিল যা তিনি উনার দুনিয়াবী জিন্দেগী মুবারকে অবস্থান মুবারক করাকালীন দান করে দেন। (তাবাকাত)
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম যখন প্রথমে পবিত্র আহলু বাইত শরীফে তাশরীফ মুবারক আনয়ন করেন, উনার বেশ কিছু স্বর্ণের অলংকার অন্যান্য হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম এবং সাইয়্যিদাতুনা হযরত আন নূরুর রবিয়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম উনাদেরকে হাদিয়া হিসাবে দিয়ে দেন। সুবহানাল্লাহ! (যারক্বানী)
শত্রুরা যখন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার গৃহ অবরোধ করে এবং খাদ্য ও পানীয় সরবরাহ বন্ধ করে দেয়, তখন সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম তিনি কিছু খাদ্য নিয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার গৃহের দিকে অগ্রসর হন। কিন্তু শত্রুরা উনাকে বাধা দান করে। অতঃপর তিনি সিবতু রসূল আর রবি’ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছানী আলাইহিস সালাম উনাকে দিয়ে এই খাদ্য দ্রব্যগুলি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট পৌঁছাতে সমর্থ্য হন। সুবহানাল্লাহ!
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম তিনি উনার পরিত্যক্ত সম্পদের এক তৃতীয়াংশ উনার বোনের ছেলের জন্য অসীয়ত মুবারক করেছিলেন, বোনের ছেলে তখনও ইয়াহুদি ছিল। উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পরে লোকেরা উনার অসীয়ত মুবারক পূর্ণ করতে দ্বিধা করছিলেন। কিন্তু সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীকা আলাইহাস সালাম উনার নির্দেশে উক্ত অসীয়ত মুবারক পূর্ণ করা হয়। সুবহানাল্লাহ! (তাবাক্বাত)
অন্যান্য হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের ন্যায় সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম তিনি ছিলেন ইলম ও মা’রিফাতের কেন্দ্র। বিভিন্ন মহিলারা উনার নিকট বিভিন্ন বিষয়ে জানার জন্য প্রশ্ন করত, তিনি সে বিষয়ে তাদেরকে তা’লীম মুবারক দান করতেন। হযরত ছুহায়রা রহমতুল্লাহি আলাইহা নামে এক তাবেয়ী মহিলা বলেন, আমি একবার হজ্জ হতে প্রত্যাবর্তন করে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল আশিরাহ আলাইহাস সালাম উনার সাথে সাক্ষাত করতে গেলাম। আমি দেখলাম বহু সংখ্যক মহিলা উনার নিকটে বসা। এমনকি সুদুর কূফা নগরী হতেও অনেক মহিলা এসেছেন। তারা উনাকে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন করছিলেন এবং তিনি অত্যন্ত সুন্দর ভাবে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। হযরত ছুহায়রা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও এই একই উদ্দেশ্যে এসেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! (মসনদে আহমদ)
মুহাদ্দিছীনে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের হিসাব মতে উনার কাছ থেকে ১০টি পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বর্ণনা পেয়েছেন। ইহা রাবীদের বর্ণনা অনুযায়ী উনার বর্ণিত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সংখ্যা, নতুবা উনাদের চাল চলন, আচার ব্যবহার সবই পবিত্র হাদীছ শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত। বহু দূর দূরান্তর থেকে অনেক মহিলা তা’লীম গ্রহণ করার জন্য উনার নিকট আগমন করতেন। হিজরী ৭ম সনে খায়বর বিজয়ের পরে তিনি হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের অন্তর্ভুক্ত হন। দেখা যায় হিজরী ৫০ সনে তিনি উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করা পর্যন্ত প্রায় ৪৩ বছর উম্মুল মু’মিনীন হিসাবে তিনি সকল মহিলাদের তা’লীম তালক্বীনে ব্যাপৃত ছিলেন। সুবহানাল্লাহ!
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পরিভাষা, শব্দ ও বানান আগ্রাসন (৯)
০১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
হালাল হারামের কথা-১৪
০১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সুমহান পবিত্র ২১শে শাওওয়াল শরীফ: মুবারক প্রেক্ষাপট
০১ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
দ্বীন ইসলাম উনার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দিবস পালন নিয়ে বিভ্রান্তির দলীলসম্মত জাওয়াব
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
রাজারবাগ শরীফ উনার পরিচিতি
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল খ্বমিসাহ আলাইহাস সালাম উনার পবিত্র সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইলিম এবং আলিম উনাদের ফযীলত
৩০ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৩১)
২৮ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র কুরবানী ও কুরবানীদাতার ফযীলত (২)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ (৮)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (৬)
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)