সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম সিবতু রসূল আল খমিস আলাইহিস সালাম অর্থাৎ সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নূরুস সালাম (জবান মুবারক) নিঃসৃত নছীহত মুবারক
, ০৫ শাবান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৮ তাসি’, ১৩৯১ শামসী সন , ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি:, ০৩ ফাল্গুন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র মীনায় সুমহান মদীনা শরীফ উনার আলিম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের প্রতি প্রদত্ত নছীহত শরীফ:
কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনার এক বছর আগে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মক্কা শরীফ উনার পার্শ্ববর্তী পবিত্র মীনায় সুমহান মদীনা শরীফ উনার আলিম ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে একদা এক বিশেষ তা’লীম মুবারকে এক বেমেছাল দীপ্তময় নছীহত মুবারক করেন। এ তা’লীম মুবারকে তিনি যে নছীহত শরীফ প্রদান করেন তার কিয়দাংশ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
‘হে লোকসকল! মহান আল্লাহ পাক তিনি (বনি ইসরাইলের) মৌলভীদেরকে যে তিরস্কার করেছেন ও উপদেশ দিয়েছেন তা থেকে তোমরা শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করো। তিনি ইরশাদ মুবারক করেন: “কেন (তাদের মধ্যকার) রাব্বানীগণ (আ’রিফ ও দরবেশগণ) ও মাওলানাগণ তাদের পাপ-কথা বলতে ও হারাম ভক্ষণ করতে নিষেধ করলো না?” (পবিত্র সূরা মায়েদাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৬৩
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, “বনি ইসরাইলের মধ্যে যারা কুফরীতে লিপ্ত হয়েছিল, তাদেরকে হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম ও হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম উনাদের কণ্ঠ মুবারকে অভিসম্পাত করা হয়। কারণ তারা নাফরমানী করতো ও (মহান আল্লাহ পাক উনার নির্ধারিত) সীমালঙ্ঘন করতো। তারা যেসব মন্দ কাজ করতো তা থেকে তারা পরস্পরকে নিষেধ করতো না; তারা যা করতো তা কতই না নিকৃষ্ট কর্ম!’’ (পবিত্র সূরা মায়েদাহ্ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৮-৭৯)
কেন মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের এভাবে তিরস্কার করলেন? কারণ, তারা যালেমদের- পাপাচারীদের যুলুম ও পাপ কাজ করতে এবং ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করতে দেখতো, কিন্তু তাদের কাছ থেকে পার্থিব সুযোগ-সুবিধা লাভ ও যুলুমের হাত থেকে নিরাপদ থাকার উদ্দেশ্যে তাদের এসব থেকে নিষেধ করতো না। অথচ মহান আল্লাহ পাক তিনি নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন: “তোমরা লোকদের ভয় করো না, কেবল আমাকেই ভয় করো।’’ (পবিত্র সূরা মায়েদাহ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৪)
পবিত্র মক্কা শরীফ উনার থেকে চলে যাওয়ার সময় নছীহত শরীফ:
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মদীনা মুনাওয়ারা শরীফে রক্তপাত এড়ানোর লক্ষ্যে পরিবার-পরিজন ও ভক্ত-অনুরক্তদের নিয়ে মদীনা শরীফ ছেড়ে পবিত্র মক্কা শরীফে চলে যান এবং মসজিদে হারাম শরীফে অবস্থান মুবারক গ্রহণ করেন। সেখানে থাকাকালে উনার কাছে কুফাবাসীর পক্ষ থেকে দাওয়াত আসতে থাকে। তখন সাইয়্যিদুনা হযরত হযরত ইমামুছ ছালিছ মিন আহলি বাইতি রসুলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কুফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়ার আগের রাতে তিনি উনার মুবারক জিয়ারতে আগত আশেকীন মুহিব্বীন উনাদের প্রতি নিম্নোক্ত ভাষণ প্রদান করেন:-
‘সকল প্রশংসা কেবল মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য। উনার হাবীব, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খতামুন্ নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অফুরন্ত পবিত্র দুরূদ শরীফ এবং সালাম মুবারক । উনারা যা চাইবেন তা-ই হবে। উনার সম্মতি ছাড়া কারও পক্ষেই কোনো কাজ সম্পাদন করা সম্ভব নয়।
আদম-সন্তানদের গলায় মৃত্যুর দাগ কেটে দেয়া হয়েছে (অবধারিত করে দেয়া হয়েছে) যেভাবে মহিলাদের গলায় হারের দাগ কেটে থাকে। হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম যেভাবে হযরত ইউসুফ অলাইহিস সালাম উনার সাথে সাক্ষাৎ মুবারক উনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন ঠিক সেভাবেই আমি আমার পূর্ববর্তী ব্যাক্তিত্ব আলাইহিমুস সালাম উনাদের সাথে সাক্ষাৎ মুবারক উনার আশা পোষণ করি। আর যে জায়গা আমার শাহাদাত্গাহ্ হবে এবং আমার জিসিম মুবারক উনাকে গ্রহণ করবে সে জায়গা আমার জন্য পূর্ব থেকেই নির্ধারণ করা হয়েছে। আমাকে এখন সেখানে পৌঁছতে হবে। আমি যেন দেখতে পাচ্ছি, কারবালার নাওয়াভীসে মরুভূমির নেকড়েরা আমার জিসিম মুবারক ছিন্নভিন্ন করছে এবং তাদের শূন্য উদর ভর্তি করছে। আর কোনো মানুষের জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি যা নির্ধারণ করে দিয়েছেন তা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ পাক তিনি যাতে সন্তুষ্ট, আমরা হযরত আহলে বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারাও তাতেই সন্তুষ্ট। সুবহানাল্লাহ!
এ হচ্ছে মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে পরীক্ষা; আমি এ পরীক্ষায় ধৈর্যধারণ করবো। আর ধৈর্যশীলদের প্রতিদান পরম দাতা মহান আল্লাহ পাক উনার হাতে। যারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে আত্মীয়তা ও ঘনিষ্ঠতার সম্পর্ক মুবারক রাখেন, উনারা কখনোই উনার থেকে পৃথক হবেন না এবং বেহেশ্ত উনার সমীপেই থাকবেন। আর উনাদের মুবারক জিয়ারতে মহান আল্লাহ পাক উনার মহান হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নয়নদ্বয় মুবারক আনন্দিত হবেন। আমি প্রত্যুষে রওনা হবো, ইনশাআল্লাহ। (ক্বেচ্ছেয়ে কারবালা, পৃষ্ঠা ১৪৮; আল্-লুহূফ্,পৃষ্ঠা ২৫)
-মুহম্মদ মুশফিকুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করার অপরিসীম ফযীলত
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র দুরূদ শরীফ দৈনিক বাদ ইশা ও বাদ ফজর ১০০ বার করে পাঠ করা সকলের জন্য আবশ্যক
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র ক্বাবলাল জুমুআহ্, বা’দাল জুমুআহ্ এবং সুন্নাতুল ওয়াক্ত নামায উনার শরঈ আহকাম (৫)
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
অসংখ্য হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত- প্রাণীর ছবি হারাম
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মসজিদে ইবাদত করতে বাধা দেয়া বা মসজিদ উচ্ছেদ করা কুফরী
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে রাস্তা করার অজুহাতে মসজিদ ভাঙা কখনো শরীয়তসম্মত নয়
০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদা-হুসনে যন পোষণ করা ঈমান
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৬)
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (১)
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহিলাদের প্রতি মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ নির্দেশনা মুবারক- পর্দা পালন করা
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












