সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (২৭)
(বিলাদত শরীফ ৫৩৬ হিজরী, বিছাল শরীফ ৬৩৩ হিজরী)
, ২০ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৮ ছালিছ, ১৩৯২ শামসী সন , ২৬ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ১১ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
গাউছুল আ’যম হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাথে সাক্ষাত:
একদিকে হযরত গাউছুল আ’যম বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার খানকা শরীফে মুরিদানদেরকে যিকিরের ‘দরস’ (শিক্ষা) দিচ্ছিলেন। অপরদিকে মাহফিল শরীফে সামা শরীফ উনার আওয়াজ উচ্চ হতে উচ্চতায় পৌঁছতে ছিলো।
রাত দ্বিপ্রহরের পর হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কামরার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন- হে দ্বীনের সাহায্যকারী! আমি কি ভিতরে আসবো?
হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি স্বসম্মানে দাঁড়িয়ে উত্তর দিলেন- হুযূর! আপনি ভিতরে আসবেন এতে অনুমতির কোন প্রয়োজন আছে কি? দয়া করে প্রবেশ করুন। হযরত গাউছুল আ’যম বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি ভিতরে প্রবেশ করলেন এবং হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বসতে বললেন। উভয়ে বসে কিছুক্ষণ বাক্যালাপ করার পর হযরত গাউছুল আ’যম বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, কাল সকালে আপনার সাথে হয়তো দেখা হবে না, আপনি চলে যাবেন তাই দেখা করতে এলাম।
শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার সাথে সফর:
কুতুবুল মাশায়িখ, সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল বাররি ওয়াল বাহার, মুজাদ্দিদে যামান, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র জীবনী মুবারক উনার বিরাট একটি অংশ সফরে অতিবাহিত হয়েছে। মহান আল্লাহ পাক উনার নিদর্শনরাজী দর্শনে তায়াল্লুক-নিছবত মুবারকে সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছার ক্ষেত্রে এই সফর বিরাট ভূমিকা পালন করেছিল।
তিনি নিজেই বর্ণনা করেন, “আমি বাগদাদ শরীফে আমার পীর ও মুর্শিদ ক্বিবলা সুলত্বানুল আউলিয়া, সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র যিয়ারত মুবারক ও ক্বদমবুছী মুবারক হাছিলের সৌভাগ্য অর্জন করলাম। আর সেই সময় যুগশ্রেষ্ঠ অনেক ওলীআল্লাহ উনার মুবারক খিদমতে উপস্থিত ছিলেন। আমার পীর ও মুর্শিদ ক্বিবলা আমার প্রতি দয়া পরবশ হয়ে আমাকে দু’রাকায়াত নামায আদায়ের নির্দেশ মুবারক দিলেন। আমি যথাযথভাবে তা পালন করলাম। আমার নামায শেষ হলে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। আমার হাত ধরে আকাশের দিকে মুখ করে বলতে লাগলেন, আয় বারে ইলাহী! আমি মুঈনুদ্দীন উনাকে আপনার কুদরতী হাত মুবারকে সমর্পন করলাম।
তারপর পবিত্র খানকা শরীফে, সম্মানিত তরীক্বা উনার নিয়ম অনুযায়ী রিয়াযত-মাশাক্কাতে নিয়োজিত রইলাম। কিছুদিন পর আমার মহাসম্মানিত পীর ও মুর্শিদ ক্বিবলা সুলত্বানুল আউলিয়া, সাইয়্যিদুনা হযরত উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি পবিত্র মক্কা শরীফ চলে গেলেন। আমাকেও উনার সফর মুবারকের সাথী বানালেন। সেখানে আমাকে নাওদান (পানির নালা) এর নিচে দাঁড়াতে বললেন। নির্দেশ মুবারক পেয়ে আমি সেখানে দাঁড়ালাম। তিনি আমাকে দোয়ায়ে খইর (উৎকৃষ্ট দোয়া) করলেন। গায়েবী নেদা (অদৃশ্য) আওয়াজ ভেসে এলো “আমি মুঈনুদ্দীন উনাকে গ্রহণ করলাম। ”
তারপর তিনি আমাকে নিয়ে পবিত্র মদীনা শরীফে গেলেন। আমরা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র রওজা শরীফ উনার নিকটবর্তী হলাম। আমার মহান পীর ও মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আমাকে আদেশ করলেন সালাম করুন। আমি সালাম করলাম। পবিত্র রওজা শরীফ হতে আওয়াজ মুবারক এলো-
وَعَلَيْكُمُ السَّلَامُ يَا قُطُبَ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ
অর্থ: “হে যমীনের উপরিভাগের কুতুব! আপনাদের উপরেও মহান আল্লাহ পাক উনার সালাম (শান্তি) বর্ষিত হউক। ”
আমার মহান পীর ও মুর্শিদ ক্বিবলা রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনি কামালিয়াতে পরিপূর্ণতার স্তরে পৌঁছে গেছেন। আজ তারই সত্যায়ন বা স্বীকৃতি পেলেন। সুবহানাল্লাহ!
আমরা পবিত্র মদীনা শরীফ থেকে রওয়ানা হয়ে বদাখশানে পৌঁছলাম। সেখানে একজন বুযূর্গ ব্যক্তির সাক্ষাত পেলাম। যিনি সাইয়্যিদুত ত্বয়িফা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বংশধর ছিলেন। তখন উনার বয়স মুবারক হয়েছিল ১৪০ বছর। তিনি সবসময় মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। উনার একটি পা মুবারক মুল থেকে কাটা ছিল। আমরা দেখে অবাক হলাম। পা না থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি উত্তরে বললেন, আমি দীর্ঘকাল যাবত এ ইবাদতখানায় অবস্থান করছি। কখনো নফস বা প্রবৃত্তির ইচ্ছায় বাইরে বের হইনি। একবার এমন হলো যে, নফসের প্ররোচনায় কর্তিত পা খানা ইবাদতখানার বাইরে বের করেছি, অপরটি বের করে বাইরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এমন সময় গায়েবী নেদা (অদৃশ্য আওয়াজ) হলো হে তায়াল্লুক, নিছবত ও কুরবত, নৈকট্য তালাশকারী! আমার সাথে ওয়াদাবদ্ধ হওয়ার কথা কি ভুলে গেলেন?
এই গায়েবী নেদা (অদৃশ্য আওয়াজ) শুনে সাবধান হলাম। আর ওয়াদা ভঙ্গের জন্য এমনভাবে অনুতপ্ত হলাম যে, বেকারার হয়ে পড়লাম। খাপ থেকে তরবারী বের করে বাইরে বের হওয়া পা কেটে বাইরে ফেলে দিলাম। এই ঘটনা ঘটেছে ৪০ বছর পূর্বে। সে সময় হতে অদ্যবধি সৃষ্টির দর্শন থেকে বিচ্ছিন্ন ও লজ্জিত আছি যে, কাল ক্বিয়ামতের দিন ওলীআল্লাহগণ উনাদের সামনে মুখ দেখাবো কি করে? (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারাই উম্মুল কায়িনাত
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
একমাত্র মহান আল্লাহ পাক ব্যতিত অন্য কারও অনুসরন করার বিষয়ে বাতিলপন্থীদের বিভ্রান্তির জাওয়াব
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ভোট, নির্বাচন, পদপ্রার্থী হওয়া ইত্যাদি কোনটিই জায়িয নেই
১৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু ইহুদী ও মুশরিকরা
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা সত্যের মাপকাঠি
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৫৬)
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)