সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪০)
(বিলাদত শরীফ ৫৩৬ হিজরী, বিছাল শরীফ ৬৩৩ হিজরী)
, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০:০০ এএম ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
আজমীর শরীফে আগমন:
বলা বাহুল্য, হিন্দু শাস্ত্রের কেন্দ্রস্থল ছিল আনা সাগর। সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মুরীদগণকে নিয়ে সেখানে অবস্থান মুবারক গ্রহণ করলেন। হিন্দুরা কোনক্রমেই তা বরদাশত করতে পারছিলো না। সুতরাং হিন্দু পুরোহিতদের একটি প্রতিনিধিদল পৃথ্বিরাজের দরবারে আসলো। আবেদন জানালো যে, মুসলমান দরবেশ উনাদের অবস্থানের কারণে মন্দিরের কথিত পবিত্রতা ক্ষুণœ হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ! তাদের কাজ-কর্মে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। অতএব, যেকোনো প্রকারেই হোক উনাদেরকে মন্দির এলাকা থেকে বিতাড়িত করা উচিত। নাউযুবিল্লাহ! কেননা, উনারা যদি কিছুকাল এখানে অবস্থান করতে পারে, তবে এখন তাদেরকে বিতাড়িত করার যে সম্ভাবনাটুকু আছে, পরে সেটাও থাকবে না। তখন আক্ষেপ ও অনুতাপ করা ছাড়া কোনো গত্যন্তর থাকবে না।
এদিকে কুতুবুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মুরীদগণকে নিয়ে বহাল তবিয়তে আনা সাগরের তীরে জঙ্গলঘেরা ছোট একটি টিলার উপর অবস্থান করছেন। একটা কুঁড়ে ঘর তৈরী করে অবস্থান মুবারক করতে লাগলেন। উল্লেখ্য, উটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আজমীর শরীফের ঘরে ঘরে প্রচার হয়ে গেলো যে, একদল যাদুকর এসেছেন যাঁরা অসম্ভব রকমের যাদুর ক্ষমতা রাখেন ও বিরাট শক্তিধর। নাঊযুবিল্লাহ!
আজমীর শরীফ উনার অনেক বাসিন্দা কৌতূহলী হয়ে নবাগত মহাপুরুষ উনাকে এক নজর দেখার জন্য কুঁড়ে ঘরে আসতে লাগলো। কিন্তু উনার নূরানী চেহারা মুবারক দেখার পর তাদের ধারণা বদলে গেলো। তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলো যে, এ কেমন মহাপুরুষ? উনার মধ্যে না আছে কোন বেশভূষা আর না আছে কোনো যাদুর প্রভাব। উনার নিকট কোনো মূর্তি নেই, নেই কোন দেব দেবীর ফটো। গায়ে নেই কোন ছাই ভস্ম, কপালে নেই কোন চন্দন চর্চা ও সিঁদুরের তিলক। তিনি সাধুও নন আর কোনো যাদুকরও নন। উনারা তো সাধারণ মানুষের দলভুক্ত ভিনদেশী ফকীর দরবেশ। কিন্তু তিনি এমন ক্ষমতা পেলেন কোথা থেকে যে, উনার একটি কথায় রাজার সমস্ত উটগুলোকে মাটি কামড়ে ধরে রেখেছিলো। তারা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খাদিম উচ্চস্বরে পবিত্র মাগরিব নামায উনার আযান দিতে লাগলেন। আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার এবং লা ইলাহা ইল্লাহ বলে আযান শেষ করলেন। সম্মানিত আযানের ধ্বণি শুনে তারা বুঝতে পারলো যে এ ভিনদেশী লোকগুলো অবশ্যই মুসলমান হবেন। পবিত্র আযানের ধ্বণিতে তাদের অন্তরাত্মা কেঁপে উঠেছিলো।
স্মর্তব্য যে, পৃথ্বিরাজ অতি গোপনে তার একান্ত বাধ্যগত সৈন্যকে পাঠিয়েছিলো কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে শহীদ করার জন্য। নাঊযুবিল্লাহ! কিন্তু বার বার সে নিষ্ফল হয়ে ফিরে যাচ্ছিলো। তবে ঘরে কিংবা রাজদরবারে ফিরতে পারছিলো না রাজার ভয়ে। কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট বার বার আসা যাওয়া এবং উনার যবান মুবারক থেকে নিঃসৃত বাণী মুবারক শুনতে শুনতে হিন্দু ধর্মের প্রতি তার বিতৃষ্ণা জন্মেছিলো। একদিন সে কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র ক্বদম মুবারকে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে বললো, “আমি আপনার পবিত্র ধর্ম গ্রহণ করার জন্য নিয়ত করেছি। দয়া করে আমাকে আপনার সম্মানিত দ্বীনের মধ্যে শামিল করুন। আমার বাইয়াত কবুল করুন। কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তাকে গ্রহণ করলেন এবং পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করিয়ে নিজের ছোহবত মুবারকে রেখে দিলেন। সুবহানাল্লাহ!
আজমীর শরীফে অনেকের কানে এখবর পৌঁছে গেলো, যে লোকটিকে রাজা পাঠিয়েছিলো কুতুবুল মাশায়িখ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে শহীদ করার জন্য, সে লোকটি উনার নিকট আত্মসমর্পণ করে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ! এ ঘটনা শুনে অসংখ্য লোক সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করলেন। তারা সবাই মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি ঈমান এনে মুসলমান হলেন। যদিও তখনও মুসলমানদের সংখ্যা হাতে গনা যেতো, তবুও পৃথ্বিরাজের ধর্মে মর্যাদায় ফাটল ধরেছিলো। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পুরুষের জন্য কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (২)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (২)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা পালন করা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই শান্তি ও পবিত্রতা হাছিলের কারণ
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সীমালঙ্ঘনকারী কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












