সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৬৫)
(বিলাদত শরীফ ৫৩৬ হিজরী, বিছাল শরীফ ৬৩৩ হিজরী)
, ২৯ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৭ আউওয়াল, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৬ জুন, ২০২৫ খ্রি:, ১২ আষাঢ়, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নছীহত মুবারক:
সুলত্বানুল হিন্দ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, পাঁচটি জিনিষ দর্শন করা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে ইবাদত এবং গুনাহ মাফের কারণ।
এক: নিজের পিতা-মাতার যিয়ারত (দর্শন) করা, উভয়কে আদবের সাথে সালাম করা। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে সকল সন্তান মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি-রেযামন্দি, কুরবত-নৈকট্য লাভের আশায় নিজের মাতা-পিতার খিদমত করে, মুহব্বতের দৃষ্টিতে উনাদের দিকে নজর দেয় তারা একটি হজ্জের ছওয়াব লাভ করে।
যে সন্তান মাতা-পিতার ক্বদমবুছী করে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের আমল নামায় হাজার বছরের ইবাদতের ছওয়াব লিখে দেন। তাদের সকল গুনাহখতা ক্ষমা করে দেন।
সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি একটি ঘটনা বর্ণনা করেন- একবার এক ব্যক্তি একজন যুবককে স্বপ্নে দেখলেন। সে সম্মানিত জান্নাতে হাজী ছাহেবগণের সাথে ঘোরা ফেরা করছেন। সেই ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে যুবক! আপনাকে তো কখনো কোন নেক কাজ করতে দেখিনি। এ সম্মান-মর্যাদা পেলেন কিভাবে?
যুবক বললেন, দুনিয়ার যমীনে আমি কোন নেক কাজ করিনি, একথা সত্য। কিন্তু একটি ভালো কাজ আমি প্রতিদিন করতাম। সেটা হচ্ছে, বাসা হতে যখনই আমি বের হতাম, তখন আমি আমার মায়ের ক্বদমবুছী করতাম। আমার মা আমার এই উত্তম কাজটির জন্য প্রতিদিন আমার জন্য দোয়া করতেন এই বলে “আয় মহান আল্লাহ পাক! আমার সন্তানের সব গুনাহখতা মাফ করুন এবং হাজী ছাহেবগণের সাথে জান্নাতে থাকার তাওফীক্ব দান করুন। ”
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমার মায়ের দোয়া কবুল করেছেন। আমার গুনাহখতা ক্ষমা করে হাজী ছাহেবগণের সাথে আমাকে জান্নাতে থাকার তাওফীক্ব দান করেছেন।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عَنْ حَضْرَتْ اُمِّ الْـمُؤْمِنِيْنِ الثَّالِثَةِ الصِّدِّيْـقَةِ عَلَيْـهَا السَّلَامُ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ قَـبَّلَ رِجْلَ اُمِّهٖ فَكَاَنَّمَا قَـبَّلَ عَتَـبَةَ الْجَنَّةِ
অর্থ: উম্মুল মু’মিনীন হযরত আছ ছালিছা ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি নিজের মায়ের ক্বদমবুছী করলো সে যেন সম্মানিত জান্নাতের চৌকাঠে বুছা দিলো। সুবহানাল্লাহ!
দুই: পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ দেখা ইবাদত। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার দিকে দৃষ্টি দিলেও গুনাহখতা মাফ হয়। সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি “শরহে আউলিয়া” কিতাবে দেখেছি, যে ব্যক্তি পবিত্র কুরআন শরীফ দেখে দেখে পাঠ করে তাকে মহান আল্লাহ পাক দুই প্রকার ছওয়াব দান করবেন। (১) কালামুল্লাহ শরীফ দেখার জন্য (২) পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ তিলাওয়াতের জন্য। প্রতিটি হরফ (অক্ষর) তিলাওয়াতের জন্য কমপক্ষে ২৫টি নেকী লিপিবদ্ধ করা হয়।
তখন সুলত্বানুল আরিফীন, হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ছফরে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ সাথে রাখা উচিত কিনা? সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানা মুবারক বর্তমান পরিস্থিতির বিপরীত ছিলো। তখন জিহাদের ময়দানে অথবা ছফররত অবস্থায় কোন কাফির-মুশরিক দ্বারা পবিত্র কুরআন শরীফ অবমাননা ও অমর্যাদা হওয়ার ভয় ছিলো। তাই তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতগণকে পবিত্র কুরআন শরীফ সাথে বহন না করার নির্দেশ মুবারক দিয়েছিলেন।
কিন্তু বর্তমানে সেই আশঙ্কা নেই। কাজেই, পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ সফরে সাথে রাখা উচিত। তাছাড়াও পবিত্র কুরআন শরীফ বর্তমান অবস্থার ন্যায় কিতাব আকারে বাঁধানো ছিলো না। তখন বিচ্ছিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন জিনিষের উপর লিখে রাখা হতো।
সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি আরো বলেন, সুলতান মাহমূদ গজনবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে স্বপ্নে দেখে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনার সাথে কিরূপ আচরণ করছেন?
উত্তরে তিনি বলেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, প্রশাসনের কাজে সফর করতে করতে আমি এক এলাকায় গেলাম। সেখানে আমাকে একটি কামরায় রাত যাপনের জন্য থাকতে দেয়া হলো। আমি শুতে যাবো, এমন সময় আমার চোখে পড়লো, বিছানার উপর একখানা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একখানা পৃষ্ঠা মুবারক। তখন আমি মনে মনে চিন্তা করলাম, যে বিছানাতে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একখানা পৃষ্ঠা মুবারক রয়েছেন, সেখানে আরাম করা-শয়ন করা আদব হবে কি?
পরক্ষণে ভাবলাম, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পৃষ্ঠা মুবারক অন্যত্র সরিয়ে দিলে বা অন্য কামরায় পাঠিয়ে দিলে কোন অসুবিধা হবে কি? কিন্তু আবার চিন্তা করলাম, নিজের আরামের জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র কালাম উনার পৃষ্ঠা মুবারক অন্যত্র স্থানান্তরিত করা কি আদব হবে? তাই পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আদবের বিষয়টা চিন্তা করতে করতে রাত শেষ হয়ে ফজর হয়ে গেলো। আমার শোয়া হলো না। আমার এই আমলটি মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট খুবই পছন্দ হয়েছিলো। তিনি ঐ আমলের জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












