সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমতুল্লিল আলামীন, রঊফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ শান মুবারক ‘আছবারুছ ছবিরীন’ (১)
, ০৬ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৪ আউওয়াল, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৩ জুন, ২০২৫ খ্রি:, ২১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فَاصْبِرْ صَبْرًا جَمِيلًا
অর্থ: “আপনি উত্তমভাবে ধৈর্যধারণ করুন। ” (পবিত্র সূরা মায়ারিজ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ০৫)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “ছবর বা ধৈর্য্য হচ্ছে ঈমানের অর্ধেক। ”
মূলত যে সমস্ত গুণাবলী নুবুওওয়াত মুবারকের অবিচ্ছেদ্য অংশ তার মধ্যে অন্যতম হলো ধৈর্য, ক্ষমা এবং সহনশীলতা। এ সমস্ত সুমহান বৈশিষ্ট্য এবং গুণাবলী মুবারকের অধিকারী ছিলেন হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা।
নেকী অর্জন তথা হিদায়েতের কাজে বাধা বিপত্তি, দুঃখ-যন্ত্রনা, জুলুম-নির্যাতন আসার পর তা বরদাশত করাই হচ্ছে সবর বা ধৈর্য। আর সেই মুবারক হিদায়েতের কাজে খতিবুল আম্বিয়া ওয়াল উমাম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কাফির-মুশরিক, ইহুদী-মুনাফিকরা ও আবু জেহেল-আবু লাহাবগং এত বেশী কষ্ট দিয়েছে যে, এ সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বর্ণনা করেছেন, “আমাকে যে কষ্ট দেয়া হয়েছে ইতোপূর্বে আর কোন নবী আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে এরূপ কষ্ট দেয়া হয়নি। ”
এ প্রসঙ্গে বিশেষ কিছু ঘটনা আলোকপাত করা হলো- সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আল ঊলা কুবরা আলাইহাস সালাম উনার ও খাজা আবু তালিব উনার বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পরে ছহিবুল ওহী ওয়াল কুরআন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়ার জন্য কুরাইশদের কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছিলো। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো যত উপায়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কষ্ট দেয়া যায়। নাঊযুবিল্লাহ! আর এর পিছনে ইন্ধন জোগাচ্ছিলো কুচক্রী ইহুদী ও মুনাফিকগুলি। নাঊযুবিল্লাহ!
একবার একটি পথ অতিক্রমের সময় কুরাইশরা নির্মমভাবে ছহিবু আসমায়িল হুসনা, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুল হুদা মুবারকে (মাথা মুবারক) পাথর নিক্ষেপ করলো। পাথরের আঘাতে মহাসম্মানিত নূরুন নাজাত মুবারক (রক্ত মুবারক) ঝরছিলো। এই অবস্থায়ই তিনি মহাসম্মানিত হুজরা শরীফে তাশরীফ মুবারক রাখলেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ অবস্থায় দেখে চিন্তিত অবস্থায় সাইয়্যিদাতুন নিসা, হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি তাড়াতাড়ি উনার পবিত্র নূরুল হুদা মুবারক (মাথা মুবারক) মুছে দিচ্ছিলেন। এ সময় তিনি উনাকে সান্তনা দিয়ে বললেন, “হে আমার লখতে জিগার আওলাদ! আপনি চিন্তিত হবেন না, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার সম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রক্ষা করবেন। ”
আরো একটি ঘটনা- কুরাইশদের বিধিনিষেধে পবিত্র মক্কা শরীফে যখন সম্মানিত ইসলাম প্রচার করা কঠিন হয়ে উঠলো তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একমাত্র সঙ্গী হযরত যায়িদ বিন হারিছাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে সঙ্গে নিয়ে পবিত্র শাওওয়াল শরীফ মাসে মক্কা শরীফ থেকে ৭০ মাইল দূরবর্তী বনী সাকীফের বাসভূমি তায়েফবাসীদেরকে দ্বীন ইসলাম উনার দাওয়াত দিতে গেলেন। কুরাইশ নেতারা অকথ্য গালি বর্ষণ, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে বাজারের ইতর শ্রেণীর গোলাম ও দুষ্ট প্রকৃতির লোকদেরকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে উস্কে দিলো। নাঊযুবিল্লাহ! আর এই দুষ্ট কাফিরের দল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করতে লাগলো। পাথরের আঘাতে উনার মহাসম্মানিত জিসিম মুবারক থেকে মহাসম্মানিত নূরুন নাজাত মুবারক বা রক্ত মুবারকের স্রোত বয়ে তায়েফের রাস্তা লাল হয়ে গেলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুল মুজাসসাম মুবারক অর্থাৎ জিসিম মুবারক থেকে নূরুন নাজাত মুবারক বা রক্ত মুবারক বের হয়ে উনার নূরুল ফখর মুবারক অর্থাৎ না’লাইন শরীফ রক্তে জমাট বেধে গিয়েছিলো। যার কারণে উনার মহাসম্মানিত না’লাইন শরীফ উনার সাথে উনার নূরুদ দারাজাত মুবারক আটকে গিয়েছিলো। নাঊযুবিল্লাহ!
এমতাবস্থায় হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি এসে অনুমতি চাইলেন, আয় মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি যদি অনুমতি মুবারক দেন তাহলে তায়েফের আখশাব নামক পর্বত দুটি একত্রিত করে তায়েফবাসীকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিবো।
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, ‘না; কোন প্রয়োজন নেই। তারা হয়তো বুঝতে পারেনি, কিন্তু তাদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো বুঝতে সক্ষম হবে। ’ তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়ে তাদের হিদায়েতের জন্য দোয়া মুবারক করেন। সুবহানাল্লাহ!
আল্লামা আবু খুবাইব আহমদ ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












