সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, রহমতুল্লিল আলামীন, রঊফুর রহীম, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিশেষ শান মুবারক ‘আছবারুছ ছবিরীন’ (২)
(গত ৫ই যিলহজ্জ শরীফের পর)
, ১৬ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৩ আউওয়াল, ১৩৯৩ শামসী সন , ১২ জুন, ২০২৫ খ্রি:, ৩০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

একবার নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হেরেম শরীফে নামায আদায় করছিলেন। তিনি সিজদায় গেলে কুরাইশদের অনেক সর্দারের উপস্থিতিতে আবু জেহেল ওকবার মাধ্যমে উটের পঁচা দুর্গন্ধময় নাড়ীভুড়ি এনে উনার পবিত্র জিসিম মুবারকে চাপিয়ে দেয়। নাঊযুবিল্লাহ! এ সংবাদ শুনে সাইয়্যিদাতুন নিসা, হযরত আন নূরুর রবি’য়াহ যাহরা আলাইহাস সালাম তিনি এসে তা সরিয়ে ফেলেন।
একবার এক বেদুঈন গোত্রে আর্থিক অনটন দেখা দিলে বেদুঈন গোত্র প্রধান নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট সাহায্যের জন্য আসলেন। বাইতুল মালে সে সময়ে কোন অর্থ-সম্পদ না থাকায় এক ইহুদী ব্যক্তি আশি মিসকাল স্বর্ণ অর্থাৎ প্রায় ত্রিশ ভরি স্বর্ণ কর্জ দিতে এলো। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তা গ্রহণ করলেন এবং বেদুঈন সর্দারকে তা দিয়ে দিলেন এবং তাদের স্বচ্ছলতা ও শান্তির জন্য দোয়া করলেন।
ঋণ পরিশোধের মেয়াদ শেষ হয়নি। এরই মধ্যে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি একদিন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে নিয়ে এক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর জানাযা শেষে সেই ইহুদী ব্যক্তির বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। ইহুদী ব্যক্তি বেয়াদবের মত বলতে লাগলো, কুরাইশ বংশীয় লোক কর্জ নিতে জানে কিন্তু পরিশোধ করতে জানে না... ইত্যাদি আজে বাজে কথা বলতে লাগলো। ইহা শুনে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ইহুদীর গর্দান ফেলে দিতে অনুমতি চাইলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “ইহুদী আলিম কর্জ দিয়ে তো কোন দোষ করেনি। বরং উপকার করেছে...। ” অতঃপর তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে বললেন, বায়তুল মাল থেকে ঋণ পরিশোধ করতে। কটু কথার জন্য অতিরিক্ত বিশ ছা’ (প্রায় পৌঁনে দু’ মন) গম দিয়ে দিতে। ইহুদী ব্যক্তির ব্যবহারের কারণ জিজ্ঞাসা করায় সেই ইহুদী ব্যক্তি বললো, আমি দীর্ঘদিন থেকে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পরীক্ষা করছি। তাওরাত কিতাব অনুযায়ী যে দুটি লক্ষণ বাকি ছিলো প্রথমত উনাকে গোস্বা করানো হলে তিনি খুব ধৈর্য্যশীল হবেন, ক্ষমাশীল ও সহনশীল হবেন। দ্বিতীয়ত উনার সঙ্গে মূর্খের মত আজে বাজে কথা বললে, গালি-গালাজ করলে তিনি আরো বেশী ধৈর্য্যশীল ও সহনশীল হবেন। অতঃপর সেই ইহুদী আলিম হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে সাক্ষী রেখে কালেমা শাহাদাত পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ!
এছাড়াও কষ্ট দেয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের ঘোর শত্রুরা উনার পথে কাঁটা ছড়িয়ে রাখতো। নামায আদায় ও কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের সময় হাসি-ঠাট্টা করতো, যাদুকর, পাগল বলতো। কুরআন শরীফ পাঠকালে জোরে শিষ ও হাত তালি দিতো। নাঊযুবিল্লাহ!
হযরত আবু লুবাবা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার এক বেদুঈন আসলো। নিকটে এসেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুন নুবুওওয়াহ মুবারক অর্থাৎ কাঁধ মুবারকের উপরে যে সূক্ষ্ম ডোরা বিশিষ্ট চাদরখানা ছিলো তা সজোরে পেঁচিয়ে জোরে টান দিলো। এতে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুন নুবুওওয়াহ মুবারক অর্থাৎ কাঁধ মুবারকের চামড়া মুবারক ছিলে গেলো। নাঊযুবিল্লাহ!
তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছিলেন, তুমি চাদর দিয়ে আমাকে আটকে রেখেছো! ছেড়ে না দিলে আমি মাল দিবো কিভাবে? তাদের এরূপ ব্যবহারেও তিনি ধৈর্যের উত্তম পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন। যাতে তারা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম কবুল করে।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, যিনি সমস্ত সৃষ্টির মূল। যার এক দৃষ্টি মুবারক সমস্ত দুনিয়ার কাফিরদের চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যথেষ্ট ছিলো; এরপরেও তিনি কাফির, জালিম ও নাফরমানদের বার বার ক্ষমা করেন এবং তাদের শান্তির পথে নিয়ে আসতে, হাজারো জুলুমের পরেও চরম ধৈর্য্যরে পরিচয় দিতেন। আর সেই বেমেছাল ধৈর্য্যরে কারণে উনাকে বলা হয় ‘আছবারুছ ছবিরীন। ’সুবহানাল্লাহ!
আল্লামা আবু খুবাইব আহমদ ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
১৮ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪)
১৮ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
১৮ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
খলীফাতু রসূলিল্লাহ, সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার অসাধারণ সমরনীতি
১৮ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যারা শত্রুতা করবে অথবা যারা বিদ্বেষ পোষণ করবে, তাদের জন্য কঠিন শাস্তি (২য় অংশ)
১৭ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে অবমাননাকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (১১)
১৭ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বেপর্দা হওয়া লা’নত ও হালাকীর কারণ
১৭ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৭ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সীমালঙ্ঘনকারী কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক
১৭ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
“আমি কি এইসব আহমকদের (কথিত শাসক) জন্য আমার যিনি সম্মানিত রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উনার সুন্নত মুবারক পরিহার করবো?”
১৫ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদন্ড; তাওবা গ্রহনযোগ্য নয়
১৫ জুলাই, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)