সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (২২)
, ১২ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২৪ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ২৩ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ০৯ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সারা বিশ্বে একই দিনে পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে এবং পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে, এমন কথা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোথাও বলা হয় নাই। এমনকি হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম, তাবেয়ীন, তাবে-তাবেয়ীন রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারাসহ চার মাযহাব উনার এমন একজন ইমাম মুজতাহিদ কেউই এমন কথা বলেন নাই যে “সারা বিশ্বে একই সাথে বা একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে ও পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে”। কেউ কেউ নতুন চন্দ্রের উদয়স্থলের ভিন্নতা গ্রহণযোগ্য নয়, এ কথা বললেও তারও ব্যাখ্যা রয়েছে। কিন্তু উক্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে কোন ইমাম মুজতাহিদ উনারা কখনো এমন ফতওয়া দেন নাই যে, সারা বিশ্বে একই সাথে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে ও পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে। যা কোন কালেই সংঘটিত হয় নাই এবং তা কোন দিনই সম্ভব নয়।
যদি প্রশ্ন করা হয়, পৃথিবীর সকল মানুষকে যদি বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়, তাহলে পবিত্র ঈদের দিনে কোন মানুষ কি ভিন্ন দিনে ঈদ করবে? তখন সকলেই বলবে, না। পবিত্র রোযা শুরু করার বিষয়টিও তদ্রুপ।
মোটকথা, কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য হয়। আর বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য হয়।
তিনটি কারণে একই দিনে সারাবিশ্বে রোযা শুরু করা ও ঈদ পালন করা একেবারেই অসম্ভব তা হলো:
(১) اِخْتِلَافُ الْاَوْقَاتِ: সময়ের পার্থক্য।
(২) اِخْتِلَافُ الْمَطَالِعِ: নতুন চাঁদ উদয়স্থলের পার্থক্য।
(৩) اَلْمَسَافَاتُ الْجِغْرَافِيَّةُ: ভৌগলিক দূরত্ব।
ধারাবাহিক আলোচনা.........
(৩) ভৌগলিক দূরত্ব:
ভৌগলিক দূরত্বের কারণেই সময় ও দিনের পার্থক্য ঘটে। কম দূরবর্তী হলে সময়ের পার্থক্য হয়। আর বেশি দূরবর্তী হলে দিনেরও পার্থক্য হয়। এক স্থান থেকে অন্য স্থানের তুলনামূলক যত দূরবর্তী হয় তত সময়েরও পার্থক্য হতে থাকে। এভাবে যখন খুব বেশি ভৌগলিক দূরত্ব হয়, তখন দিনেরও পার্থক্য হয়ে যায়। এটা হলো, একটি নিকৃষ্ট বিদয়াতী দলের কুফরী দাবি। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মধ্যে মৌলিক বিষয় হলো, মহান আল্লাহ পাক এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের পবিত্র নির্দেশ মুবারক পালন করা। আর সেই নির্দেশ কখনো পরিবর্তন হয় না বরং পরিবর্তন হয় সময়, বার ও দিন। ঐক্যতার ভুয়া অজুহাতে সারা বিশ্বে একই দিনে বা একই বার ও তারিখে পবিত্র ঈদ পালন ও পবিত্র রোযা শুরু করতে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার কোথাও বলা হয় নাই।
একই দেশে পরস্পর কম দূরবর্তী অঞ্চলসমূহে যেখানে একই সময়ে ইফতার করা যায় না, সাহরীর শেষ সময় নির্ধারণ করা যায় না, একই সময়ে পবিত্র পাঁচ ওয়াক্ত ছলাত উনার শুরু ও শেষ সময় নির্ধারণ করা যায় না, মাকরূহ ওয়াক্ত হয় না। তাহলে বেশি দূরবর্তী স্থানে একই সময় তো দূরের কথা একই দিনে বা তারিখে করা কখনো সম্ভব নয়।
পৃথিবীর ভৌগলিক অবস্থা সম্পর্কে যার সাধারণ জ্ঞান রয়েছে সে কখনো একথা বলতে পারেনা যে, সারা পৃথিবীতে এক সময়ে পবিত্র ঈদ করা সম্ভব। কারণ পৃথিবী তার মেরু রেখার উপর পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘুরছে। পৃথিবী তার মেরু রেখার চারদিকে এভাবে ঘুরে আসতে প্রায় ২৪ ঘন্টা সময় লাগে। এ চব্বিশ ঘন্টাকে বলা হয় এক দিন। পৃথিবীর এ দৈনিক গতির নাম আহ্নিক গতি। এ আবর্তের সময় পৃথিবীর যে অংশ সূর্যের দিকে থাকে, সে অংশে তখন দিন এবং অপর অংশে রাত হয়। আর একারণেই বাংলাদেশে যখন দিন তখন আমেরিকাতে রাত হয়। সুতরাং বাংলাদেশে চাঁদ উঠলে আমেরিকাতে ঈদ করতে হলে ঈদের জামাত গভীর রাতে করা ছাড়া কোন পথ আছে কি? আর পবিত্র ঈদ উনার নামায দিনের বেলা না পড়ে রাতে পড়ার হুকুম-আহকাম যেমন মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের নির্দেশ মুবারক বিরোধী। তেমনি সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও পবিত্র রোযা শুরু করার কথা বলাও উনাদের নির্দেশ মুবারক বিরোধী।
সৌদিতে সূর্যাস্তের পর মাগরীব উনার ওয়াক্ত শুরু হয়েছে বলে যে সকল রাষ্ট্রে এখনো গভীর রাতে মানুষ ঘুমে মগ্ন অথবা যে সকল রাষ্ট্রে পবিত্র ফজর বা যোহর বা আছর ছলাত উনার ওয়াক্ত চলতেছে, সেই সমস্ত মানুষেরও পবিত্র ছলাতুল মাগরিব পড়তে হবে। এ দাবি যেমন পাগলের প্রলাপ ছাড়া কিছুই নয়, ঠিক তেমনি সৌদিতে নতুন চাঁদ দেখা গেছে বলে সারাবিশে^ একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন করতে হবে এবং পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে একথা মানসিকভাবে সুস্থ মানুষ বলতে পারে না? সুতরাং এ অদ্ভূত দাবিটি হাস্যকর ছাড়া অন্য কিছু নয়।
বলাবাহুল্য যে, স্বল্প স্থানের দূরত্বের কারণে যদি একই সময়ে পবিত্র ইফতার করা ও পবিত্র সাহরীর শেষ সময় নির্ধারণ করা জায়িয না হয়, তাহলে বেশি দূরবর্তী স্থানে একই দিনে বা একই তারিখ ও বারে পবিত্র ঈদ পালন ও পবিত্র রোযা শুরু করার দাবি করা নিঃসন্দেহে হারাম ও কুফরী। এবং এটা সম্মানিত মুসলমানদের পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করার কঠিন ষড়যন্ত্র ছাড়া অন্য কিছু নয়। চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সুওয়াল-জাওয়াব
১৬ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছহিবাতু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, সাইয়্যিদাতু নিসায়িল আলামীন, হাবীবাতুল্লাহ, ছহিবায়ে নেয়ামত, যিক্রুল্লাহ, মুত্বহ্হারাহ, মুত্বহ্হিরাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল উমাম আলাইহাস সালাম উনার বেমেছাল খুছুছিয়ত মুবারক
১৬ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় (৮)
১৬ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৩৫)
১৬ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত আমির বিন আবদিল্লাহ বিন আবদিল ক্বায়েস আল-আনবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৩)
১৬ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছবি তোলা হারাম
১৬ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সুওয়াল-জাওয়াব
১৫ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ছহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ পবিত্র হজ্জ ও পবিত্র উমরা সম্পর্কে (১৯)
১৫ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (২৩)
১৫ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত আমির বিন আবদিল্লাহ বিন আবদিল ক্বায়েস আল-আনবারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (২)
১৫ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমানদের উচিত- হাদীছ শরীফ অনুযায়ী সপ্তাহের বারসমূহ উচ্চারণ করা
১৪ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ছহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ পবিত্র হজ্জ ও পবিত্র উমরা সম্পর্কে (১৮)
১৪ মে, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)