সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৫১)
, ২৪ ছফর শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০২ রবি , ১৩৯২ শামসী সন , ৩০ আগষ্ট, ২০২৪ খ্রি:, ১৫ ভাদ্র , ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
“কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য যেহেতু মান্য করা ফরয, সেহেতু বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য মেনে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ পালন করা ও পবিত্র রোযা শুরু করা ফরযে আইন”
সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরা দাজ্জাল ও কায্যাব, তাদের থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوْا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফেৎনায় ফেলতে পারবে না।” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম)
দাজ্জালে কাযযাবের অর্থ-
خَلَّاطُوْنَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ مُمَوِّهُوْنَ.
অর্থ: যারা সত্যের সাথে সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে ও ধোঁকা দেয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাবের প্রকৃত অর্থ হলো- যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় দাজ্জালে কাযযাব। মূলতঃ তারা মুনাফিক। তাই সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জাল ও কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত।
ধারাবাহিক আলোচনা.........
মাহবুব সে তার বইয়ের ৪৮ পৃষ্ঠায় লিখেছে- এভাবে পবিত্র ইসলাম ধর্মের প্রায় দেড় হাজার বৎসরের ইতিহাসে অত্র মাসয়ালার উপরে কুরআন, সুন্নাহ, ফিক্বহের ইজমা বা ঐক্যমত থাকা সত্তেও তাৎক্ষনিক সংবাদ দেয়া-নেয়ার কোন ব্যবস্থা না থাকায় পূর্ব যুগের মানুষেরা তাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে যতদূর পর্যন্ত সংবাদ পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে, ততদূর এলাকায় আমল করেছেন। তাদের এ আমল সমসাময়িক পরিস্থিতিতে ছহীহ ও যুক্তিপূর্ণ ছিল। অপর দিকে বর্তমানে সে সকল সমস্যা না থাকায় এবং তাৎক্ষনিক সংবাদ দেয়া নেয়ার ব্যবস্থা থাকায় ছিল। আমাদেরকে অবশ্যই কুরআন, সুন্নাহ, ফিকহে ইসলামীর মূল সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করতে হবে। এর কোন বিকল্প নাই।
জাওয়াব: প্রথমত: ...“তাদের এ আমল সমসাময়িক পরিস্থিতিতে ছহীহ ও যুক্তিপূর্ণ ছিল” মাহবুবের উক্ত মন্তব্য নিতান্তই মনগড়া ও তার নিজস্ব খেয়াল খুশিমূলক বক্তব্য। পবিত্র দ্বীন ইসলামে তার এ কথার কোন গ্রহণযোগ্যতা বা ভিত্তি নাই।
দ্বিতীয়ত: যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে উনারা দূরবর্তী এলাকার সংবাদ নিতে পারেন নাই। যার কারণে নিজ নিজ এলাকার চাঁদ দেখা অনুযায়ী পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযা পালন করেছেন।
মাহবুবের উক্ত দাবিটি, যদি এমনই হতো তাহলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শামের চাঁদ দেখার সংবাদ পেয়ে নিজেও শামের সাথে একই দিনে পবিত্র ঈদ করতেন ও পবিত্র রোযা ভঙ্গ করতেন। যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মাহবুব পবিত্র হাদীছ শরীফকে তার বাপ-দাদার সম্পদের মত মনে করে তার ইচ্ছা মোতাবেক শরীয়তের হুকুম দাঁড় করাতে চেয়েছে। যার কারণে শুধু মিথ্যাচারিতা ও ধোঁকাবাজি দিয়ে, তার মনগড়া, বানোয়াট ও খোড়া যুক্তি দ্বারা পবিত্র হাদীছ শরীফকে অপব্যাখ্যা করে সে কুফরী কাজে লিপ্ত হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ!
মাহবুবের লিখিত “চাঁদের তারিখ নির্ভর সকল ইবাদত একই তারিখ ও বারে পালন সম্পর্কিত ফতওয়া” বইয়ে হযরত কুরাইব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার সম্পর্কে যে সকল মিথ্যাচারিতা ও ধোঁকাবাজি তথা কুফরী করেছে, তার কতিপয় প্রমাণ ও জবাব নিম্নরূপ:
মাহবুব ও তার সমর্থকরা, সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র রোযা ও পবিত্র ঈদ করার দাবি করে ও সময়কে আগ পিছ করে যে প্রকাশ্যে কুফরী কাজে লিপ্ত রয়েছে এবং একটা কুফরীকে ঢাকতে আরো অনেক কুফরীতে ইচ্ছাকৃত লিপ্ত হয়েছে, তার অসংখ্য কুফরী কাজের আরেকটি জঘন্যতম কুফরী কাজ হলো স্বয়ং পবিত্র হাদীছে কুরাইব (রহমতুল্লাহি আলাইহি) নিয়ে চরম মিথ্যাচার, ধোঁকাবাজি ও বেয়াদবীমূলক আচরণ করা। নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে দলীলসহ জবাব পেশ করা হলো-
এ কে এম মাহবুব সে তার বইয়ের ৫২ ও ৫৩ পৃষ্ঠায় লিখেছে-
১। (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি) দূরদূরান্ত থেকে আগত একটি কাফেলার নতুন চাঁদ উদয়ের প্রায় ১৮ ঘন্টা পরে প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে ৩০ শে রমাদ্বান মনে করে রাখা রোযা নিজেই ভঙ্গ করেছেন এবং অন্যদেরকেও ভাঙ্গার নির্দেশ দিয়েছেন।
যেখানে শরীয়ত প্রবর্তক নিজেই অন্যের সংবাদ গ্রহণ করে রোযা ভঙ্গ করেছেন ও ঈদ করেছেন। সেখানে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি হযরত কুরাইব রহমতুল্লাহি আলাইহির সংবাদ গ্রহণ করলেন কি করলেন না তা কোন যুক্তিতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
জাওয়াব: প্রথমত: “১৮ ঘন্টা পরে প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে ৩০শে রমাদ্বান মনে করে রাখা রোযা নিজেই ভঙ্গ করেছেন এবং অন্যদেরকেও ভাঙ্গার নির্দেশ দিয়েছেন” মাহবুবের উক্ত মন্তব্যই প্রমাণ করে যে, উক্ত এলাকাটি ছিল নিকটবর্তী এলাকা। কেননা, পবিত্র দ্বীন ইসলাম তথা সম্মানিত শরীয়তে দূরবর্তী এলাকা হলো এক মাসের দূরত্বের পথের সমান। তাই দূরবর্তী এলাকা থেকে ১৮ ঘন্টার মধ্যে তখনকার সময়ে সংবাদ প্রেরণ করা সম্ভব ছিলো না। যার কারণে সম্মানিত শরীয়ত প্রণেতা মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং নিজেই রোযা ভঙ্গ করেছেন এবং অন্যদেরকেও রোযা ভাঙ্গার নির্দেশ মুবারক দিয়েছেন।
চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র ‘ছলাতুল জুমুয়াহ’ উনার পূর্বে ৪ রাকায়াত সুন্নত নামায অর্থাৎ পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ’ নামায নিয়ে বাতিলপন্থিদের বিভ্রান্ত্রিকর ও মিথ্যা বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জাওয়াব (৮)
২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
কাফির মুশরিকদের থেকে দূরে থাকতে এবং তাদেরকেও দূরে রাখার ব্যাপারে নির্দেশ মুবারক
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সম্মানিত ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে- ফুটবল-ক্রিকেটসহ সর্বপ্রকার খেলাধুলা করা, সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িয (২)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
যেখানে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্মানিত ৩টি স্তর
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৩)
২০ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












