সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৬৩)
, ১৮ ই জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৪ সাদিস, ১৩৯২ শামসী সন , ২১ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ০৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
“কম দূরত্বের কারণে সময়ের পার্থক্য যেহেতু মান্য করা ফরয, সেহেতু বেশি দূরত্বের কারণে দিনের পার্থক্য মেনে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পবিত্র ঈদ পালন করা ও পবিত্র রোযা শুরু করা ফরযে আইন”
সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরা দাজ্জাল ও কায্যাব, তাদের থেকে দূরে থাকা ফরয-ওয়াজিব:
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَاللهُ يَشْهَدُ إِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَكَاذِبُونَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, নিশ্চয়ই মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী। (পবিত্র সূরা মুনাফিকূন শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ-১)
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللّٰهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ يَأْتُونَكُمْ مِنَ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوْا أَنْتُمْ وَلاَ آبَاؤُكُمْ فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরাইরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আখিরী যামানায় কিছু সংখ্যক মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা তোমাদের নিকট এমন সব (মিথ্যা-মনগড়া) কথা উপস্থাপন করবে, যা তোমরা কখনো শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। সাবধান! তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকবে এবং তোমাদেরকে তাদের থেকে দূরে রাখবে। তবে তারা তোমাদেরকে গোমরাহ করতে পারবে না এবং ফেৎনায় ফেলতে পারবে না। ” (মুসলিম শরীফ, শরহুন নববী, ফতহুল মুলহিম)
দাজ্জালে কাযযাবের অর্থ-
خَلَّاطُوْنَ بَيْنَ الْحَقِّ وَالْبَاطِلِ مُمَوِّهُوْنَ.
অর্থ: যারা সত্যের সাথে সাথে মিথ্যাকে মিশ্রিত করে মানুষের সাথে প্রতারণা করে ও ধোঁকা দেয়।
আর পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জালে কাযযাবের প্রকৃত অর্থ হলো- যারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার বিভ্রান্তিকর অর্থ ও অপব্যাখ্যা করে সর্বদা মুসলমানদের মাঝে ফেৎনা করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায় তাদেরকে বলা হয় দাজ্জালে কাযযাব। মূলতঃ তারা মুনাফিক। তাই সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার দাবিকারীরাও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত দাজ্জাল ও কাযযাবের অন্তর্ভুক্ত।
ধারাবাহিক আলোচনা.........
মাহবুব তার লিখিত বইয়ের ৬৯ পৃষ্ঠায় আরো লিখেছে-
জাপানবাসী বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে (মধ্যপ্রাচ্যের) চাঁদ উদয়ের সংবাদ শুনে জুমুয়াবার রোযা রাখার জন্য সাহরী খেতে সময় পাবে (৩:৪৩ মিনিট-১:২৮ মিনিট) = ২ঘন্টা ১৫ মিনিট।
ইন্দোনেশিয়া, সুমাত্রা, ফ্লেরেস, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, চীনের সিংকিয়াং, হাইলার, ইনহো, রাশিয়ার টালুমা, খরিনটক্সি, সুখানা এবং অলিনেক ...জুমুয়াবার ১ম রোযা রাখতে সাহরী খাওয়ার জন্য তারা সময় পাবে ৩ ঘন্টা ৪৩ মিনিট।
জাওয়াব: প্রথমত: ধরে নিলাম ঐ সমস্ত অঞ্চলের লোকেরা সৌদি আরবে চাঁদ দেখা গেল কিনা, তার অপেক্ষায় সারা রাত জাগ্রত থেকে সাহরী খেয়ে পবিত্র রোযা শুরু করেছে, কিন্তু তাদের পবিত্র তারাবীহ ছলাত আদায় না করার দায়ভার কি প্রতারক শাহ আলম ও মাহবুবগংরা নিবে? আর পবিত্র তারাবীহ ছলাত না পড়ে এভাবে পবিত্র রোযা রাখার রীতি কি দুনিয়ার যমীনে কখনো সংঘটিত হয়েছিল বা হওয়া সম্ভব? মোটেও নহে। বরং তাদের উক্ত দাবিগুলি মুসলমানদের বিরুদ্ধে একটি প্রকাশ্য ষড়যন্ত্র। কেননা, মধ্যপ্রাচ্য বা সৌদি আরবের সাথে যে সকল দেশের সময়ের সর্বোচ্চ পার্থক্য ৭ থেকে ৮ ঘন্টা থাকবে, তারাই পবিত্র সাহরী খেতে সময় পাবে ২ঘন্টা ১৫ মিনিট বা ৩ ঘন্টা ৪৩ মিনিট। তাহলে, মধ্যপ্রাচ্য বা সৌদি আরবের সাথে যে সমস্ত দেশ বা অঞ্চলের সময়ের পার্থক্য ১১ থেকে ১২ ঘন্টা তারা কি পবিত্র সাহরী না খেয়ে, পবিত্র তারাবীহর ছলাত আদায় না করে পবিত্র রোযা শুরু করবে? অপরদিকে মধ্যপ্রাচ্যের পশ্চিমের দেশগুলিতে মধ্যপ্রাচ্য বা সৌদি আরবের আগে চাঁদ দেখলে তারা কি তাহলে নতুন চাঁদ দেখার পরেও সৌদি আরবের অপেক্ষায় পবিত্র রোযা না রেখে, পবিত্র রোযা থেকে বিরত থাকবে? আসলে এ সমস্ত কথাগুলি তাদের নফসের পূজা ও শয়তানের পরামর্শ যা সত্যিকারে কোন ঈমানদার বলতে পারে না।
দ্বিতীয়ত: মধ্যপ্রাচ্যের চাঁদ দেখার অনুসরণে সারাবিশ্বের সকল মানুষ একই দিনে, একই তারিখে, একইবারে পবিত্র রোযা শুরু করার দাবি এটা শাহ আলম, মাহবুবদের নিজস্ব মনগড়া, বানোয়াট দাবি। যা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত উদয়স্থলের ভিন্নতা অনুযায়ী সারাবিশ্বে পবিত্র ইবাদত বন্দেগী করার নির্দেশিত সিদ্ধান্তের বিরোধী। যা কাট্টা কুফরী কাজ। তা আমরা অনেক পূর্বেই প্রমাণ করে দিয়েছি।
সে ৭০ পৃষ্ঠায় আরো লিখেছে- কানাডীয় অঞ্চলে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে সকাল ৯টায়...যুক্তরাষ্টের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে, অলিউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জে, চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছবে সেখানে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৪টায়।
জাওয়াব: পবিত্র হিজরী সন তথা চন্দ্র মাসের নতুন বার, তারিখ এবং দিন শুরু হয় সূর্যাস্তের সাথে সাথে। সেই হিসেবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যপ্রাচ্যের নতুন চাঁদ দেখার সংবাদ যদি কানাডীয় অঞ্চলের লোকেরা তাদের সকাল ৯টায় পায় এবং যুক্তরাষ্টের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে, অলিউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জের অধিবাসীরা চাঁদ দেখার সংবাদ পায় সেখানের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৪ টায়। তাহলে, কানাডীয় অঞ্চলের লোকেরা ও যুক্তরাষ্টের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের এবং অলিউটিয়ান দ্বীপপুঞ্জের অধিবাসীরা অবশ্যই জুমুয়াবার রাত থেকেই পবিত্র রোযা শুরু করতে হবে। সুতরাং তাদের কথা অনুযায়ীই সারাবিশ্বে একই দিনে পবিত্র রোযা শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। আসলে মাহবুবগংরা যে আশাদ্দুদ দরজার জাহিল এবং কান্ডজ্ঞানহীন, তা বরাবরের মতই স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো। চলবে....
-মুহম্মদ মুফীদ্বুর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












