সুওয়াল: ছারছিনা থেকে প্রকাশিত পাক্ষিক পত্রিকা ৬০ বর্ষ ১লা সংখ্যা ১৫ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম এবং হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার নিষেধাজ্ঞা না মেনে নাফরমান হয়ে বেহেশত থেকে পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। নাউযুবিল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম এবং উনার সম্মানিতা আহলিয়া হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনাদের শান মুবারকে উপরোক্ত বক্তব্য উল্লেখ করাটা কি শুদ্ধ হয়েছে?
এডমিন, ০১ রবীউর আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৯ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১৭সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০২ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা
হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি যদি মহান আল্লাহ পাক উনার কোন আদেশ কিংবা নিষেধ অমান্য করে থাকেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নাফরমান হয়ে থাকেন তাহলে হযরত নবী ও রসূল হিসেবে উনাদের খুছূছিয়াত বা বৈশিষ্ট্য মুবারক থাকলো কোথায়! পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে কোথাও কি উল্লেখ আছে যে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম এবং হযরত হাওওয়া আলাইহাস সালাম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার নিষেধাজ্ঞা না মেনে নাফরমান হয়ে বেহেশত থেকে পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন? আদৌ নেই। মনে রাখতে হবে যে, মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার প্রতি উক্ত মিথ্যা তোহমত দেয়ার পরিণাম নিঃসন্দেহে কুফরী এবং কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।
উল্লেখ্য, পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের অর্থ বর্ণনায় সবখানে লুগাতী বা অভিধানগত অর্থ প্রযোজ্য ও গ্রহণযোগ্য নয় বরং ক্ষেত্র বিশেষে লুগাতী অর্থ পরিহার করে তাফছীলী বা তা’বীলী অর্থ গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় অর্থ শুদ্ধ হবে না। বিশেষ করে খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার সম্পর্কে এবং উনার মহাসম্মানিত হাবীব ও মাহবূব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সর্ম্পকে, হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে, হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের সম্পর্কে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের সম্পর্কে, হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সম্পর্কে এমন অর্থ গ্রহণ করা যাবে না, যে অর্থ গ্রহণ করলে উনাদের শান-মান, মর্যাদা-মর্তবা, বুযুর্গী সম্মানের খিলাফ হয়। উদাহরণস্বরূপ পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ উনার ৪৫নং আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার শান মুবারকে مكر শব্দ মুবারক উনার লুগাতী বা আভিধানিক অর্থ “ধোকাবাজি বা ষড়যন্ত্র” গ্রহণ না করে ‘হিকমত বা কৌশল’ গ্রহণ করতে হবে। একইভাবে উপরে বর্ণিত সকল মনোনীত ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব উনাদের শান মুবারক সম্মত অর্থ ও ব্যাখ্যা গ্রহণ করতে হবে।
মূলতঃ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের মর্যাদা বা শান মুবারক বিরোধী কথা-বার্তা যারা বলে থাকে বা লিখে থাকে তারা পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ এবং পবিত্র আক্বায়িদ শরীফ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণেই তা বলে থাকে। যেমন কেউ বলে থাকে যে, হযরত আদম আলাইহিস সালাম তিনি গন্ধম খেয়ে ভুল করেছিলেন। নাউযুবিল্লাহ! আবার কেউ বলে থাকে যে, তিনি গন্ধম খেয়ে একটা গুণাহ করেছিলেন। নাউযুবিল্লাহ! আবার অত্র সুওয়ালে বলা হয়েছে যে, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার নিষেধাজ্ঞা না মেনে নাফরমান হয়ে বেহেশত থেকে পৃথিবীতে নিক্ষিপ্ত হয়েছেন। নাউযুবিল্লাহ!
প্রকৃতপক্ষে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার শান মুবারক বিরোধী উল্লেখিত বক্তব্যসমূহের একটিও সঠিক নয়। কেননা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ
অর্থ: আমি আপনার (নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পূর্বে প্রত্যেক রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি ওহী মুবারক প্রেরণ করেছি। (পবিত্র সূরা আম্বিয়া শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৫)
অর্থাৎ হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের যাবতীয় কার্যাবলী সম্মানিত ওহী মুবারক দ্বারা অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে পরিচালিত হতো। যার পরিপ্রেক্ষিতে আক্বায়িদ শাস্ত্রের সমস্ত কিতাবে উল্লেখ রয়েছে-
اَلْاَنْبِيَاءُ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ كُلُّهُمْ مَعْصُوْمُوْنَ
অর্থ: হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রত্যেকেই মা’ছূম বা নিস্পাপ। (শরহে আক্বায়িদে নাসাফী, তাকমীলুল ঈমান, ফিক্বহুল আকবর, হাক্বায়িদে হাক্কাহ ইত্যাদি)
আরো উল্লেখ রয়েছে-
اَلْاَنْبِيَاءُ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ كُلُّهُمْ مُنَزَّهُوْنَ عَنِ الصَّغَائِرِ وَالْكَبَائِرِ وَالْكُفْرِ وَالْقَبَائِحِ
অর্থ: হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রত্যেকেই ছগীরা, কবীরা, কুফর-শিরক এবং অপছন্দনীয় কাজ থেকেও পবিত্র। (শরহে আক্বায়িদে নাসাফী, তাকমীলুল ঈমান, ফিক্বহুল আকবর, হাক্বায়িদে হাক্কাহ ইত্যাদি)
কাজেই, পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে পবিত্র আক্বায়িদ শাস্ত্র অনুযায়ী হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদা পোষন করতে হবে। অন্যথায় কারো পক্ষে মু’মিন-মুসলমান থাকা সম্ভব হবে না। (অসমাপ্ত)