সুওয়াল-জাওয়াব
সুওয়াল: জনৈক ওহাবী মালানার বক্তব্য হচ্ছে, দিবস পালন করা জায়িয নেই। এ বক্তব্য কতটুকু শরীয়ত সম্মত?
এডমিন, ১২ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ৩০ ছালিছ, ১৩৯১ শামসী সন , ২৯ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ১৪ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) শিক্ষামূলক জিজ্ঞাসা

(১ম অংশ)
জাওয়াব: তার উক্ত বক্তব্য সম্পূর্ণরূপে মনগড়া, মিথ্যা, দলীলবিহীন ও সম্মানিত শরীয়ত তথা সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার খিলাফ বা বিরোধী। যার কারণে তা হারাম ও কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।
যিনি খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি দিবস পালন সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللهِ إِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّكُلِّ صَبَّارٍ شَكُوْرٍ
অর্থ: (আমার সম্মানিত হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আপনি উম্মতদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ দিন বা দিবসসমূহ স্মরণ করিয়ে দিন। নিশ্চয়ই উক্ত দিনসমূহ স্মরণ বা পালন করার মধ্যে ছবরকারী ও শোকরকারী সকল বান্দা-বান্দীদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে। (পবিত্র সূরা ইবরাহীম শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫)
স্মরণীয় যে, খ¦ালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি যে সমস্ত দিনে খাছ রহমত ও নিয়ামত মুবারক নাযিল করেন এবং যে সমস্ত দিনে ছাহিবে নিয়ামত ও রহমত উনারা বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন, নিসবতে আযীমাহ শরীফ গ্রহণ করেন এবং অন্য কোন বিশেষ শান মুবারক প্রকাশ করেন উক্ত দিনসমূহ মহান আল্লাহ পাক উনার দিন অর্থাৎ আইয়্যামুল্লাহ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত।
অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যেই মহান দিনে রহমতুল্লিল আলামীন, নিয়ামতে উযমা, সাইয়্যিদুল আম্বিয়া ওয়াল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে সৃষ্টির প্রতি ইহসান করে তাশরীফ মুবারক আনেন উক্ত মহান দিন হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ আইয়্যামুল্লাহ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া উনার লাইলাতুর রগায়িব শরীফ দিবস, আনুষ্ঠানিক নুবুওওয়াতী ও রিসালতী শান মুবারক দিবস, মি’রাজ শরীফ দিবস, নিসবতে আযীমাহ শরীফের দিবসগুলো, হিজরত মুবারক দিবস, বিছালী শান মুবারক প্রকাশ দিবস ইত্যাদি শান মুবারক প্রকাশিত হওয়ার মহান দিনসমূহ সর্বশ্রেষ্ঠ আইয়্যামুল্লাহ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর উনার পুতঃপবিত্র ও সম্মানিত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা যেসব মহান দিনে তাশরীফ মুবারক আনেন এবং বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন এবং উনাদের নিসবতে আযীমাহ মুবারক সংঘটিত হয় এবং উনাদের অন্য বিশেষ শান মুবারক প্রকাশিত হয় উক্ত দিনসমূহও আইয়্যামুল্লাহ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ! অতঃপর পর্যায়ক্রমে হযরত আম্বিয়ায়ে কিরাম আলাইহিমুস সালাম, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের বিলাদতী শান মুবারক, বিছালী শান মুবারক, নিসবতে আযীমাহ শান মুবারক এবং অন্যান্য বিশেষ শান মুবারক প্রকাশিত হওয়ার দিনসমূহ সম্মানিত আইয়্যামুল্লাহ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
উল্লেখ্য, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম, ইয়াওমু আশূরা, ইয়াওমুল জুমুয়াহ, ইয়াওমু আরাফাহ, আইয়্যামু তাশরীক্ব, ইয়াওমুল ফিতর, ইয়াওমুল আদ্বহা ইত্যাদি দিনসমূহ বিশেষ আইয়্যামুল্লাহ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপ আউওয়ালু লাইলাতিম মির রজব, লাইলাতুর রগায়িব, লাইলাতুল মি’রাজ, লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান, লাইলাতুল ক্বদর, লাইলাতাল ঈদাইন, লাইলাতুল জুমুআ ইত্যাদি রাতসমূহও আইয়্যামুল্লাহ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত।
মোটকথা, মহান আল্লাহ পাক উনার মনোনীত বান্দা-বান্দী উনাদের সৃষ্টি মুবারক, বিলাদতী শান মুবারক, বিছালী শান মুবারক, নিসবতে আযীমাহ মুবারকসহ অন্যান্য বিশেষ শান মুবারক প্রকাশিত হওয়ার দিন ও রাতসমূহ সম্মানিত আইয়্যামুল্লাহ শরীফ উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
উক্ত দিনসমূহ স্মরণ তথা পালন করার মধ্যে বান্দা-বান্দী উম্মতের জন্য রহমত, বরকত, নিয়ামত, নাজাত, সাকীনা, সালাম, রেযামন্দী ও কামিয়াবী হাছিলের বিষয় নিহিত রয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
যেমন রহমাতুল্লিল আলামীন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ দিবস পালন করার ফযীলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা ইউনুস শরীফ উনার ৫৮ নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
هُوَ خَيْرٌ مِّـمَّا يـَجْمَعُوْنَ
অর্থ: জিন-ইনসান তথা কায়িনাতবাসীর সমস্ত ইবাদত অপেক্ষা তা শ্রেষ্ঠ। সুবহানাল্লাহ!
এ প্রসঙ্গে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِى الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّهٗ مَرَّ مَعَ النَّبِىّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِلٰى بَيْتِ عَامِرِ الاَنْصَارِىّ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَكَانَ يُعَلِّمُ وَقَائِعَ وِلَادَتِهٖ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِاَبْنَائِهٖ وَعَشِيْرَتِهٖ وَيَقُوْلُ هٰذَا الْيَوْمَ هٰذَا الْيَوْمَ فَقَالَ عَلَيْهِ الصَّلٰوةُ وَالسَّلامُ اِنَّ اللهَ فَتَحَ لَكَ اَبْوَابَ الرَّحْـمَةِ وَالْمَلائِكَةُ كُلُّهُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ لَكَ مَنْ فَعَلَ فِعْلَكَ نَـجٰى نَـجٰتَكَ.
অর্থ : “হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তান-সন্ততি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশী উনাদেরকে নিয়ে আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস; এই দিবস (অর্থাৎ এই দিবসে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যমীনে তাশরীফ মুবারক এনেছেন এবং ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটেছে)। এতদশ্রবণে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খুশী মুবারক প্রকাশ করে ইরশাদ মুবারক করেন, “নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তায়ালা তিনি উনার মুবারক রহমত উনার দরজা মুবারকসমূহ আপনার জন্য উম্মুক্ত করেছেন এবং সমস্ত হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ আপনার মত এরূপ কাজ করবে, তিনিও আপনার মত নাজাত (ফযীলত) লাভ করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানউইর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)
(আগামী পর্বে সমাপ্য)