সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, মুজাদ্দিদুয যামান, গরীবে নেওয়াজ, আওলাদে রসূল, হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (১১)
(বিলাদত শরীফ ৫৩৬ হিজরী, বিছাল শরীফ ৬৩৩ হিজরী)
, ০৬ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৮ আশির, ১৩৯১ শামসী সন , ১৭ মার্চ, ২০২৪ খ্রি:, ০৩ চৈত্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
তদানিন্তন সময়ের শ্রেষ্ঠতম বিদ্যাপিঠ ছিল সমরকন্দ, বোখারা ও নিশাপুর। সুলত্বানুল আউলিয়া, কুতুবুল মাশায়িখ, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইলিম মুবারক হাছিলের লক্ষে সেসকল স্থানসহ আরো অনেক এলাকা সফর করেন। তিনি নিশাপুর থেকে চলে গেলেন বোখারায়। তিনি জানতে পারলেন, বোখারায় অবস্থান করেন সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ বুযূর্গ ও স্বনামধন্য আলিম হযরত মাওলানা হিসামুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি। তিনি উনার খিদমতে নিজের মনের আশা-আকাঙ্খা ব্যক্ত করলেন। তিনি গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ইলিম হাছিলের আগ্রহ উদ্দীপনা দেখে অত্যন্ত খুশি হয়ে ছাত্র হিসেবে বরণ করে নিলেন।
হযরত মাওলানা হিসামুদ্দীন বোখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমি আমার শিক্ষকতার জীবনে গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ব্যতীত এমন ধীশক্তির অধিকারী কোন ছাত্র পাইনি। তিনি নিজের পড়া শেষ করে উচ্চ ক্লাসের ছাত্রদের পড়াও শেষ করে ফেলতেন। তিনি কোন সাধারণ পর্যায়ের ছাত্র নন। তিনি ইলমে লাদুন্নীতে পরিপূর্ণ ছিলেন। মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে উনার গভীর তায়াল্লুক, নিছবত মুবারক রয়েছে। তা না হলে এমন মেধা ও মননের অধিকারী হওয়া যায় না।
তিনি আরো বলতেন যে, ‘মুঈনুদ্দীন উনার অমায়িক ও মধুর ব্যবহার দ্বারা মাদরাসার সকল শিক্ষক ও ছাত্রদের মন এমনভাবে জয় করেছিলেন যে, তিনি চোখের আড়াল হলেই উনার খোঁজ পড়তো। সুবহানাল্লাহ!
তিনি আরো বলেন, অন্যান্য ছাত্ররা যে পাঠ্যক্রম ১০ বছরে শেষ করতে পারে না, হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি তা ৪ বছরে শেষ করেছেন। সুবহানাল্লাহ! আল্লামা শরফুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, আমার এই ছাত্র লাখো ঝিনুকের মাঝে এক মতি সম্বলিত ঝিনুক।
আল্লামা জালালুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত মুঈনুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হচ্ছেন- জ্ঞানের সূর্য। অনেক সময় অনেক কিছুর ব্যাখ্যা করতে যেয়ে আমরা উনার নিকট হতে অনেক ইলিম লাভ করেছি। সুবহানাল্লাহ!
কামিল শায়েখ উনার নিকট বাইয়াত:
সুলত্বানুল হিন্দ, কুতুবুল মাশায়িখ, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষা করতঃ ইলমে তাছাওউফ হাছিলের দিকে মনোনিবেশ করলেন। তিনি উপলব্ধি করলেন যে, ইলমে ফিক্বাহ শিক্ষার সাথে সাথে ইলমে তাছাওউফ হাছিল করতে হবে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
اَلْعِلْمُ عِلْمَانِ عِلْمٌ فِى الْقَلْبِ فَذَاكَ الْعِلْمُ النَّافِعُ وَعِلْمٌ عَلَى اللِّسَانِ فَذَالِكَ حُجَّةُ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ عَلٰى اِبْنِ اٰدَمَ
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ইলিম দু’ প্রকার ১. ক্বলবী ইলিম (ইলমে তাছাওউফ) যা উপকারী ইলিম। ২. যবানী ইলিম (ইলমে ফিক্বাহ) যা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আদম সন্তানের জন্য দলীলস্বরূপ। (মিশকাত শরীফ)
ক্বলবী ইলিম তথা ইলমে তাছাওউফ যা কামিল শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা উনার তত্ত্বাবধান ব্যতীত, ছোহবত ইখতিয়ার করা ব্যতীত হাছিল করা যায় না। যা হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের সিনা-ব-সিনা হাছিল হয়ে থাকে। মহান আল্লাহ পাক এজন্যই ওলীআল্লাহগণ উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করতে বলেছেন।
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَكُوْنُوا مَعَ الصَّادِقِيْنَ
অর্থ: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। আর ছদিক্বীন তথা ওলীআল্লাহ উনাদের ছোহবত মুবারক ইখতিয়ার করো। (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৯)
মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মা’রিফাত, মুহব্বত, তায়াল্লুক, নিছবত, দীদার ও যিয়ারত মুবারক হাছিলের আশা-আকাঙ্খা উনার উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছিল। সাড়ে সাত বছর ইলমে জাহির হাছিল করতঃ এই সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন যে, কামিল শায়েখ উনার মুবারক খিদমতে নিজেকে বিলীন করা ব্যতীত কখনোই মানযিলে মাকছূদে পৌঁছা যাবে না। কামিল শায়েখ উনার ফায়িজ-তাওয়াজ্জুহ হাছিল করতে না পারলে পুরো জীবনই ব্যর্থ। কেননা কামিয়াবীর মূল কারণ হলো অন্তর বিশুদ্ধকরণ। অন্তর পরিশুদ্ধ না হলে কখনোই কামিয়াবী হাছিল করা যাবে না। পবিত্র মা’রিফাত-মুহব্বত হাছিল হবে না। উপরন্তু পবিত্র দায়িমী দীদার মুবারক এবং পবিত্র দায়িমী যিয়ারত মুবারক লাভ হবে না।
কাজেই, তিনি কামিল শায়েখ উনার তালাশে বের হলেন। সে লক্ষে নিশাপুর, খোরাসান হয়ে ইরাকের উদ্দেশ্যে বের হলেন। পথিমধ্যে নিশাপুরের রাস্তায় ‘হারূন’ নামক একটি গ্রাম ছিল। সেখানে সে যুগের বিশিষ্ট বুযূর্গ হযরত খাজা উছমান হারূনী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বসবাস করতেন। কুতুবুল মাশায়িখ হযরত গরীবে নেওয়াজ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলেন। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
খরচ করার ব্যাপারে মহান আল্লাহ পাক উনার ফায়সালা
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৫)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (১)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ছবি তোলা হারাম, যা জাহান্নামী হওয়ার কারণ
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
বিজাতীয় বিধর্মী তথা ইহুদী-নাছারাদেরকে অনুসরণ করা ইসলামী শরীয়তে হারাম-নাজায়িয
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পবিত্র ‘ছলাতুল জুমুয়াহ’ উনার পূর্বে ৪ রাকায়াত সুন্নত নামায অর্থাৎ পবিত্র ‘ক্বাবলাল জুমুয়াহ’ নামায নিয়ে বাতিলপন্থিদের বিভ্রান্ত্রিকর ও মিথ্যা বক্তব্যের দলীলভিত্তিক জাওয়াব (৬)
০৭ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












