সৃষ্টির নিকৃষ্ট স্থান জাহান্নাম ও স্তর বিন্যাস ও কঠিন শাস্তি সম্পর্কে বর্ণনা (১)
, ২৮ জুমাদাল উলা শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৪ সাবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ২৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
لَـهَا سَبْعَةُ اَبْوَابٍ.
অর্থ: “জাহান্নামের সাতটি দরজা রয়েছে।” (সম্মানিত সূরা হিজর শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ৪৪)
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا وَلٰكِنَّهَا طِبَاقٌ بَعْضُهَا اَسْفَلُ مِنْ بَعْضٍ مِّنَ الْبَابِ اِلَى الْبَابِ مَسِيْرُ سَبْعِيْنَ سَنَةً كُلُّ بَابٍ مِّنْهَا اَشَدُّ حَرًّا مِّنَ الَّذِىْ يَلِيْهِ بِسَبْعِيْنَ ضِعْفًا وَّسَاَلَهٗ اَيْضًا عَنْ مَّكَانِ هٰذِهِ الْاَبْوَابِ فَقَالَ اَمَّا الْاَسْفَلُ فَفِيْهِ الْـمُنَافِقُوْنَ وَاسْـمُهُ الْـهَاوِيَةُ كَمَا قَالَ اللهُ تَعَالـٰى اِنَّ الْمُنٰفِقِيْنَ فِى الدَّرْكِ الْاَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَالْبَابُ الثَّانِـىْ فِيْهِ الْـمُشْرِكُوْنَ وَاسْـمُهُ الْـجَحِيْمُ وَالْبَابُ الثَّالِثُ فِيْهِ الصَّابِئُوْنَ وَاسْـمُهٗ سَقَرُ وَالْبَابُ الرَّابِعُ فِيْهِ اِبْلِيْسُ عَلَيْهِ اللَّعْنَةُ وَمَنْ تَبَعَهٗ مِنَ الْـمَجُوْسِ وَاسْـمُهٗ لَظـٰى وَالْبَابُ الْـخَامِسُ فِيْهِ الْيَهُوْدُ وَاسْـمُهُ الْـحُطَمَةُ وَالْبَابُ السَّادِسُ فِيْهِ النَّصَارٰى وَاسْـمُهُ السَّعِيْرُ ثُـمَّ اَمْسَكَ حَضْرَتْ جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَالَ لَهٗ صَلَّـى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِـمَ لَـمْ تُـخْبِرْنِـىْ عَنْ سُكَّانِ الْبَابِ السَّابِعِ فَقَالَ حَضْرَتْ جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَا سَيِّدَنَا مُحَمَّدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَسْاَلْنِىْ عَنْهُ فَقَالَ فَفِيْهِ اَهْلُ الْكَبَائِرِ مِنْ اُمَّتِكَ الَّذِيْنَ مَاتُوْا وَلَـمْ يَتُوْبُوْا.
অর্থ: “হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ‘ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! জাহান্নামের দরজা এই পৃথিবীর ঘর-বাড়ির দরজার মতো নয়; বরং উপরে-নিচে স্তরে স্তরে বিন্যস্ত এবং এক দরজা হতে অপর দরজা পর্যন্ত সত্তর বছরের পথ পরিমাণ দূরত্ব। উপরের দিক থেকে প্রথম দরজার তুলনায় দ্বিতীয়টির এবং এভাবে পরবর্তী দরজাগুলোর একটির তুলনায় অপরটির উত্তাপ ও দাহন ক্ষমতা সত্তরগুণ অধিক হবে।’ অতঃপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম উনাকে এসব স্তরে অবস্থানকারীদের সমন্ধে বলতে বললেন, হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন যে, ‘দোযখের সর্বনিম্ন স্তরে নিক্ষেপ করা হবে মুনাফিক্বদেরকে। এই স্তরের নাম হবে ‘হাবিয়াহ’। এস্তরে মুনাফিক্বদের অবস্থান প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি সম্মানিত কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেছেন-
اِنَّ الْمُنٰفِقِيْنَ فِى الدَّرْكِ الْاَسْفَلِ مِنَ النَّارِ.
অর্থ: “নিঃসন্দেহে মুনাফিক্বদের স্থান হচ্ছে, জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে।” (সম্মানিত সূরা নিসা শরীফ: সম্মানিত আয়াত শরীফ ১৪৫)
নিম্ন দিক হতে দ্বিতীয় স্তরের অধিবাসী হবে মুশরিকরা। এস্তরের নাম ‘জাহীম’। তৃতীয় পর্যায়ে ছাবিঈন তথা যাবূর শরীফ অনুসারী ও নক্ষত্রপূজারীদের স্তর। এর নাম ‘সাক্বার’। চতুর্থ পর্যায়ে অভিশপ্ত ইবলীস ও তার অগ্নিপূজক অনুচরদের স্তর। এর নাম ‘লাযা’। পঞ্চম স্তরের অধিবাসী হবে ইহুদীরা; এর নাম ‘হুতামাহ’। ষষ্ঠ স্তরের অধিবাসী হবে খ্রিস্টানরা; এর নাম হবে ‘সাঈর’। অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি থেমে গেলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম! আপনি সপ্তম স্তরের অধিবাসীদের সম্পর্কে কিছু বলছেন না কেন? হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! দয়া করে আমাকে এই স্তর সম্পর্কে সুওয়াল না করলে ভালো হয়। অতঃপর হযরত জিবরীল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! জাহান্নামের এই সপ্তম স্তরে আপনার উম্মতের মধ্যে ওই সব লোক নিক্ষিপ্ত হবে; যারা দুনিয়াতে কবীরাহ গুনাহে লিপ্ত হয়েছে এবং তাওবা না করে মারা গেছে।” (মুকাশাফাতুল কুলূব ২৫-২৬)
মুনাফিক্ব ও উলামায়ে সূ’রা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তর ‘হাবিয়া’-এর মধ্যে প্রবেশ করবে এবং সেখানে কঠিন-ভয়াবহ ‘আযাব-গযব উপভোগ করবে; যেখানে ইহুদী, খ্রিস্টান, কাফির, মুশরিক, মূর্তি-পূজক, অগ্নিপূজক; এমনকি স্বয়ং মালঊন ইবলীসও প্রবেশ করবে না এবং এতো কঠিন-ভয়াবহ ‘আযাব-গযবও উপভোগ করবে না; বরং ইবলীস প্রবেশ করবে জাহান্নামের চতুর্থ স্তর ‘লাযা’-এর মধ্যে, যেখানে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তর ‘হাবিয়া’-এর তুলনায় কমপক্ষে ৩৪৩০০০ গুণ কম শাস্তি হবে, আর ‘হাবিয়া’-এর মধ্যে জাহান্নামের চতুর্থ স্তর ‘লাযা’-এর তুলনায় কমপক্ষে ৩৪৩০০০গুণ বেশি শাস্তি হবে। অর্থাৎ তাহলে বুঝা গেল যে, মুনাফিক্বদের শাস্তি হবে স্বয়ং ইবলীসের তুলনায় কমপক্ষে ৩৪৩০০০গুণ বেশি, আর স্বয়ং ইবলীসের শাস্তি হবে মুনাফিক্ব ও উলামায়ে সূ’দের তুলনায় ৩৪৩০০০গুণ কম। না‘ঊযুবিল্লাহ!
সম্মানিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِـىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَعَوَّذُوْا بِاللهِ مِنْ جُبِّ الْـحُزْنِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا جُبُّ الْـحُزْنِ قَالَ وَادٍ فِـىْ جَهَنَّمَ يَتَعَوَّذُ مِنْهُ جَهَنَّمُ كُلَّ يَوْمٍ اَرْبَعَمِائَةِ مَرَّةٍ قِيْلَ وَمَنْ يَّدْخُلُهَا قَالَ الْقُرَّاءُ الْمُرَاءُوْنَ بِاَعْمَالِـهِمْ.
অর্থ: “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট জুব্বুল হুযন থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করো। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! জুব্বুল হুযন কী? নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, জাহান্নামের একটি উপত্যকা। যেখান থেকে স্বয়ং জাহান্নাম নিজে প্রতিদিন চারশতবার আশ্রয় প্রার্থনা করে। জিজ্ঞাসা করা হলো, এতে কে প্রবেশ করবে? জবাবে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, ওই সমস্ত ব্যক্তি- যারা লোকদেখানোর জন্য সম্মানিত কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করে অর্থাৎ মুনাফিক্ব রিয়াকার উলামায়ে সূ’রা।” (ইবনে মাজাহ শরীফ, তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আল আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
পুরুষের জন্য কমপক্ষে একমুষ্ঠি পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (২)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুসলমানদের সবচেয়ে বড় শত্রু কাফির-মুশরিকরা (২)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
পর্দা পালন করা নারী-পুরুষ সকলের জন্যই শান্তি ও পবিত্রতা হাছিলের কারণ
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
সীমালঙ্ঘনকারী কাফির-মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা মহান আল্লাহ পাক উনার নির্দেশ মুবারক
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












