জীবনী মুবারক
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৭)
বিলাদত শরীফ: ৬০৮ খৃ: বিছাল শরীফ: ৭৪ হিজরী (৬৯৪ খৃ:) বয়স মুবারক: ৮৭ বছর।
, ১০ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৫ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ২৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ফযীলত ও মর্যাদা:
উমর বিন হামযাহ বিন আবদুল্লাহ ইবনে উমর বলেন, আমি আমার পিতার (হামযাহ) সঙ্গে বসা ছিলাম। এ সময় একজন লোক পাশ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিল। লোকটি বললো; আমাকে বলুন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে আপনি কি বলেছিলেন, যখন আমি আপনাকে “জরফ” নামক স্থানে উনার সঙ্গে কথা বলতে দেখেছিলাম? বর্ণনাকারী (উমর) বলেন, আমি বলেছিলাম; হে আবু আবদুর রহমান! আপনার শরীর শক্তিহীন হয়ে পড়েছে, বয়স অনেক বেড়েছে। আপনার সঙ্গীরা আপনার মান মর্যাদা জানে না। আপনি যদি আপনার পরিবারকে নির্দেশ দিতেন, উনারা যেন আপনার জন্য এমন কিছু ব্যবস্থা করেন, যাতে উনাদের নিকট আপনি যখন গমন করেন, উনারা যেন আপনার প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করতে পারেন। তিনি বললেন, তুমি কি বলছ? মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি বিগত ১৪ বছর থেকে পেট ভরে আহার করিনি, এমন কি একটিবারও পেট ভরে আহার করিনি। তাহলে আমার কি প্রয়োজন আছে? আর আমার তো সামান্য সময় মাত্র বাকী আছে। (হায়াতুছ ছাহাবা)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার আযাদকৃত গোলাম উবায়দুল্লাহ ইবনে আদী ইরাক থেকে এসে উনাকে সালাম করে বললেন, আমি আপনাকে একটি বস্তু হাদিয়া দিতে চাই।
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, তা কি জিনিষ? উবায়দুল্লাহ বললেন, জাওয়ারিস। তিনি বললেন, জাওয়ারিস কি জিনিষ? উবায়দুল্লাহ বললেন, ইহা খাদ্যকে তাড়াতাড়ি হজম করে। অতঃপর তিনি বললেন, গত ৪০ বছর থেকে আমি আমার পেট ভরে আহার করিনি। সুতরাং আমি উহা দ্বারা কি করবো? (হায়াতুছ ছাহাবা)
হযরত ইবনে সিরীন রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে বর্ণিত। তিনি বলেন; এক ব্যক্তি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললো, আপনি জাওয়ারিস ব্যবহার করুন। তিনি বললেন, জাওয়ারিস কি জিনিষ? লোকটি বললো, যখন কোন খাদ্য বদ-হজম হয়, তখন ইহা হজমে সহায়ক হয়। অতঃপর হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, আমি চার মাস থেকে পেট ভরে আহার করিনি। কাজেই বদ-হজম আমার কিভাবে হবে? উপরন্তু আমি এমন এক সম্প্রদায়ের সাথে অঙ্গীকারাবদ্ধ যারা একবার পেট ভরে খাবার খায়, আর একবার ক্ষুধার্ত থাকে। (ইবনে সা‘দ)
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়া থেকে পর্দা মুবারক করার পর থেকে আমি ইটের উপর ইট স্থাপন করিনি অর্থাৎ ইমারত তৈরী করিনি এবং কোন খেজুর গাছও রোপন করিনি। (হায়াতুছ ছাহাবা)
মুহম্মদ বিন ফয়েয বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মিসকীনের সাথে ভিন্ন আহার করতেন না, যে পর্যন্ত না তা দ্বারা উনার শারীরিক ক্ষতি সাধিত না হতো। অতঃপর উক্তরূপ আহার করার কারণে যখন উনার মারিদ্বী শান মুবারক দেখা যেত, তখন উনার আহলিয়া (স্ত্রী) উনার জন্য খেজুর দিয়ে এক প্রকার খাদ্য প্রস্তুত করতেন। তিনি যখন ইহা খেতেন, সুস্থ হতেন।
আবু বকর বিন হিফ্ছ্ বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কোন খাদ্য গ্রহণ করতেন না, যে পর্যন্ত উনার দস্তরখানে একজন ইয়াতিম উপস্থিত না থাকত। (হিলইয়া)
হযরত ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন খুবই দানশীল। সবসময় পছন্দনীয় জিনিষ মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান করতেন। তিনি ছিলেন এই আয়াত শরীফের মিছদাক-
لَنْ تَنَالُوْا الْبِرَّ حَتّٰى تُنْفِقُوْا مِمَّا تُحِبُّوْنَ
(তোমরা কল্যাণ লাভ করবে না যে পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু ব্যয় করো)। প্রতিবেলা দুই একজন গরীব-মিসকীন সঙ্গে না নিয়ে তিনি আহার করতেন না। প্রায়ই তিনি উনার ছেলেদের তাকীদ করতেন যখন উনারা খাবারের জন্য ধনীদের দাওয়াত করতেন এবং উনাদের সাথে ফকীর-মিসকীনকে ডাকতেন না। তিনি বলতেন, ‘দতোমরা ভরাপেট লোকদের ডেকে আনো এবং ক্ষুধার্তদের ছেড়ে আসো। ’ (ইহা কেমন কথা?)
যে গোলাম-বাঁদীটি উনার কাছে ভাল বলে মনে হতো, তাকে আযাদ করে দিতেন। এক বৈঠকে তিনি হাজার হাজার দিরহাম বিলিয়ে দিতেন। তিনি এত বেশী গোলাম-বাঁদী আযাদ করতেন যে, উনার আযাদকৃত গোলাম-বাঁদীর সংখ্যা এক হাজারের উর্ধ্বে। একবার তিনি খুব সুন্দর একটি উট খরিদ করে তার উপর সওয়ার হয়ে হজ্জে রওয়ানা হলেন। উটটির চলন উনার খুব ভাল লাগল। হঠাৎ তিনি নেমে পড়লেন এবং তার পিঠ থেকে জিনিষপত্র নামিয়ে ফেলে তাকে কুরবানীর পশুর সাথে মিলিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিলেন। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
বাইতুল্লাহ বা পবিত্র মসজিদ ও বাইতুর রসূল বা পবিত্র মাদরাসা সম্পর্কে ইলিম (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল আওলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল, সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৩)
১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম তিনি সমস্ত কায়িনাতবাসীর মহাসম্মানিত মুয়াল্লিমাহ্
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনাকে জাদু করার কারণে উনার দাসীকে ক্বতল বা মৃত্যুদ-
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে তা’লীম গ্রহণ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইবনাতু আবীহা উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার সম্মানিত ছিফত মুবারক
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত খাজা মুঈনুদ্দীন হাসান চীশতী আজমিরী সাঞ্জারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪৫)
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুস সাদিস মিন আহলি বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কতিপয় মহাসম্মানিত মু’জিযাহ শরীফ
১৫ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (৭)
১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)