জীবনী মুবারক
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
বিলাদত শরীফ: ৫৯১ খৃ: বিছাল শরীফ: ৩৩ হিজরী (৬৫৩ খৃ:) বয়স মুবারক: ৬৩ বছর
, ৮ই শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১১ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ২৫ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ফযীলত ও মর্যাদা:
হযরত আতা রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, এক পবিত্র জুমুয়ার দিন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মসজিদে খুতবা মুবারক দিচ্ছিলেন। তিনি লোকদেরকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনারা বসে পড়–ন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তখন মসজিদের দরজা পর্যন্ত এসেছেন। তিনি উক্ত নির্দেশ মুবারক শুনে মসজিদের দরজাতেই বসে পড়লেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইহা লক্ষ্য করে বললেন, হে আবদুল্লাহ! ভিতরে প্রবেশ করুন। (ইবনে আবী শায়বা, কান্জ, হায়াতুছ ছাহাবা)
একবার সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে বললো, ইয়া আমীরুল মু’মিনীন! আমি কূফা থেকে এসেছি। সেখানে আমি দেখে এসেছি, এক ব্যক্তি নিজের স্মৃতি থেকেই মানুষকে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ শিখাচ্ছেন। একথা শুনে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি এত রাগান্বিত হলেন যে, সচরাচর উনাকে তেমন রাগ করতে দেখা যায় না। তখন তিনি উটের হাওদার মধ্যে ছিলেন। তারপর তিনি প্রশ্ন করেন, তোমার ধ্বংস হোক! কে সে লোকটি? লোকটি বললো, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। জ্বলন্ত আগুনে পানি ঢেলে দিলে যে অবস্থা, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নাম মুবারক শুনে উনারও সে অবস্থা হলো। উনার রাগ পড়ে গেল। তিনি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে পেলেন। তারপর বললেন, তোমার ধ্বংস হোক! মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! এ কাজের জন্য উনার চেয়ে অধিক যোগ্য কোন ব্যক্তি বেঁচে আছে কিনা আমি জানি না। এ ব্যাপারে তোমাকে আমি একটি ঘটনা বলছি। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলতে লাগলেন, একদিন রাতের বেলা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে কথাবার্তা বলছিলেন। উনারা মুসলমানদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করছিলেন। আমিও উনাদের সাথে ছিলাম। কিছু সময় পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বের হলেন, আমরাও উনার সাথে বের হলাম। বের হয়েই আমরা দেখতে পেলাম, এক ব্যক্তি মসজিদে নামাযে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাদের কাছে উনার পরিচয় স্পষ্ট ছিল না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ উনার কুরআন শরীফ তিলাওয়াত শুনলেন। তারপর আমাদের দিকে ফিরে বললেন, যে ব্যক্তি বিশুদ্ধভাবে পবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ করে আনন্দ পেতে চায়, যেমন তা অবতীর্ণ হয়েছে, সে যেন ইবনে উম্মে আবদের পাঠের অনুরূপ কুরআন শরীফ পাঠ করে। অতঃপর হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বসে দোয়া শুরু করলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আস্তে আস্তে উনাকে লক্ষ্য করে বলতে লাগলেন; আরজী করুন, দেয়া হবে; আরজী করুন, দেয়া হবে।
সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বলেন, আমি মনে মনে বললাম, আমি আগামীকাল খুব ভোরে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট গিয়ে উনার দোয়া সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মন্তব্যের সুসংবাদটি উনাকে দিবো। সকাল সকাল আমি উনার কাছে গেলাম। গিয়ে দেখি হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি আমার আগেই উনার কাছে পৌঁছে গিয়েছেন এবং উনাকে সুসংবাদটি দিয়ে ফেলেছেন। সত্যিই যখনই কোন সৎকাজে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার সাথে আমি প্রতিযোগিতা করেছি তখন তিনিই প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজয়ী হয়েছেন। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি সম্মানিত ইসলাম গ্রহণের পর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার একান্ত খাদিম রূপে আজীবন উনার ছোহবত মুবারকে অতিবাহিত করেন এবং গভীর জ্ঞান আহরণ ও চরিত্র মাধুর্যে ভূষিত হন। পবিত্র কুরআন শরীফ সম্পর্কে উনার জ্ঞান ছিল গভীর ও ব্যাপকতম। হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলতেন, পবিত্র কুরআন শরীফ উনার জ্ঞানে আমার চাইতে শ্রেষ্ঠতর কোন ব্যক্তির সন্ধান পেলে আমি উনার শিষ্যত্ব গ্রহণ করতে দূর দেশে গমন করতে প্রস্তুত।
পবিত্র কুরআন শরীফ উনার তাফসীর এবং উপস্থিত মত কুরআন শরীফ উনার সংশ্লিষ্ট আয়াতের উদ্ধৃতি দানে কেউই উনার ন্যায় দক্ষ ছিলেন না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র নূরুস সালাম মুবারক অর্থাৎ জবান মুবারক নিঃসৃত ব্যাখ্যাই তিনি শিক্ষা দিতেন। পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার বিশুদ্ধ পাঠে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয় এবং সর্বশ্রেষ্ঠ কারীরূপে স্বীকৃত। কুরআন শরীফ উনার ৭০টি সূরা তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট হতে সরাসরি শিক্ষা করার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












