জীবনী মুবারক
হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৪)
বিলাদত শরীফ: ৭১৮ হিজরী (১৩১৮ খ্রিস্টাব্দ) বিছাল শরীফ: ৭৯১ হিজরী (১৩৮৯ খ্রিস্টাব্দ) বয়স মুবারক: ৭৩ বছর
, ২২ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৯ ছানী, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৮ জুলাই, ২০২৫ খ্রি:, ০৩ শ্রাবণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
অন্যান্য বর্ণনা:
হযরত খাজা মাহমূদ আনজির ফাগনবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময় থেকে হযরত সাইয়্যিদ আমীর কুলাল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময় পর্যন্ত জলী (উচ্চস্বরে) যিকিরের নিয়ম প্রচলিত ছিলো। কিন্তু হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময় থেকে খফী (গোপন) যিকিরের নিয়ম প্রচলিত হয়।
তিনি কয়েক বৎসর হযরত সাইয়্যিদ আমীর কুলাল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমতে থেকে সুলূকের পরিপূর্ণতা অর্জন করেন। হযরত সাইয়্যিদ আমীর কুলাল রহমতুল্লাহি আলাইহি হতে নিয়ামত ও খিলাফত নিয়ে তিনি সেখান থেকে বিদায় হলেন। অতঃপর তিনি হযরত ফাতম শায়েখ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমতে গেলেন। হযরত শায়েখ ফাতম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হযরত খাজা আহমদ ইয়াসাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সিলসিলায় একজন তুর্কী বুযূর্গ ছিলেন। হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি দু’ তিন মাস সেখানে থেকে ফয়েজ হাছিল করলেন। হযরত শায়েখ ফাতম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনিও উনাকে খিলাফত দান করলেন। (মিরাতুল আসরার)
হযরত খাজা নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মাক্বামাতে বর্ণনা করেন যে, সুলূকের প্রাথমিক পর্যায়ে একবার মহান আল্লাহ পাক উনার এক ওলীর সঙ্গে আমার সাক্ষাত ঘটে। তিনি আমাকে বললেন, আপনাকে দেখে মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধু বলে মনে হয়। আমি আরজ করলাম, আমার আকাঙ্খা এই যে হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের দয়ার দৃষ্টিতে আমি যেন উনাদের বন্ধু হয়ে যাই।
সেই বুযূর্গ ব্যক্তি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার জীবিকা উপার্জনের উপায় কি? আমি উত্তর দিলাম, যদি কিছু মিলে, তবে শোকর করি। আর যদি না মিলে, ছবর করি। তিনি মুচকি হেসে আমাকে বললেন, ইহা তো খুব সহজ কাজ। আসল কাজ হলো এই যে, আপনার নফ্স যেন এমন হয়ে যায় যে, যদি এক সপ্তাহ অবধি কিছুই না মিলে, তবু যেন অবাধ্যতা প্রকাশ না করে। আমি এ ব্যাপারে উনার সাহায্য প্রার্থী হলাম।
সেই বুযূর্গ ব্যক্তি আমাকে বললেন, মরুভূমিতে চলে যান যেন আপনার নফসের যাবতীয় আকাঙ্খা কর্তিত হয়ে যায়। তিন দিন সেখানে থাকবেন, চতুর্থ দিনে আপনি একটি পাহাড়ের পার্শে উপনীত হবেন। সেখানে আপনি এক ঘোড়-সওয়ারীর সাক্ষাত পাবেন। উনাকে সালাম করে আগে চলে যাবেন। যখন তিন কদম আগে যাবেন, তখন তিনি আপনাকে বলবেন, হে যুবক! আমি আপনার কর্জ আদায় করবো, এই নিন। কিন্তু আপনি তার দিকে ভ্রুক্ষেপ করবেন না। অতঃপর আমি মরুভূমিতে গেলাম। উক্ত বুযূর্গ যেমন বলেছিলেন, তদ্রুপই হয়েছিলো।
এরপর উক্ত বুযূর্গ আমাকে বললেন, গরীব দুঃখীদের অভাব ও দুঃখ দূর করণে কোমর বেঁধে নিন এবং তাদের প্রতি দয়া ও সহানুভূতির আচরণ করতে থাকুন। আমি উনার হুকুম পালন করলাম এবং অনেক দিন পর্যন্ত সুলূকের রাস্তা এভাবে অতিক্রম করতে লাগলাম।
এরপর তিনি বললেন, জীব জন্তুর সেবায় নিজেকে রত করুন এবং এরাও মহান আল্লাহ পাক উনার সৃষ্ট জীব। যখনই কোন জীব জন্তুর রোগ, যখম বা ঘা দেখতে পাবেন, তখন এর চিকিৎসা ও সেবায় রত হবেন। অতঃপর দীর্ঘ কাল পর্যন্ত আমি এ কাজ করতে থাকলাম। এভাবে আমার সাত বৎসর অতিবাহিত হলো।
তারপর তিনি বললেন, এই দরগাহের কুকুরদের প্রতি আপনি দয়া ও সহানুভূতি প্রদর্শন করুন এবং তাদের নিকট দোয়াপ্রার্থী হন। এরূপ করতে থাকলে আপনি একটি কুকুরের সাক্ষাত পাবেন, যার নিকট থেকে আপনার সৌভাগ্য হাছিল করবেন। এই ইঙ্গিত পেয়ে এই কাজে ব্রতী হলাম। একরাত্রে আমি একটি কুকুর দেখলাম। ইহাকে দেখেই আমার অবস্থা ব্যতিক্রম হয়ে গেলো। আমি খুব কাতরভাবে ইহার নিকটবর্তী হলাম। সঙ্গে সঙ্গে আমার কান্না আসলো।
সে সময়ে উক্ত কুকুর পিঠের উপর শুয়ে গেলো এবং নিজের মুখ ও চার পা আকাশের দিকে উত্তোলন করে কান্নার মত আওয়াজ দিতে লাগলো। আমি ইহার সাথে মুনাজাতের ন্যায় দু হাত উত্তোলন করে ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর ইহা চুপ হয়ে উঠে গেলো। ইহা থেকে আমার সৌভাগ্য হাছিল হলো। এই মাক্বামের প্রতি ইঙ্গিত করে হযরত শেখ সা’দী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন-
“আজাঁ বর মালাক শরফ দাসতন্দ,
কে খোদ রা বে আজ সাগ্ না পান্দাসতন্দ”।
অর্থ: উনারা ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের উপর মর্যাদা হাছিল করেছেন এ জন্য যে, উনারা নিজেকে কুকুর থেকে উত্তম মনে করতেন না। (মিরাতুল আসরার) (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












