জীবনী মুবারক
হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি (৫)
বিলাদত শরীফ: ৭১৮ হিজরী (১৩১৮ খ্রিস্টাব্দ) বিছাল শরীফ: ৭৯১ হিজরী (১৩৮৯ খ্রিস্টাব্দ) বয়স মুবারক: ৭৩ বছর
, ২৩ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২০ ছানী, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৯ জুলাই, ২০২৫ খ্রি:, ০৪ শ্রাবণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
অন্যান্য বর্ণনা:
হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার মাক্বামাতে বর্ণনা করেন, এ সময়ে আমি আর একটি জন্তু দেখতে পাই। ইহা সূর্যের দিকে নজর করে দাঁড়িয়ে আছে এবং তার উপর এক বিশেষ হাল (অবস্থা) প্রকাশ পেলো। আমি মনে মনে ভাবলাম, তার নিকটও আমি দোয়াপ্রার্থী হবো। আমি খুব আদবের সঙ্গে উহার নিকটে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং দোয়ার জন্য দু’ হাত উত্তোলন করলাম। কিছুক্ষণ পর এই জন্তুটি স্বাভাবিক হলো এবং নিজের পেট জমিনের উপর রেখে মুখ আসমানের দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি এর সঙ্গে “আমীন” “আমীন” বলতে লাগলাম।
অতঃপর সেই বুযূর্গ আমাকে বললেন, রাস্তার প্রতি লক্ষ্য করতে থাকুন। রাস্তায় যদি এরূপ কিছু দেখেন, যা দেখে লোকেরা অপছন্দ করবে, তা দূর করে দিবেন। অতঃপর আমি এ কাজে নিজকে লিপ্ত করলাম এবং সাত বৎসর পর্যন্ত আমার আস্তিন ও হাত সর্বদা কাদামাটি মিশ্রিত হয়ে থাকতো। হযরত মাওলানা রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই মাক্বামের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন-
“দর বাহরাঁ কে শোদ ছের সবজা ছঙ্গ,
খাকে শো তা গুল বর উইদ রঙ্গ ও রঙ্গ”।
অর্থ: বসন্ত ঋতুতে পাথর ও পাহাড়ের উপর কিভাবে সবুজ বাগান সৃষ্টি হতে পারে? মাটি হয়ে যাও, যাতে রঙ-বেরঙের ফুল জšি§তে পারে।
হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, যেই আমলই করার জন্য মহান আল্লাহ পাক উনার সেই ওলী আমাকে নির্দেশ দিতেন, আমি মনে প্রাণে তা সমাধা করতাম এবং আমলের সুফল ও প্রভাব নিজের মধ্যে অনুভব করতাম। এই ঘটনা থেকে উপলব্ধি করা যায় যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে সব জিনিষের হাক্বীক্বত সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করেছিলেন এবং সুফিয়ায়ে কিরামের নিকট এই মাক্বাম অতি উর্ধ্বে। এরপর হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কামালিয়তের শীর্ষে উপনীত হন এবং উনার ফয়েজ ও তাওয়াজ্জুহ দিয়ে সারা বিশ্ব একাকার করে দেন। এর ফলে হযরত খাজা আলাউদ্দীন আত্তার রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত খাজা মুহম্মদ পারশা রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের ন্যায় বুযূর্গ ব্যক্তিগণ এবং আরো অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব উনার মুরীদ ও খলীফা হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন। (মিরাতুল আসরার)
উনার জীবনীমূলক গ্রন্থসমূহ হতে জানা যায়, বহু ব্যক্তি ও স্থানের সাথে উনার যোগাযোগ ছিলো। হিরাতের আমীর হুসাইন ইবনে গিয়াসউদ্দীন ঘোরী একবার উনার সম্মানে খাবারের আয়োজন করেন। আমীর দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, এই খাদ্য সম্ভার হালাল উপার্জনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি এই খাদ্য গ্রহণে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। ফলে খাদ্যগুলো গরীবদের মধ্যে দান করে দেয়া হয়। তিনি ২/৩ বার হজ্জ সমাপন করেছিলেন। উনার লিখিত ফারসী রচনাসমূহ “হাদায়েক” নামক কিতাবে উল্লেখিত হয়েছে। (ইসলামী বিশ্বকোষ)
কেউ একজন হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে জিজ্ঞাসা করলো, আপনি কি ওয়ারিশ সূত্রে (বংশগতভাবে) দরবেশী লাভ করেছেন নাকি অন্য কারো থেকে পেয়েছেন? তিনি উত্তর দেন, সুলূকের রাস্তায় জয্বাসমূহের মধ্যে একটি মাত্র জয্বা (আকর্ষণ) সমস্ত মানুষ ও জ্বীনের আমলের সমান। আমি সেই সৌভাগ্য দ্বারা ভাগ্যবান হয়েছি। উনাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো, আপনার তরীক্বায় জলী (উচ্চস্বরে) যিকির, খেলওয়াত (একাকীত্ব) এবং সামা (আধ্যাত্মিক সঙ্গীত) জায়েয আছে কিনা? তিনি উত্তর দিলেন, জায়েয নেই।
হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নকশবন্দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনার তরীক্বার ভিত্তি কিসের উপর? তিনি উত্তর দেন, খেলওয়াত দর আঞ্জুমান (লোক সমাগমের মধ্যে একাকীত্ব) অর্থাৎ বাহ্যিকভাবে জন সমাজের মধ্যে কিন্তু বাতেনী (আভ্যন্তরীণ) ভাবে মহান আল্লাহ পাক উনার সঙ্গে। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
رِجَالٌ لَّا تُلْهِيْهِمْ تِجَارَةٌ وَّ لَا بَيْعٌ
অর্থ: তারা ঐ সব লোক যাদেরকে তাদের ব্যবসা-বানিজ্য, ক্রয় বিক্রয় মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির থেকে গাফেল করে না।
এই পবিত্র আয়াত শরীফ দ্বারা সেই মাক্বামের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। (নাফাহাতুল উনস) (ইনশাআল্লাহ চলবে)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করলে তা দ্বিগুণ-বহুগুনে বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দেয়া হয়
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (১)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












