হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা প্রত্যেকেই মহান আল্লাহ পাক উনার তরফ থেকে মনোনীত এবং পবিত্র ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত (২)
, ১৩ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১০ ছানী, ১৩৯৩ শামসী সন , ৯ জুলাই, ২০২৫ খ্রি:, ২৫ আষাঢ়, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
অনুরূপভাবে সূরা ত্ব-হা শরীফ উনার ১২১নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার শেষাংশে
وعصى ادم ربه فغوى
এ পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তরজমা বর্ণনায় অনেকে বলে থাকে যে, হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম তিনি উনার পালনকর্তার আদেশ লঙ্ঘন করলেন, ফলে তিনি পথভ্রান্ত হয়ে গেলেন। নাউযুবিল্লাহ!
এ তরজমা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রথম নবী ও রসূল হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ হওয়ার কারণে প্রকাশ্য কুফরী। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা হচ্ছে সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা পবিত্র ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। উনারা পবিত্র ওহী মুবারক ছাড়া কোন কথা বলেননি এবং কোন কাজ করেননি। তাই উনারা সমস্ত গুনাহখতা, ভুল-ভ্রান্তির উর্ধ্বে। উনারা মা’ছূম বা নিষ্পাপ। তাছাড়া হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নবী-রসূল হিসেবেই সৃষ্টি করা হয়েছে। কাজেই, হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমানী বা অবাধ্যতাজনিত কাজ সংঘঠিত হয় কি করে এবং তিনি পথভ্রান্ত বা পথহারা হন কি করে?
প্রকৃতপক্ষে উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ছহীহ অর্থ হচ্ছে, হযরত আবুল বাশার আলাইহিস সালাম তিনি উনার রব তায়ালা উনার আদেশ মুবারক পালন করলেন অতঃপর যমীনে তাশরীফ আনলেন। অর্থাৎ ফরমাবরদারী করে জমিনে তাশরীফ মুবারক আনলেন।
একইভাবে সূরা দোহা শরীফ উনার ৭নং পবিত্র আয়াত শরীফ-
ووجدك ضالا فهدى
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তরজমা বর্ণনায় অনেকেই বলে ও লিখে থাকে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার প্রিয়তম রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পথহারা পেয়েছেন অতঃপর পথ প্রদর্শন করেছেন। নাউযুবিল্লাহ!
এ তরজমা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে জঘণ্য কুফরীর শামিল। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো সৃষ্টিই হয়েছেন মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হিসেবে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হিসেবে; যা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট বর্ণিত রয়েছে।
সুতরাং যিনি সৃষ্টিই নবীউল্লাহ, রসূলুল্লাহ, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে তিনি পথহারা, বিভ্রান্ত হন কি করে! এ তরজমা কোন মুসলমান করতে পারে না। কেউ করলে তাকে খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। অন্যথায় জাহান্নাম ব্যতীত তার জন্য কোন জায়ঠিকানা থাকবে না।
প্রকৃতপক্ষে উক্ত আয়াত শরীফ উনার সঠিক অর্থ হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে কিতাব প্রদান করেছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী উনাদেরকে রাবী বলা হয়। এই রাবীগণ উনাদের মধ্যে যাঁরা প্রথম শ্রেণীর রাবী, উনাদেরকে বলা হয় ছেক্বাহ রাবী।
পবিত্র হাদীছ শরীফ বিশারদগণ উনারা ছেক্বাহ্ রাবী হওয়ার জন্য যে মানদ- নির্ধারণ করেছেন, তার মধ্যে মূল বিষয় হচ্ছে- (১) আদালত ও (২) জব্ত। জব্ত হচ্ছে- প্রখর স্মরণশক্তি। তা এমন যে, একবার শুনলে আর ভুলে না। আর আদালত-এর মধ্যে যে শর্তসমূহ রয়েছে, তার মধ্যে প্রধান হলো দু’টি। যথা- (ক) তাক্বওয়া, (খ) মুরুওওয়াত। (ক) তাক্বওয়া হচ্ছে- কুফর-শিরক, বিদ্য়াত ও ফাসিকী কাজ থেকে বেঁচে থাকার সাথে সাথে কবীরাহ গুণাহ থেকে, এমনকি ছগীরাহ গুণাহও বার বার করা থেকে বেঁচে থাকা। পবিত্র হাদীছ শরীফ সম্পর্কে মিথ্যা না বলা। সাধারণ কাজে মিথ্যা না বলা। অজ্ঞাতনামা না হওয়া, অপরিচিত না হওয়া। গাফলতী না থাকা। বদ আক্বীদা সম্পন্ন না হওয়া। বে-আমল না হওয়া। (খ) আর মুরুওওয়াত হচ্ছে- অশ্লীল-অশালীন, অশোভনীয়, অপছন্দনীয় আচার-আচরণ, উঠা-বসা, চাল-চলন, যেখানে-সেখানে ইস্তিঞ্জা করতে বসা, হাট-বাজারে গিয়ে চিৎকার করা, রাস্তা-ঘাটে লোকজনের সাথে অনর্থক ঝগড়া-ঝাটি করা ও তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হওয়া এমনকি দৃষ্টিকটু কাজ থেকে বিরত থাকা। যেমন- রাস্তায় হেঁটে হেঁটে খাদ্য খাওয়া, রাস্তায় অট্টহাস্য করা, চিৎকার করা ইত্যাদি। (তাদরীবুর রাবী, মুকাদ্দামাতুশ শায়েখ, মীযানুল আখবার, নূরুল আনোয়ার, মুকাদ্দামাতুল মিশকাত)
এখন ফিকিরের বিষয় এই যে, পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী ছেক্বাহ্ রাবী যদি এত গুণ ও যোগ্যতাসম্পন্ন এবং তাক্বওয়াধারী হন অর্থাৎ পবিত্র হাদীছ শরীফ বিশারদ এই উম্মতের নিকট যদি ছেক্বাহ রাবী হিসেবে পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণনাকারী হওয়ার জন্য ছগীরাহ্ গুণাহ্ বার বার না করা ও দৃষ্টিকটু সাধারণ অপছন্দনীয় কাজও না করা শর্ত হয়, তাহলে যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার নবী হবেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম বর্ণনা করবেন, উনাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি কি মানদ- নির্ধারণ করেছেন বা উনাদের ক্ষেত্রে কি পরিমান মা’ছূম ও মাহফুজ হওয়া নির্দিষ্ট করেছেন তা অনুধাবনীয়।
অতএব, যে কোন লোকের জন্যই হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালাম উনাদের শান মুবারক উনার বিন্দুমাত্র খিলাফ কথাবার্তা বলা সম্পূর্ণ নাজায়িয, হারাম ও কুফরী। এ ধরণের কুফরী আক্বীদা থেকে বেঁচে থাকা সমস্ত মুসলমান নর-নারীর জন্য ফরয।
-আল্লামা আবূ খুবাইব।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ইলিম অর্জন করার পর সে অনুযায়ী যে আমল করে না, তার তিনটি অবস্থার যে কোনো একটি হবেই-
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৪)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঢিলা-কুলুখের বিধান
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
বেপর্দা হওয়া শয়তানের ওয়াসওয়াসাকে সহজ করার মাধ্যম
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় খরচ করলে তা দ্বিগুণ-বহুগুনে বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দেয়া হয়
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (১)
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












