ক্বাদিরিয়া সিলসিলার আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের জীবনী মুবারক
হযরত শায়েখ আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি (২)
বিলাদত শরীফ: ২৪৭ হিজরী (৮৫১ খ্রিস্টাব্দ) বিছাল শরীফ: ৩৩৪ হিজরী (৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ) বয়স মুবারক: ৮৭ বছর
, ২১ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৩ আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ২২ মার্চ, ২০২৫ খ্রি:, ৭ চৈত্র, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) ইলমে তাছাউফ
মা’রিফাত হাছিলের প্রচেষ্টায় প্রাথমিক অবস্থা:
হযরত আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রথম অবস্থায় “আল্লাহ” শব্দের প্রতি এমন আগ্রহান্বিত ছিলেন যে, কেউ “আল্লাহ” শব্দ উচ্চারণ করলে তিনি তার মুখে চিনি দ্বারা পূর্ণ করে দিতেন। তিনি ছেলেপেলেদের মধ্যে চিনি বন্টন করতেন, যেন তারাও “আল্লাহ” শব্দ উচ্চারণ করে। অতঃপর কিছুদিন উনার অভ্যাস এরূপ হয়েছিলো, যে ব্যক্তি আল্লাহ শব্দ বলতো, তিনি তার মুখ টাকা ও মোহর দ্বারা পূর্ণ করে দিতেন। কিছুকাল পরে উনার মধ্যে এমন আত্মাভিমান উৎপন্ন হলো যে, উন্মুক্ত তরবারী হাতে নিয়ে ঘুরতেন এবং বলতেন, যে ব্যক্তি “আল্লাহ” শব্দ বলবে আমি তার মস্তক কেটে ফেলবো। লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো, হযরত! কিছুকাল পূর্বে তো আপনি আল্লাহ শব্দ উচ্চারণকারীকে চিনি ও টাকা দান করতেন, এখন এরূপ বলছেন কেন? তিনি বললেন, প্রথমে আমি এরূপ ধারণা করেছিলাম যে, তারা মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক উনার মহত্ব ও হাক্বীক্বত উপলব্ধি করে উচ্চারণ করছে, কিন্তু এখন বুঝতে পারছি যে, তারা গাফলতি ও অভ্যাস অনুযায়ী বলছে। ইহা আমি জায়েয মনে করি না যে, গাফলতির সাথে মহান আল্লাহ পাক উনার নাম মুবারক কেউ উচ্চারণ করুক। তিনি যেখানেই আল্লাহ শব্দের নক্শা দেখতে পেতেন, তৎক্ষণাৎ উহাকে চুম্বন করতেন এবং খুব তা’যীম করতেন।
একদিন গায়েব থেকে আওয়াজ আসলো, “আর কতদিন শুধু নামের সাথে মশগুল থাকবে? যদি তুমি সত্যিকারের অন্বেষণকারী হয়ে থাকো, তবে নাম ছেড়ে সত্তার অন্বেষণে কদম রাখো”। এই আওয়াজ শুনে খোদাপ্রেমে উনার হƒদয় আচ্ছন্ন করে ফেললো। তিনি দজলা নদীতে লাফিয়ে পড়লেন। একটি ঢেউ এসে উনাকে তীরের উপর রেখে গেলো। অতঃপর তিনি আগুনে লাফিয়ে পড়লেন, কিন্তু দগ্ধ হলেন না। এইরূপে তিনি বহু ধ্বংসের স্থানে নিজকে ধ্বংস করে ফেলতে চাইলেন, কিন্তু মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে সকল স্থানেই রক্ষা করলেন। এতে উনার অস্থিরতা আরো বৃদ্ধি পেলো। তিনি উচ্চস্বরে চিৎকার দিয়ে বলতে লাগলেন, আফসোস সে ব্যক্তির জন্য, যে ব্যক্তিকে পানি, আগুন, হিংস্র জন্তু, পাহাড় কিছুই ধ্বংস করে না! তৎক্ষণাৎ তিনি এক গায়েবী আওয়াজ শুনতে পেলেন, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার জন্য নিহত, তাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ছাড়া আর কেউ কতল করতে পারে না। অতঃপর তিনি এমন দিওয়ানা হয়ে গেলেন যে, দশ বার উনাকে শিকল দ্বারা বেঁধে রাখা হলো। কিন্তু কোন প্রকারেই উনার শান্তি হতো না। অতঃপর উনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো এবং একটি প্রকোষ্ঠে উনাকে দীর্ঘদিন বন্দী অবস্থায় রাখা হলো। সকলে বলতো শিবলী পাগল হয়ে গেছে। তিনি বলতেন, আমি তোমাদের নিকট পাগল, আর তোমরা আমার নিকট পাগল। (তাজকিরাতুল আওলিয়া)
হযরত আবূ বকর শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রথম দিকে রিয়াজত-মাশাক্কাত করার কালে চোখে লবণ ছিঁটিয়ে দিতেন যেন নিদ্রা না আসে। বর্ণিত আছে, এভাবে অল্প অল্প করে তিনি মোট সাত মন লবণ চোখে ছিঁটিয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার অন্তরে তাজালী প্রকাশ করে বলেছেন, যে ব্যক্তি ঘুমায় সে গাফেল, যে ব্যক্তি গাফেল তার ও মহান আল্লাহ পাক উনার মধ্যে পর্দা পড়ে রয়েছে। (তাজকিরাতুল আওলিয়া)
কামালিয়ত হাছিলের পর:
এভাবে অনবরত বিভিন্ন প্রকার রিয়াজত ও মোজাহাদায় তিনি কামালিয়ত বা পরিপূর্ণতা অর্জন করলেন। অতঃপর উনার খ্যাতি ও কারামত প্রসিদ্ধি লাভ করে। উনার শায়েখ সাইয়্যিদুত ত্বায়িফা, হযরত জুনায়েদ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি উনার ব্যাপারে বলেন-
لِكُلِّ قَوْمٍ نَاجٍ، وَ نَاجُ هَذَا الْقَوْمِ الشِّبْلِيُّ
(প্রত্যেক ক্বাওমের জন্য একজন উদ্ধারকারী আছে, আর এই উম্মতের উদ্ধারকারী হচ্ছেন হযরত শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি। ) (মিরাতুল আসরার)
যখন হযরত শিবলী রহমতুল্লাহি আলাইহি চাইলেন যে, তিনি দুনিয়া থেকে আযাদ হয়ে যাবেন, তখন নিজকে পাগল বানিয়ে দিলেন। লোকেরা উনার চিকিৎসার জন্য উনাকে পাগলা গারদে প্রবেশ করিয়ে দিলো। কেউ যদি উনার কুশল জিজ্ঞাসা করার জন্য যেতেন, তার প্রতি তিনি পাথর নিক্ষেপ করতেন। তিনি বুঝে শুনে পাগলের মত প্রলাপ বকতেন। এভাবে তিনি দুনিয়ার ফাঁদ থেকে আযাদ হয়ে গেলেন।
একদিন তিনি বাজারে গেলেন। লোকেরা বললো, পাগল এসেছে। তিনি বললেন, আমি তোমাদের নিকট পাগল, এবং তোমরা আমার নিকট হুঁশিয়ার লোক। আমার পাগলামী মুহব্বতের আধিক্যের কারণে হয়েছে, আর তোমাদের সুস্থতা গাফলতির কারণে হয়েছে। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক উনার দরবারে এই দোয়া করি, তিনি যেন আমার পাগলামী আরো বৃদ্ধি করেন, যেন আমার নৈকট্য আরো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং তোমাদের হুঁশিয়ারীও যেন বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, যাতে তোমাদের দূরত্ব আরো বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। (অসমাপ্ত)
-আল্লামা সাঈদ আহমদ গজনবী।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৬)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৫)
২৯ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
২৮ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৪)
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুর্শিদ ক্বিবলা ও মুরীদের সম্পর্ক প্রসঙ্গে (৪৩) শায়েখ বা মুর্শিদ ক্বিবলা যখন যা আদেশ করবেন তখন তা পালন করাই মুরীদের জন্য সন্তুষ্টি লাভের কারণ
২৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইলমে তাছাউফ
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র নক্শবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া তরীক্বার শাজরা শরীফ
০৭ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
৩১ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
যামানার মূল নায়িবে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত ব্যতীত খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক রাখার দাবি বাতুলতার নামান্তর:
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ক্বাদিরিয়া তরীক্বার শাজরা শরীফ
২৪ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইলমে তাছাউফ
১৭ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার)












