হাক্বীক্বী মুহব্বত-মা’রিফত ও নিসবত-কুরবত মুবারক ব্যতিত কখনোই পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের হাক্বীক্বী অর্থ ও ব্যাখ্যা করা সম্ভব না (১)
, ১৮ শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২১ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ০৪ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
প্রথমে বলে নেয়া ভালো, আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় পবিত্র কুরআন শরীফ উনার পূর্ণাঙ্গ কোনো গ্রহণযোগ্য তরজমা বা তাফসীরগ্রন্থ রচিত হয়নি। যারা আরবীতে তাফসীর লিখেছেন উনারা অনেক ক্ষেত্রেই কুরআন শরীফ উনার হুবহু শব্দ মুবারকই ব্যবহার করেছেন। অনুরূপ ফার্সী ভাষায় লিখিত তাফসীর গ্রন্থসমূহের মধ্যে হুবহু আরবী ভাষায় লিখিত তাফসীর গ্রন্থের অনুসরণ করার কারণে উক্ত দু’ ভাষায় লিখিত তাফসীর গ্রন্থসমূহের গ্রহণযোগ্যতা ও নির্ভরযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি।
কিন্তু যারা উর্দু, বাংলা কিংবা ইংরেজি ইত্যাদি ভাষায় তরজমা বা তাফসীর গ্রন্থ লিখেছে তারা পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মর্মবাণী বুঝাতে গিয়ে নিজ ভাষার শব্দ ব্যবহার করেছে এবং এক্ষেত্রে তারা উর্দু, বাংলা, ইংরেজি ইত্যাদি ভাষায় রচিত অভিধান গ্রন্থের অনুসরণ করেছে। এছাড়া তারা নিজেদের কর্মের সাথে ক্বিয়াস করে অনেক ক্ষেত্রে মনগড়াভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছে। যার কারণে তাদের লিখিত তরজমা ও তাফসীর গ্রন্থসমূহের মধ্যে এমন কিছু মারাত্মক ভুলের সমাহার ঘটেছে যা লিখক ও পাঠক সকলকে কাফির ও জাহান্নামী বানানোর জন্য যথেষ্ট। নাউযুবিল্লাহ!
বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য মাত্র দু’টি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।
প্রথমত সূরা ত্ব-হা শরীফ উনার ১২১ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ উনার শেষাংশে-
وَعَصٰى آدَمُ رَبَّهُ فَغَوٰى
উনার তরজমা বর্ণনায় প্রায় সবগুলি তরজমা ও তাফসীর গ্রন্থসমূহে উল্লেখ রয়েছে যে, হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি উনার পালনকর্তার আদেশ লঙ্ঘন করলেন, ফলে তিনি পথভ্রান্ত হয়ে গেলেন। নাউযুবিল্লাহ!
এ তরজমা মহান আল্লাহ পাক উনার প্রথম নবী ও রসূল হযরত আবুল বাশার আদম আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র শান মুবারক উনার খিলাফ হওয়ার কারণে প্রকাশ্য কুফরী। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত উনাদের আক্বীদা হচ্ছে- সমস্ত হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনারা ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। উনারা ওহী মুবারক ছাড়া কোন কথা বলেননি এবং কোন কাজ করেননি। তাই উনারা সমস্ত গুনাহখতা, ভুল-ভ্রান্তির উর্ধ্বে। উনারা মা’ছূম বা নিষ্পাপ। তাছাড়া হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে নবী-রসূল হিসেবেই সৃষ্টি করা হয়েছে। কাজেই, হযরত আবুল বাশার আদম আলাইহিস সালাম উনার দ্বারা মহান আল্লাহ পাক উনার নাফরমানী বা অবাধ্যতাজনিত কাজ সংঘঠিত হওয়া ও পথভ্রান্ত বা পথহারা হওয়ার চিন্তা করাটাও কুফরী।
প্রকৃতপক্ষে উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ছহীহ অর্থ হচ্ছে, হযরত আবুল বাশার আদম আলাইহিস সালাম তিনি উনার রব তায়ালা উনার আদেশ মুবারক পালন করলেন অর্থাৎ ফরমাবরদারী করলেন। অতঃপর যমীনে তাশরীফ আনলেন।
আরেকটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে; পবিত্র সূরা দ্বুহা শরীফ উনার ০৭ নম্বর পবিত্র আয়াত শরীফ-
وَوَجَدَكَ ضَالًّا فَهَدٰى
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার তরজমা বর্ণনায় প্রায় সকল তরজমা বা তাফসীরগ্রন্থে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পথহারা পেয়েছেন অতঃপর পথ প্রদর্শন করেছেন। নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ! নাউযুবিল্লাহ!
এ তরজমা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে জঘণ্য কুফরীর শামিল। কেননা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তো সৃষ্টিই হয়েছেন মহান আল্লাহ পাক উনার নবী ও রসূল হিসেবে, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়্যীন হিসেবে; যা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে স্পষ্ট বর্ণিত রয়েছে।
সুতরাং যাঁর সৃষ্টি নবীউল্লাহ, রসূলুল্লাহ, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে তিনি পথহারা, বিভ্রান্ত হন কি করে! এ তরজমা কোন মুসলমান করতে পারে না। কেউ করলে তাকে খালিছ তওবা-ইস্তিগফার করতে হবে। অন্যথায় জাহান্নামী হওয়া ব্যতীত কোন ফায়সালা নেই।
প্রকৃতপক্ষে উক্ত আয়াত শরীফ উনার সঠিক অর্থ হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে কিতাববিহীন পেয়ে কিতাব প্রদান করেছেন।
এরূপ আরো অনেক বিষয় রয়েছে যা বাংলা, ইংরেজী, উর্দুভাষায় রচিত তরজমা ও তাফসীরের কিতাবগুলিতে উল্লেখ করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!
সুতরাং, উক্ত আয়াত শরীফসহ আরো অসংখ্য ভুল ও কুফরীমূলক অর্থ ও ব্যাখ্যাসমূহ কথিত গ্রহণযোগ্য তরজমা বলে যেসব লিখকের তাফসীর গ্রন্থের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে।
কাজেই, যেসব তরজমা বা তাফসীরগ্রন্থ ভুল-ত্রুটি ও কুফরীতে পরিপূর্ণ সেসব গ্রন্থ আদৌ নির্ভরযোগ্য বা গ্রহণযোগ্য ও অনুসরণীয় হতে পারে না। সর্বসাধারণের জন্য সেসব গ্রন্থ পাঠ করা জায়িয নেই। কারণ কাফির ও জাহান্নামী হওয়ার জন্য একটা কুফরী আমলই যথেষ্ট।
প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, যাকে তাকে অনুসরণ করা, যার তার নিকট বাইয়াত হওয়া, যার তার পিছনে নামায পড়া, যার তার কাছে ইলিম শিক্ষা করা, যার তার ওয়াজ-নছীহত শ্রবণ করা, যার তার লিখনী বা কিতাবাদি পাঠ করা জায়িয নেই।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهٗ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهٗ فُرُطًا
অর্থ: “ওই ব্যক্তির অনুসরণ করো না, যার ক্বলব্ (গোমরাহীর কারণে) আমার যিকির থেকে গাফিল। ফলে সে তার নফসের অনুসরণ করে থাকে এবং তার কাজগুলো ত্রুটিযুক্ত অর্থাৎ সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ হয়ে থাকে। ” (পবিত্র সূরা কাহাফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ২৮)
অর্থাৎ যে বা যারা ইলমে তাছাওউফ বা তরীক্বতের সবক অনুযায়ী ক্বলবী যিকির করে না এবং এর মাধ্যমে হিংসা, গীবত, অহঙ্কার, মিথ্যা, রিয়া ইত্যাদি বদ খাছলত দূর করে ক্বলব্কে পরিশুদ্ধ করে না, ইচ্ছায় অনিচ্ছায় তারা নফস্ বা প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে বাধ্য, যার কারণে তাদের কাজগুলি সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ হিসেবে পরিগণিত হয়। ছূরতান (বাহ্যিক দৃষ্টিতে) তাদের কোন কাজ ভাল দেখা গেলেও তা গইরুল্লাহ থেকে মুক্ত নয়।
অপর এক আয়াত শরীফে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَنْ يَعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمَنِ نُقَيِّضْ لَهُ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهُ قَرِينٌ. وَإِنَّهُمْ لَيَصُدُّونَهُمْ عَنِ السَّبِيلِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ مُهْتَدُونَ
অর্থ: “যে বা যারা মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির থেকে গাফিল, তাদের জন্য একটা শয়তান নিযুক্ত বা নির্দিষ্ট হয়ে যায়। উক্ত শয়তান তাদের সঙ্গী হয়ে তাদেরকে সৎপথ থেকে ফিরিয়ে রাখে অর্থাৎ গুনাহর কাজে লিপ্ত করে দেয়। অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎ পথেই রয়েছে। ” (পবিত্র সূরা যুখরূফ শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৬, ৩৭)
কাজেই, যারা ক্বলবী যিকির করে নিজেদের ক্বলব্কে পরিশুদ্ধ করেনি বা করে না এমন ব্যক্তি বা সম্প্রদায় নফস্ ও শয়তানের অনুসারী। ফলে তারা পাপ কাজ বা শরীয়ত উনার খিলাফ কাজে লিপ্ত এবং তারা সৎ পথ বা হিদায়েত থেকেও বিচ্যুত। এক কথায় তারা গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট। (চলবে)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












