হাক্বীক্বী মুহব্বত-মা’রিফত ও নিসবত-কুরবত মুবারক ব্যতিত কখনোই পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের হাক্বীক্বী অর্থ ও ব্যাখ্যা করা সম্ভব না (৪)
, ২১ শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২৪ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ০৭ ফালগুন, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনু জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখ্য। তিনি একবার সূরা আর-রহমান শরীফ উনার ছোট্ট একখানা পবিত্র আয়াত শরীফ-
كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ
উনার তাফসীর করলেন একাধারা দুই বৎসর। তবুও যেন তাফসীর বাকী রয়ে গেল। উনার ভিতরে একটা ফখরের ভাব পয়দা হলো, নিশ্চয়ই তিনি মস্ত বড় একজন তাফসীরকারক। উনার মতো তাফসীরকারক হয়তো আর কেউ নেই। অন্যথায় একখানা আয়াত শরীফ উনার তাফসীর দুই বৎসর করার পর বাকী থাকার কথা নয়। এরই মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছায় এক আগন্তুক উনার তাফসীরের মজলিসে গিয়ে উনাকে প্রশ্ন করলেন, হুযূর! আপনি তাফসীর করছেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রত্যেহ একেক শানে অবস্থান করেন। বলুন তো মহান আল্লাহ পাক তিনি এখন কোন শান মুবারকে আছেন এবং এখন তিনি কি করছেন? এ প্রশ্ন শুনে হযরত ইমাম ইবনু জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি চুপ হয়ে গেলেন। কোন উত্তর দিতে পারলেন না।
দ্বিতীয়দিন আবার যখন তিনি তাফসীর করা শেষ করলেন সাথে সাথে উক্ত আগন্তুক ব্যক্তি একই প্রশ্ন করে বসলেন, সেদিনও তিনি কোন জাওয়াব দিতে পারলেন না। তৃতীয়দিনও একই ঘটনা ঘটলো। তিনি যারপর নাই লজ্জিত হলেন। রাতের বেলা তিনি খুব কান্নাকাটি করলেন, তওবা-ইস্তিগফার করলেন এবং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উসীলা মুবারক দিয়ে ফায়সালা কামনা করে ঘুমিয়ে পড়লেন। স্বপ্নযোগে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাক্ষাৎ মুবারক দিয়ে বললেন, হে ইবনে জাওযী! তোমার কি হয়েছে? ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি নিজের অক্ষমতার কথা ব্যক্ত করলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তোমাকে প্রশ্ন করেছে, তাকে তুমি চিনো? তিনি বললেন যে, না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, প্রশ্নকারী ব্যক্তি হচ্ছে হযরত খিযির আলাইহিস সালাম। সে আগামীকালও আসবে এবং তোমাকে উক্ত বিষয়ে আবার প্রশ্ন করবে। তখন তুমি জাওয়াবে বলবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি হচ্ছেন ক্বদীম। উনার শান হচ্ছে আযালী-আবাদী শান মুবারক। কাজেই, তিনি নতুন করে কোন কাজ শুরু করেন না। তিনি শুরুতে যা করেছেন এখনও তাই করেন। তবে কখনও কখনও উনার কোন কোন শান মুবারক প্রকাশ পায়। সুবহানাল্লাহ!
সত্যিই পরের দিন আগন্তুক ব্যক্তি এসে যখন প্রশ্ন করলেন তখন সহসাই হযরত ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রশ্নের জাওয়াব দিয়ে দিলেন। জাওয়াব পেয়ে আগন্তুক ব্যক্তি বললেন, হে ইবনে জাওযী রহমতুল্লাহি আলাইহি! আপনি আপনার যিনি নবী ও রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি অধিক পরিমাণে ছলাত-সালাম পেশ করুন যিনি আপনাকে আমার সুওয়ালের জাওয়াব জানিয়ে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
বোঝা গেল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে তায়াল্লুক-নিসবত মুবারক ব্যতীত পবিত্র কুরআন শরীফ কিংবা পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের হাক্বীক্বী তাফসীর বা ব্যাখ্যা জানা ও করা কখনোই সম্ভব নয়। সমস্ত ইলিমের মূল মালিক হচ্ছেন- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি। কাজেই তিনি যদি কাউকে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ সম্পর্কে দয়া-ইহসান মুবারক করে ইলিম দান করেন, যোগ্যতা দান করেন তার পক্ষেই পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের সঠিক তরজমা, হাক্বীক্বী তাফসীর বা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা সহজ ও সম্ভব হবে। অন্যথায় তার দ্বারা ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। কেননা পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ আল্লাহ পাক উনার কালাম মুবারক। হাদীছ শরীফ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কালাম মুবারক। তাহলে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ-পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের নিগূঢ় রহস্য মুবারক, অসীম ইলিম মুবারকের বিষয়, এটা সাধারণ মানুষ তাদের ক্ষুদ্র আক্বল দ্বারা বুঝবে কিভাবে? উনারা যদি কাউকে বুঝার তৌফিক দেন তাহলে উপলব্ধি করা সম্ভব।
কাজেই যিনি খালিক, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদের সকলকে সঠিক আক্বীদা ও আমল সম্বলিত কিতাবাদী-রেসালা শরীফ পাঠ করে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার, হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের এবং হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদের শান মুবারকে সর্বোচ্চ বিশুদ্ধ আক্বীদা ও হুসনে যন পোষণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন। (সমাপ্ত)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া কবীরা গুনাহ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার)












