হামিলু লিওয়ায়িল হামদ, আকরামুল আউওয়ালীন ওয়াল আখিরীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত নূরুল মাগফিরাত মুবারক তথা হাত মুবারক উনার স্পর্শ মুবারকে খাদ্যদ্রব্যে অভাবনীয় বরকত (৫ম পর্ব)
, ২৩ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২০ ছানী, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৯ জুলাই, ২০২৫ খ্রি:, ০৪ শ্রাবণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
(৭)
হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন। হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার কসম করে বলেন, আমার ক্ষুধার তাড়না সহ্য করার অত্যধিক ক্ষমতা ছিলো। আমি ক্ষুধার তাড়নায় পেটে পাথর বাধতাম। একবার আমি অত্যধিক ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাস্তার পার্শ্বে বসেছিলাম। ঐ সময় আমার নিকট দিয়ে হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি হেঁটে যাচ্ছিলেন। আমি উনাকে পবিত্র কুরআন শরীফ উনার একটি পবিত্র আয়াত শরীফ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। এতে আমার উদ্দেশ্য ছিলো যে, তিনি যেন আমার অবস্থাটি বুঝতে পেরে আমাকে উনার সঙ্গে নিয়ে যান। কিন্তু তিনি আমাকে নিলেন না।
এরপর হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি ওইস্থানে এসে পড়লেন। আমি সেই একই উদ্দেশ্যে উনাকেও সেই পবিত্র আয়াত শরীফ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম; কিন্তু তিনিও আমাকে সঙ্গে নিলেন না। একটু পরেই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই পথে এসে পড়লেন। তিনি আমাকে দেখে মৃদু হাসলেন এবং আমার অবস্থা বুঝে নিয়ে বললেন, হে আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি আমার সাথে চলুন। আমি উনার সাথে চলে গেলাম। তিনি গিয়ে উনার হুজরা শরীফে প্রবেশ করলেন। আমিও গৃহে প্রবেশের অনুমতি চেয়েছি। অনুমতি পাওয়া গেলো। আমি দেখলাম, এক পেয়ালা দুধ রয়েছে।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হুজরা শরীফের সদস্যদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, এ দুধ আসলো কোথা থেকে? উনারা বললেন, অমুক ব্যক্তি আপনার জন্য মুবারক হাদিয়াস্বরূপ পাঠিয়েছেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমাকে ডাকলেন, হে আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আমি বললাম, উপস্থিত আছি ইয়া রসূলাল্লাহ ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি বললেন, আপনি গিয়ে আছহাবে ছুফফা উনাদেরকে ডেকে আনুন।
হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, আছহাবে ছুফফাগণ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার মেহমানতুল্য ছিলেন। উনাদের কোন বাসস্থান বা অর্থকড়ি মাত্র ছিলো না। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট কখনও কোন ছদকার বস্তু আসলে তিনি তা উনাদের নিকট পাঠিয়ে দিতেন। এ থেকে নিজে কিছু গ্রহণ করতেন না। অবশ্য কখনও হাদিয়ার বস্তু আসলে তা হতে নিজেও কিছু গ্রহণ করতেন এবং আছহাবে ছুফফাহ উনাদেরকেও কিছু পাঠিয়ে দিতেন।
মোট কথা উনাদেরকে ডেকে আনার আদেশ মুবারক শুনে আমি ভাবলাম যে, এত অধিক লোকের মধ্যে এই সামান্য দুধ দ্বারা কি হবে? আমি আশা করছিলাম যে, আমার ক্ষুধা ও পিপাসা নিবৃত্ত করার পরিমাণ দুধই পেয়ে যাবো। এখন তো আছহাবে ছুফফাগণ আসলে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার দ্বারাই দুধ বণ্টন করাবেন। এমতাবস্থায় আমি আর কতটুকু দুধ পাবো? তবে উনার আদেশ মুবারক পালন করা ফরয। তাই আমি আছহাবে ছুফফাহ উনাদেরকে ডেকে আনলাম। উনারা এসে বসে গেলেন।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে হযরত আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আমি বললাম, হাজির আছি ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! তিনি বললেন, এই দুধ নিয়ে উনাদেরকে পান করতে দিন। তখন আমি দুধের পাত্র হাতে নিয়ে প্রত্যেককে তা পান করতে দিলাম। সকলেই পরিতৃপ্তভাবে তা পান করলেন। অবশেষে আমি দুধের পাত্র নিয়ে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট গেলাম। তিনি আমার নিকট হতে দুধের পাত্র নিজ হাত মুবারকে নিলেন এবং আমার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন, হে আবু হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! এখন আমি আর আপনিই বাকী রয়েছি।
আমি বললাম, জি! নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, তবে আপনি বসে এখন দুধ পান করুন। আমি বসে পান করলাম। তিনি বললেন, আরও পান করুন। এ কথা তিনি আমাকে পর পর কয়েকবারই বললেন এবং আমিও পান করতে লাগলাম। অবশেষে আমি বললাম, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! যিনি আপনাকে সম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিসেবে প্রেরণ করেছেন। আমার পেট এখন সম্পূর্ণরূপে ভর্তি হয়ে গেছে। এ কথা বলে আমি দুধের পাত্রটি উনার নিকটে দিলাম। তিনি তখন মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা করতঃ উনার নাম মুবারক উচ্চারণ করে বাকী দুধটুকু নিজে পান করলেন। সুবহানাল্লাহ!
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (৩)
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইসলামী শরীয়ত মুতাবিক- ছবি তোলা হারাম
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন-
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (২)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা পালন করা পুরুষ-মহিলা সবার জন্য ফরজ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যিনি খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহাসম্মানিত হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে মুহব্বত মুবারক করা সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসীর জন্য ফরযে আইন
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে ছিরাতুল মুস্তাক্বীম উনার ছহীহ তাফসীর- ০১
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












