ইলমুত তাযকিয়্যাহ:
হিংসার অপকারিতা ও ভয়াবহ পরিণতি
, ১৮ ছফর শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৪ ছালিছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৩ আগস্ট, ২০২৫ খ্রি:, ৩০ শ্রাবণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) মহিলাদের পাতা
হিংসা মানুষের অন্তরের একটা কঠিন রোগ। হিংসা করা হারাম ও কবীরা গুনাহ। হিংসা অর্থাৎ কারো সম্মান-মর্যাদা কিংবা অর্থ সম্পদ দেখে ক্ষতি করার ইচ্ছা পোষণ করা। এই হিংসার কারণে পৃথিবীতে ঝগড়া-বিবাদ, মারামারি, কাটাকাটি, খুনাখুনি, রক্তপাত ইত্যাদি নানাবিধ মহাঅনিষ্টের সৃৃষ্টি হয়। কাজেই, প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য হিংসা থেকে বেঁচে থাকা ফরয।
খালিক্ব, মালিক, রব, মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র সূরা ফালাক্ব শরীফ উনার ৪নং পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে হিংসুকের হিংসা থেকে বান্দাদেরকে আশ্রয় প্রার্থনার জন্য বলেছেন। ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ اَبِي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِيَّاكُمْ وَالْـحَسَدَ فَاِنَّ اَلْـحَسَدَ يَاْكُلُ اَلْـحَسَنَاتِ كَمَا تَاْكُلُ اَلنَّارُ اَلْـحَطَبَ.
অর্থ : হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্র্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা হিংসা হতে বেঁচে থাক। কেননা নিশ্চয়ই হিংসা নেকীগুলিকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নষ্ট করে দেয়, যেমন আগুন লাকড়ীকে ধ্বংস করে দেয়। (আবূ দাউদ শরীফ)
স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুআ করেছেন-
اللهم اجعلنى مـحسودا ولا تـجعلنى حاسدا
অর্থ : আয় আল্লাহ পাক! আমাকে হিংসাকৃত করুন কিন্তু হিংসাকারী করবেন না।
হিংসার অনিষ্ট সম্পর্কে ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন কিতাবে একটি ঘটনা বর্র্ণিত রয়েছে, এক লোক ছিল। সে প্রত্যেক দিন বাদশাহর দরবারে যেয়ে একটা ঘোষণা দিত। সে বলত, ‘নেক লোকদের সাথে তোমরা সদ্ব্যবহার কর আর যারা দুষ্ট-দুরাচার, ফাসিক-ফুজ্জার তাদেরকে তাদের আমলের উপর ছেড়ে দাও। তাদের আমলই তাদের বিচার করবে। ’
এ ঘোষণা দেয়ার কারণে বাদশাহ লোকটাকে খুব পছন্দ করতো এবং পুরস্কার দিত। বাদশাহর সভাসদের কিছু লোকদের মধ্যে হিংসা হলো। এ লোকটাকে বাদশাহ এত ইনআম (পুরস্কার) দেয় অথচ সে কিছুই করে না, সে শুধু এ কথাটা বলে। তাকে এখান থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
ওই লোকটা চলে যাওয়ার পর বাদশাহর সভাসদদের মধ্যে এক লোক বাদশাহর কানে কানে গিয়ে বলল, হে বাদশাহ! এই যে লোকটা আপনার এখানে আসে, এখান থেকে বের হয়ে সে আপনার দুর্নাম করে। আপনার দুর্নাম করে সে বলে, বাদশাহর মুখে দূর্গন্ধ।
বাদশাহ বললেন, এর প্রমাণ কি?
প্রমাণ যদি আপনি চান, তাহলে কালকে আপনি তাকে ডাকান, দেখবেন কালকেই সে মুখে রুমাল দিয়ে আসবে। বাদশাহ পরের দিন তাকে সংবাদ দিলেন।
সত্যিই দেখা গেল, লোকটা তার মুখ রুমাল দিয়ে ঢেকে বাদশাহর কাছে আসলো। বাদশাহ তার গোস্বাকে হজম করে কিছুই বললেন না। একটা চিঠি লিখে দিলেন। চিঠি লিখে দিয়ে ওই লোকটাকে বললেন, তুমি এ চিঠিটা অমুক লোকের কাছে পৌঁছিয়ে দিও।
লোকটা চিঠি নিয়ে বের হয়ে গেল। সাধারণত বাদশাহ নিজ হাতে কাউকে চিঠি লিখেন না, বাদশাহ যদি নিজ হাতে কাউকে চিঠি লিখেন তাহলে তাকে পুরস্কার দিয়ে থাকেন। ওই সভাসদ (যে হিংসা করত) দূর থেকে দেখল, বাদশাহ তাকে একটা চিঠি লিখে দিলেন। ওই সভাসদ তাড়াতাড়ি বের হয়ে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করল, ভাই তোমাকে যে চিঠিটি বাদশাহ দিয়েছেন, সে চিঠি তুমি কোথায় নিয়ে যাবে?
লোকটা বলল, এ চিঠি আমাকে অমুক লোকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
সেই হিংসুক সভাসদ বলল, ঠিক আছে, তোমার পৌঁছানোর দরকার নেই। আমার কাছে দিয়ে দাও, আমি এটা নিয়ে পৌঁছে দিব। সে চিঠিটি নিয়ে গেল।
পরের দিন সকালে আবার সেই লোকটি আসল বাদশাহর দরবারে। বাদশাহ তাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেলেন। কি ব্যাপার! তুমি আসলে কি করে। সে বলল, হুযূর! আমি প্রত্যেক দিন যেভাবে আসি আজকেও সেভাবে এসেছি।
বাদশাহ জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে আমি যে চিঠিটি দিয়েছিলাম সে চিঠিটি কোথায়?
সে বলল, হুযূর! আপনার সভাসদ অমুক ব্যক্তি চিঠিটি নিয়ে গেছে এবং সে চিঠিটি সঠিক জায়গায় পৌঁছে দিবে। বাদশাহ বললেন, হ্যাঁ, সে তার সঠিক জায়গায় পৌঁছে দিবে সত্যিই; তবে জিনিসটি অন্য রকম হয়ে গেল।
লোকটি বলল, কেমন?
বাদশাহ বললেন, চিঠিটি লিখেছিলাম তোমার সম্পর্কে। আচ্ছা, তুমি একটা কথা বল তো, তুমি কি বাইরে একথা বলে থাক, বাদশাহর মুখে দূর্গন্ধ?
সে বলল, নাতো! আমি কখনও একথা বলিনি। বাদশাহ জিজ্ঞেস করলেন, তুমি যদি একথা নাই বলে থাক তাহলে গতকাল তুমি যখন আমার কাছে আসলে, তখন তোমার মুখ রুমাল দিয়ে ঢাকা ছিল কেন?
সে বলল হুযূর! আপনার সভাসদ ওই লোকটি আপনার এখানে আসার পূর্বে তার বাড়ীতে আমাকে দাওয়াত করেছিল। কিছু পিঁয়াজ মিশ্রিত তরকারী আমাকে খেতে দেয়, যার কারণে আমার মুখে দূর্গন্ধ হয়। আমার মুখের দূর্গন্ধ যেন আপনার নাকে না যায়, সেজন্য আমি রুমাল দিয়ে আমার মুখ ঢেকেছিলাম।
বাদশাহ বললেন, তাহলে তো তোমার কথাই সত্যে পরিণত হয়েছে। কি কথা হুযূর! বাদশাহ বললেন, তোমার প্রতি গোস্বা হয়ে চিঠিতে লিখেছিলাম, জল্লাদ! এ চিঠি বহনকারী চিঠি পৌঁছামাত্রই তাকে হত্যা করবে এবং তার চামড়াগুলোর মধ্যে ভূষি ভর্তি করে আমার কাছে পৌঁছে দিবে। কিন্তু সে ঠিকই পৌঁছে দিয়েছে; তবে তোমার লাশ নয়, সেই সভাসদের লাশ। তুমি যে বলতে প্রত্যেক দিন, ‘নেককারদের সাথে সদ্ব্যবহার করো আর যে দুষ্ট-দুরাচার তাকে ছেড়ে দাও তার আমলের উপর। তার আমলের দ্বারাই তার বিচার হবে। ’ সত্যিই তার আমলের দ্বারাই তার বিচার হয়েছে। সে যে তোমাকে হিংসা করেছিল, তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করেছিল; এই হিংসা-বিদ্বেষের কারণে তার মৃত্যুদন্ড হয়ে গেছে।
(সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
তিন ধরনের লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে না
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (৩)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (১০)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৪)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












