হিকায়াতুল আবরার বা নছীহতমূলক ঘটনাসমূহ
, ২২ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০৯ খ্বমীছ ১৩৯১ শামসী সন , ০৮ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রি:, ২৩ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা

পবিত্র মদীনা শরীফ
প্রথম হিজরী : হিজরত মুবারক উনার পর পথিমধ্যে বরিদা বিন হাসিব নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে শহীদ করতে এসে নিজেই ৭০ জনের বাহিনীসহ ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর কুবায় ১৪ দিন অবস্থান করেন এবং সেখানে পবিত্র মসজিদ নির্মাণ করেন।
পবিত্র মদীনা শরীফ গমনকালে বতনে ওয়াদি নামক স্থানে ১০০ জন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ উনাদেরকে নিয়ে পবিত্র জুময়ার নামায আদায় করেন এবং সেখানে পবিত্র মসজিদ নির্মাণ করেন। পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে প্রবেশ করে ৭/৮ মাস হযরত আবু আইউব আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার গৃহে অবস্থান করেন। এ সময় পবিত্র মসজিদে নববী ও উম্মুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের কক্ষ মুবারক সমূহ নির্মাণ করা হয়। এরপর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখান থেকে নিজ অবস্থানে যান। এ সকল কক্ষ মুবারক উনাদের প্রত্যেকটির দৈর্ঘ্য ১০ হাত, প্রস্থ ৬ হাত এবং উঁচু একজন মানুষ দাঁড়িয়ে হাত উঁচু করে স্পর্শ করতে পারতো। এরপর আযানের প্রবর্তন হয়।
দ্বিতীয় হিজরী : পবিত্র ক্বিবলা পরিবর্তন, শাবান মাসে পবিত্র ক্বিবলা পরিবর্তনের পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হয়। পবিত্র রমযান মাসে বদর জিহাদ সংঘঠিত হয়। এ জিহাদে মুসলমান উনাদের সংখ্যা ছিল ৩১৩ জন। আর কাফিরদের সংখ্যা এক হাজার। এ বৎসর যিলহজ্ব মাসে হযরত যাহরা আলাইহাস সালাম উনার শাদী মুবারক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৎসরই রোযা ফরয হয়, ফিৎরা দেয়া ওয়াজিব হয়, জামায়াতের সাথে ঈদুল ফিৎরের নামায শুরু হয়।
তৃতীয় হিজরী : ওহুদ জিহাদ সংঘঠিত হয়, হযরত ইমাম হাসান আলাইহিস সালাম তিনি বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। হযরত হাফসা আলাইহাস সালাম উনার সাথে শাদী মুবারক সুসম্পন্ন হয়। উত্তরাধিকার আইন জারি হয়। এ বৎসর মুশরিক নারীদেরকে বিয়ে করা হারাম করা হয়। হযরত জাইনব আলাইহাস সালাম উনার সাথে শাদী মুবারক সুসম্পন্ন হয় এ বৎসরই।
চতুর্থ হিজরী : হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তিনি পবিত্র বিলাদত শরীফ গ্রহণ করেন। এ বৎসরই মদ্য পান হারাম হয়, চোরের হাত কাঁটার দ-বিধি জারী হয়। হযরত যায়েদ ইবনে সাবেত রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে হিব্রু ভাষা শিক্ষার জন্য প্রেরণ। রাজির জিহাদ, বীরে মাউনয়া জিহাদ, বদরের দ্বিতীয় জিহাদ, ছারিয়ায়ে আনি ছালমা, ছারিয়ায়ে ইবনে উনাইছ ইত্যাদি সংঘটিত হয়। হযরত উম্মে সালমা আলাইহাস সালাম উনার সাথে এ বৎসরই শাদী মুবারক সুসম্পন্ন হয়।
পঞ্চম হিজরী : এ বৎসর মহিলাদের জন্য পর্দা ও তৎসংক্রান্ত অন্যান্য বিধান চালু হয়। যিনার শাস্তি ১০০ বেত্রাঘাত জারী হয়। হদ কায়েম এর বিধান জারী হয়, তায়াম্মুমের বিধান এ বৎসরই জারী হয়। এ বৎসরই দওমাতুল জঙ্গলের জিহাদ, বনু কুরায়জার জিহাদ, পরিখার জিহাদ ইত্যাদি সংঘটিত হয়।
ষষ্ট হিজরী : হুদাইবিয়ার সন্ধি, এস্তেসকার নামায, জাতুরিকার জিহাদ, বনু লাহিয়ান জিহাদ বিভিন্ন দেশের বাদশাদের নিকট দূত প্রেরণ, বাদশা নাজ্জাসির নিকট দূত প্রেরণ, হিরাক্লিয়াসের নিকট দূত প্রেরণ, বাইয়াতে রিদ্বওয়ান, হযরত উম্মে হাবিবা আলাইহাস সালাম উনার সাথে শাদী মুবারক সুসম্পন্ন হয়।
সপ্তম হিজরী : হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ও হযরত আমর ইবনে আস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাদের পবিত্র ইসলাম গ্রহণ। নখর (হিংস্র) বিশিষ্ট পাখী খাওয়া নিষিদ্ধ, হিংস্র জন্তু খাওয়া হারাম, গাদা ও খচ্চর খাওয়া হারাম, মু’তা বিবাহ হারাম, স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিণিময়ে তদপেক্ষা বেশী স্বর্ণ ও রৌপ্য গ্রহণ করা হারাম হওয়ার বিধান জারী হয়। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ বৎসরই বিষ পান করানোর চেষ্টা করা হয়। এ বৎসরই উমরাতুল কাজা আদায় করেন, হযরত মায়মুনা আলাইহাস সালাম ও হযরত সুফিয়া আলাইহাস সালাম উনাদের সাথে শাদী মুবারক সুসম্পন্ন হয়।
অষ্টম হিজরী : পবিত্র মক্কা শরীফ বিজয়, মু’তার জিহাদ, হুনাইনের জিহাদ, পবিত্র মিম্বর শরীফ নির্মাণ, তায়েফের জিহাদ, আওতাসের জিহাদ, সুদ হারাম হওয়ার বিধান এ বৎসরই জারী হয়, পবিত্র যাকাত ফরয হয় ।
নবম হিজরী : পবিত্র হজ্জ ফরয হয়, তবুকের জিহাদ, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র হজ্জ যাত্রা (আমিরে হজ্ব) এবং বিভিন্ন কবিলার লোকদের দলে দলে পবিত্র ইসলাম গ্রহণ। মুনাফিকরা এ বৎসর মসজিদে যেরার তৈরী করে।
দশম হিজরী : হুজ্জাতুল বিদা, নূরে মুজাসাসম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হজ্জ আদায়, বনু হারিস ও বনু কায়াবদের পবিত্র ইসলাম গ্রহণ, কতিপয় খ্রীষ্টানদের সাথে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথোপকথন, নবম ও দশম হিজরীতে লোকগণ দলে দলে পবিত্র ইসলাম গ্রহণ করেছেন। এ সমস্ত গোত্রের সংখ্যা ছিল প্রায় ৬০টি। এভাবে অল্পসময়ের মধ্যেই সমুদয় আরববাসী, অগ্নি উপাসক, খ্রীষ্টান ও ইহুদীরা স্বেচ্ছায় আগ্রহের সাথে পবিত্র ইসলাম গ্রহণ করতে থাকে। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নুবুওওয়াত প্রকাশের তিন বৎসর পর থেকে প্রায় ৬ষ্ঠ হিজরী পর্যন্ত সুদীর্ঘ ১৬টি বৎসর স্বীয় জাতি, আত্মীয়-স্বজন, বর্হিশত্রু কর্তৃক আক্রমন সত্বেও, পৃথিবীর বুকে পবিত্র ইসলাম উনাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আরবের বিভিন্ন সম্প্রদায়কে ও পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী জাতিকে ধর্মের পরম বন্দনে আবদ্ধ করে তাদের মধ্যে ঐক্যের বীজ বপন করেন। আরবদের অধর্ম, অনাচার উনারই মহিমাময় মহান চারিত্রিক মাধুর্যে ও ব্যবহারে চিরকালের জন্য বিলুপ্ত হয়।
একাদশ হিজরী : মুসাইলামাতুল কাজ্জাবের নবী দাবী ও তাকে নিস্তানাবুদ করা, এ বৎসর ২৬ সফর সোমবার ওসামা ইবনে যায়েদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নেতৃত্বে ওবনা নামক স্থানে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন। সৈন্যগণ তৈরি হচ্ছিলেন কিন্তু ২৯শে সফর বুধবার সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তথাপী তিনি সৈন্য বাহিনী পাঠিয়ে দিলেন।
২৯শে সফর সকালে অসুস্থ হলেন, ঐ দিনই বিকালে একটু সুস্থ হলেন, এতে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা খুশি হয়ে যাঁর যাঁর সামর্থ অনুযায়ী মহান আল্লাহ পাক উনার রাস্তায় দান-খয়রাত করলেন। ঐ দিন বিকালে আবার অসুস্থ হয়ে পড়লেন, এ অসুস্থতা পবিত্র ৯ই রবিউল আউয়াল শরীফ পর্যন্ত চললো। পবিত্র ৯ই রবিউল আউয়াল শরীফ অসুস্থতা আরো বৃদ্ধি পেল, ফলে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র মসজিদে যেতে পারেননি। এ সময় পবিত্র ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ পর্যন্ত মোট ১৬ কি ১৭ ওয়াক্ত নামায উনার ইমামতি করেন, হযরত আবু বকর ছিদ্দীক আলাইহিস সালাম। অতঃপর পবিত্র ১২ই রবিউল আউয়াল শরীফ ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীমি বা রোজ সোমবার শরীফ মহান আল্লাহ পাক উনার আহবানে সাড়া দিলেন এবং পর্দার অন্তড়ালে চলে গেলেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শরীর মুবারক ইয়াওমুছ ছুলাছায়ী বা মঙ্গলবার পর্যন্ত মাটির উপরেই ছিল। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পবিত্র রওজা শরীফ উনার মধ্যে রাখা হয়। ৬৩ বৎসর বয়স মুবারক-এ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ পাক উনার সান্নিধ্যে চলে যান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একটা আদেশ মুবারক অমান্য করে আরেকটা মান্য করা জায়িয নেই
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
একটা আদেশ মুবারক অমান্য করে আরেকটা মান্য করা জায়িয নেই
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৭)
১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র শবে বরাত উনার রোযা নিয়ে বিভ্রান্তি নিরসন
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছবি তোলা শক্ত হারাম, রয়েছে কঠিন শাস্তি
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১১)
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার দৃষ্টিতে লেবাস বা পোশাকের হুকুম-আহকাম (১১)
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র ঈমান বা আক্বায়িদ সম্পর্কিত পবিত্র কালিমা শরীফসমূহ
১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পবিত্র ছহীহ হাদীছ শরীফ দ্বারাই শবে বরাত প্রমাণিত (৪)
১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)