হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (পর্ব-২৯)
, ০৯ রমাদ্বান শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০১ হাদি ‘আশির, ১৩৯০ শামসী সন , ০১ এপ্রিল, ২০২৩ খ্রি:, ১৮ চৈত্র, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মহিলাদের পাতা
মহিলাদের জন্য গায়রে মাহরামদের সম্মুখে মুখমন্ডল বা চেহারাসহ সমস্ত শরীরই ঢেকে রাখা ফরয
يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا
অর্থ: আয় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার মহাসম্মানিতা আযওয়াজে মুতহ্হারাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে, মহাসম্মানিতা বানাত আলাইহিন্নাস উনাদেরকে এবং মু’মিনগণের আহলিয়াগণকে বলুন, উনারা যেন উনাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের মুখমন্ডলের উপর ঝুলিয়ে রাখেন। এতে উনাদেরকে চিনা সহজ হবে। ফলে উনাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। মহান আল্লাহ পাক তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (পবিত্র সূরা আহযাব শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৯)
উল্লেখিত আয়াত শরীফের মূল বিষয় হলো يدنين عليهن من جلابيبهن “উনারা যেন উনাদের মুখমন্ডলের উপর ‘জিলবাব’ جلباب চাদর বা পর্দা ঝুলিয়ে রাখেন। جلباب ‘জিলবাব’ আরবী শব্দ, যা বড় চাদরকে বলা হয়। আর ادناء ‘ইদনা’ অর্থ নিকটবর্তী ও পেঁচিয়ে রাখা। কিন্তু এরপর على ‘আলা’ শব্দ আসলে এর অর্থ হবে ارخاء ‘ইরখা’ অর্থাৎ উপর দিক হতে নিচের দিকে ঝুলিয়ে দেয়া। তাই আয়াত শরীফের স্পষ্ট অর্থ হবে, ‘মহিলাগণ যেন তাদের শরীরে পরিহিত চাদরটিকে ভালভাবে পরিধান করে এর একটি অংশ নিজের মুখমন্ডলের উপর ঝুলিয়ে দেয়।’ যাতে মুখমন্ডল অন্য পুরুষের দৃষ্টি গোচর না হয়। কারণ বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হলে, সমস্ত শরীর ঢেকে রাখার সাথে সাথে মুখমন্ডলও ঢেকে রাখা প্রত্যেক মু’মিনা ও মুসলিমা মহিলার জন্য ফরযে আইন।
নিম্নে এ আয়াত শরীফের হুকুম সম্পর্কিত আলোচনা বিশ্ববিখ্যাত নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থসমূহ থেকে উল্লেখ করা হলো।
“হযরত ইবনু সা’দ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ‘ত্ববাক্বাত’ নামক তা’রিখ গ্রন্থে হযরত আবূ মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে লিখেছেন। এ রকম হাদীছ শরীফ হযরত হাসান ও মুহম্মদ বিন কা’ব কুরযী রহমতুল্লাহি আলাইহিমা থেকেও বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত আযওয়াজে মুতহ্হারাত হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনারা যখন হাজত পূরণের জন্য রাতের বেলায় বের হতেন, তখন উনাদেরকেও মুনাফিকরা বিরক্ত করা শুরু করলো। উনারা এ ব্যাপারটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কাছে জানালেন। তাই, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সেই মুনাফিকদেরকে ডেকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন। তারা বললো, আমরা তো উনাদেরকে বাঁদী মনে করেছিলাম। আর এ প্রেক্ষিতে অত্র আয়াতে কারীমা অবতীর্ণ হয়। (আয় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার মহাসম্মানিতা আযওয়াজে মুতহ্হারাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে, সম্মানিতা বানাত আলাইহিন্নাস সালাম উনাদেরকে এবং মু’মিনগণের আহলিয়াগণকে বলুন, উনারা যেন উনাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের মুখমন্ডলের উপর ঝুলিয়ে রাখেন।) এখানে يدنين শব্দটি উহ্য لام ‘লাম’ এর সাথে امر ‘আমর’ এর শব্দ। অর্থাৎ ليدنين ‘অবশ্যই তারা যেন ঝুলিয়ে রাখে’। (তাদের মুখমন্ডলের উপর নিজেদের চাদরের কিয়দাংশ) جلابيب ‘জালাবীব’ শব্দটি جلباب ‘জিলবাব’ শব্দের جمع বা বহুবচন। ‘জিলবাব’ এমন চাদরকে বলে, যা মহিলারা কামিছ ও ওড়নার উপর সংযুক্ত করে পরিধান করে।
হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেছেন, “সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, পর্দার আয়াত শরীফ অবতীর্ণ হওয়ার পর এক রাতে সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি হাজত মুবারক পূরণের জন্য বাইরে গেলেন। তিনি ছিলেন সুস্বাস্থ্য মুবারকের অধিকারিণী। তাই উনাকে পর্দাবস্থায় থাকলেও চিনতে পারা যেত। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ‘যম আলাইহিস সালাম উনাকে দেখে বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ, আপনি আমাদের থেকে গোপন থাকতে পারেন নি, আমি আপনাকে চিনেছি। “সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম বলেন, সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি যখন ঘরে ফিরে আসলেন তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার হুজরা শরীফে অবস্থান মুবারক করছিলেন, তিনি খাবার খাচ্ছিলেন, তখন উনার নূরুল মাগফিরাহ বা হাত মুবারকে ছিল একটি হাড্ডি। সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছানিয়াহ আলাইহাস সালাম তিনি উনার কাছে প্রবেশ করে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আমার প্রয়োজন বশতঃ বাইরে বের হয়েছিলাম। আর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ‘যম আলাইহিস সালাম তিনি আমাকে এমন এমন কথা বলেছেন। “সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বাহ আলাইহাস সালাম বলেন, তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপর ওহী মুবারক অবতীর্ণ করলেন। ওহী মুবারক অবতীর্ণ শেষ হলো। আর উনার মহাপবিত্র নূরুল মাগফিরাহ মুবারকে (হাত মুবারকে) হাড্ডিটি তখনও ছিল। তিনি সেটি রেখে বললেন, আপনাদেরকে বিশেষ প্রয়োজন বশতঃ বাইরে বের হতে অনুমতি দেয়া হলো।” আমি বলি- বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার অর্থ হচ্ছে; আপনাদেরকে বড় চাদরে আবৃত হয়ে সমস্ত শরীর ঢেকে বের হতে অনুমতি দেয়া হয়েছে।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবূ উবাইদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনারা বলেন, মু’মিনগণের আহলিয়াগণকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, উনারা যেন উনাদের মাথা, মুখমন্ডল, সম্পূর্ণ শরীর চাদর দিয়ে ঢেকে বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে বের হন। তবে শুধু চোখ খোলা রাখা যাবে। যাতে পরিচয় করা যায় যে, উনারা স্বাধীনা।
(আত্ তাফসীরুল্ মাযহারী ৭ম জিল্দ ৩৮৩, ৩৮৪ পৃষ্ঠা, তাফসীরুল্ খাযিন, তাফসীরুল্ বাগবী ৫ম জিল্দ ২৭৬, ২৭৭ পৃষ্ঠা, বুখারী শরীফ, ফতহুল্ বারী, উমদাতুল্ ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী, তাইসীরুল্ বারী)
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথেই হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের বিষয় উল্লেখ থাকা উচিত
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক ছেড়ে দেয়া মানেই পথভ্রষ্ট হওয়া। নাউযুবিল্লাহ!
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
খছম বা ঝগড়া কু-স্বভাবটি পরিহার করা অপরিহার্য কর্তব্য
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে ৪ শ্রেণীর লোকদের জন্য ক্বিয়ামতের দিন সুপারিশ ওয়াজিব হবে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্যই ফরযে আইন হচ্ছে- যথাযথভাবে ৫ ওয়াক্ত নামায তারতীব অনুযায়ী যথাসময়ে আদায় করে নেয়া
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হুব্বে রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (১)
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
৩০ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)












