হিজাব বা পর্দা ফরযে আইন হওয়ার প্রমাণ ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ফতওয়া (পর্ব-৩৪)
, ০৬ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৭ ছানী ‘আশার, ১৩৯০ শামসী সন , ২৭ মে, ২০২৩ খ্রি:, ১৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) মহিলাদের পাতা
মহান আল্লাহ পাক উনার কালাম মুবারক: তোমরা কোন বিষয় প্রকাশ করো অথবা গোপন রাখ, মহান আল্লাহ পাক তিনি সকল বিষয় জ্ঞাত। হযরত উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম উনাদের জন্য কোন গুনাহ্ নাই উনাদের পিতা, পুত্র, ভাই, ভাতিজা, ভাগিনা, সাধারণ মহিলা এবং দাসীদের সাথে দেখা করার ব্যাপারে। তোমরা মহান আল্লাহ পাক উনাকে ভয় করো। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি সবকিছুর উপর দৃষ্টিবান। ” (বুখারী শরীফ কিতাবুত্ তাফসীর সূরাতুল্ আহযাব, ফতহুল্ বারী, উমদাতুল্ ক্বারী, ইরশাদুস্ সারী, শরহুল্ কিরমানী, তাইসীরুল্ বারী, মুসলিম শরীফ, শরহুন্ নববী, আল্ মুফহিম, ফতহুল্ মুলহিম, আহকামুল্ কুরআন লিল্ কুরতুবী, তাফসীরুত্ ত্ববারী, তাফসীরে ইবনে কাছীর, তাফসীরুল্ মাযহারী, তাফসীরুল্ খাযিন, তাফসীরুল্ বাগবী, তাফসীরে মাদারিকুত্ তানযীল, তাফসীরে রূহুল্ মায়ানী, তাফসীরে রূহুল বয়ান, তাফসীরুল্ মানার, তাফসীরুস্ সামরকন্দী, শাইখ যাদাহ, হাশিয়াতুল্ জামাল আলাল জালালাইন)
অত্র হাদীছ শরীফ এবং অনুরূপ অন্যান্য হাদীছ শরীফ থেকে জানা যায় যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বিশেষ প্রয়োজনে বাহিরে যেতে অনুমতি প্রদান করেছেন। আর বিনা প্রয়োজনে বাহিরে বের হওয়া হারাম ও নাজায়িয। ইলিম অর্জনের জন্য মহিলাদের বাইরে বের হওয়া জায়িয প্রত্যেক মুসলমান নর ও নারীর জন্য ফরয পরিমাণ ইলিম অর্জন করা ফরযে আইন। পবিত্র হাদীছ শরীফে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেছেন, প্রত্যেক মুসলমান নর ও নারীর জন্য ইলিম অর্জন করা ফরয। অপাত্রে ইলিম রাখা যেন শুকরের গলায় জহরত, মুক্তা এবং স্বর্ণ রাখা। ” (মিশকাত শরীফ কিতাবুল্ ইল্ম্ আল ফাছলুছ ছানী, মিরক্বাত, শরহুত্ ত্বীবী, আত্ তা’লীকুছ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল্ মানজীহ, ইবনু মাজাহ শরীফ, বাইহাক্বী ফী শুয়াবিল ঈমান)
পবিত্র হাদীছ শরীফে স্পষ্টভাবে ইলিম অর্জন করাকে ফরয বলা হয়েছে। আর এই ফরয ইলিম দু’প্রকার। যেমন, ইলমে শরীয়ত ও ইলমে মা’রিফত। অর্থাৎ ইলমে শরীয়ত অর্জন করা যেমনিভাবে একজন লোকের জন্য ফরয তেমনিভাবে ইলমে মা’রিফত বা তাছাওউফ অর্জন করাও ফরয বা ফরযে আইন। চাই পুরুষ হোক অথবা মহিলা হোক। এ বিষয়ের প্রতি নির্দেশ করে হাদীছ শরীফে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে,“হযরত হাসান বছরী রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, ইলিম দু’প্রকার। (এক) ক্বলবী ইলিম, যা উপকারী ইলিম। (দুই) জবানী ইলিম, যা মহান আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে আদম সন্তানের জন্য দলীল স্বরূপ। (মিশকাত শরীফ কিতাবুল ইল্ম্ আল্ ফাছলুছ ছালিছ, শরহুত্ ত্বীবী, মিরক্বাত, আত্ তা’লীকুছ ছবীহ, লুময়াত, আশয়াতুল্ লুময়াত, মুযাহিরে হক্ব, মিরয়াতুল্ মানাজীহ, সুনানুদ্ দারিমী)
অত্র পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইলমে শরীয়ত ও ইলমে মা’রিফত বা ইলমে তাছাওউফ উভয় প্রকার ইলিম-ই অর্জন করা ফরযে আইন। তাই ইলিম অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমান নারীর জন্য ফরয হওয়ায় উহা অর্জন করতে প্রয়োজনে বাড়ীর বাইরে যাওয়া জায়িয রয়েছে। তবে কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে।
শর্তগুলো হলো-
১. পূর্ণ পর্দার সাথে বের হতে হবে, ২. মুসাফিরী পথ হলে মাহরাম সাথে থাকতে হবে, ৩. যেখানে শিক্ষা করতে যাবে সেখানে পূর্ণ পর্দার ব্যবস্থা থাকতে হবে, ৪. শিক্ষাদানকারী মহিলা হতে হবে, ৫. পুরুষ মুয়াল্লিম বা শিক্ষাদানকারী হলে খাছ পর্দার সাথে অর্থাৎ পর্দার আড়াল থেকে শিক্ষা প্রদান করতে হবে এবং শিক্ষা নিতে হবে, ৬. মুয়াল্লিম বা শিক্ষাদানকারীগণকে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদায় পূর্ণ বিশ্বাসী হতে হবে, ৭. মহিলা শিক্ষিকার আমল শরীয়তের অনুকূলে হতে হবে, ৮. নিজ বাড়ীর ভিতরেই ছহীহ শিক্ষার ব্যবস্থা উপস্থিত না থাকলে, ৯. আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের দরবার শরীফ হলে, ১০. মুয়াল্লিমা বা শিক্ষিকা সকলকেই পূর্ণ পর্দানশীন হতে হবে।
সুতরাং, ইলমে ফিক্বাহ অর্জন করার জন্যে যেরুপ বাইরে বের হওয়া জায়িয; তদ্রুপ ইলমে তাছাওউফ অর্জন করার জন্যেও পীর-মাশায়েখ বা ওলীআল্লাহ্গণের দরবারে যাওয়া জায়িয এবং ফরযের অর্ন্তভুক্ত। তবে প্রত্যেক অবস্থাতেই শরয়ী পর্দা রক্ষা করা ফরযে আইন।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
তিন ধরনের লোক বেহেশতে প্রবেশ করবে না
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হযরত উম্মে সুরাইকা দাওসিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনারা বেমেছাল ফযীলত মুবারকের অধিকারী
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সর্বক্ষেত্রে নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে প্রাধান্য দিতে হবে
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সৃষ্টির শুরুতেই মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক উনার মধ্যে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি তওবাকারীকে পছন্দ করেন (৩)
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ক্বলবী যিকির জারী না থাকলে শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়
১৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দোযখে বেপর্দা হওয়া নারীদের শাস্তির বর্ণনা (১০)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
জামায়াতের জন্য মহিলাদের মসজিদে ও ঈদগাহে যাওয়া হারাম ও কুফরী (৪)
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্বোধন মুবারক করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদব-শরাফত বজায় রাখতে হবে
১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব-কর্তব্য
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












