হিজামা বা শিঙ্গা লাগানো খাছ সুন্নত মুবারক (৩)
, ৩০শে জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৫ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) সুন্নত মুবারক তা’লীম
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
হিজামা চিকিৎসা অধিক ফলদায়ক যার গুরুত্ব ও ফযীলত মুবারক ব্যাপক এবং চিকিৎসার মজুরী দেয়া-নেয়া উভয়টিই মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক:
হিজামার ফযীলত সম্বলিত বহু মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ রয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে কিছু মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উল্লেখ করা হলো-
عَنْ حَضْرَتْ حُمَيْدٍ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ قَالَ سُئِلَ حَضْرَتْ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنْ كَسْبِ الْحَجَّامِ فَقَالَ احْتَجَمَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَجَمَهٗ أَبُوْ طَيْبَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ فَأَمَرَ لَهُ بِصَاعَيْنِ مِنْ طَعَامٍ وَكَلَّمَ أَهْلَهٗ فَوَضَعُوْا عَنْهُ مِنْ خَرَاجِهٖ وَقَالَ إِنَّ أَفْضَلَ مَا تَدَاوَيْتُمْ بِهِ الْحِجَامَةُ أَوْ هُوَ مِنْ أَمْثَلِ دَوَائِكُمْ.
অর্থ: হযরত হুমাইদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আনাস বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট হিজামার উপার্জন সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করা হলে তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হিজামা লাগিয়েছেন। হযরত আবূ তায়বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে হিজামা লাগিয়েছেন। অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি হযরত আবূ তায়বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে দুই ছা‘ (প্রায় পৌনে ৭ কেজি) খাদ্যদ্রব্য দেওয়ার নির্দেশ মুবারক দেন এবং উনার মালিকদের সাথে আলোচনা করেন। এতে উনারা উনার উপর ধার্যকৃত কর কমিয়ে দেন। তিনি আরও ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা যেসব পদ্ধতিতে চিকিৎসা করাও হিজামা সেগুলোর মধ্যে উত্তম ব্যবস্থা অথবা (ইরশাদ মুবরক করেছেন) এটি তোমাদের ঔষধের মধ্যে অধিক ফলদায়ক। (মুসলিম শরীফ- মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং: ৩৯৩০)
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَ بْنِ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ حَدَّثَهُ أَنَّ حَضْرَتْ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَادَ حَضْرَتْ الْمُقَنَّعَ رَحْمَةُ اللهِ عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ لاَ أَبْرَحُ حَتَّى تَحْتَجِمَ فَإِنِّىْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ إِنَّ فِيْهِ شِفَاءً.
অর্থ: হযরত আছিম বিন উমর বিন ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অসুস্থ হযরত মুক্বন্না’ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে দেখতে যান। এরপর তিনি বলেন, আমি এখান থেকে সরব না; যতক্ষণ না আপনি শিঙ্গা লাগাবেন। কেননা আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি, নিশ্চয়ই এর (হিজামার) মধ্যে নিরাময় রয়েছে। (বুখারী শরীফ; মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং: ৫৬৯৭, মুসলিম শরীফ; মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং: ২২০৫)
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, ‘রোগমুক্তি তিনটি জিনিসের মধ্যে নিহিত রয়েছে। শিঙ্গা লাগানো, মধু পান করা এবং আগুন দিয়ে গরম দাগা দেয়ার মধ্যে। তবে আমি আমার উম্মতদেরকে আগুন দিয়ে গরম দাগা দিতে নিষেধ করি। ’
এ প্রসঙ্গে মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَاصِمِ بْنِ عُمَرَ بْنِ قَتَادَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ جَاءَنَا حَضْرَتْ جَابِرُ بْنُ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ فِي أَهْلِنَا وَرَجُلٌ يَشْتَكِي خُرَاجًا بِهٖ أَوْ جِرَاحًا فَقَالَ مَا تَشْتَكِي قَالَ خُرَاجٌ بِي قَدْ شَقَّ عَلَيَّ فَقَالَ يَا غُلَامُ ائْتِنِي بِحَجَّامٍ فَقَالَ لَهٗ مَا تَصْنَعُ بِالْحَجَّامِ يَا أَبَا عَبْدِ اللهِ قَالَ أُرِيدُ أَنْ أُعَلِّقَ فِيهِ مِحْجَمًا قَالَ وَاللهِ إِنَّ الذُّبَابَ لَيُصِيبُنِي أَوْ يُصِيبُنِي الثَّوْبُ فَيُؤْذِينِي وَيَشُقُّ عَلَيَّ فَلَمَّا رَأَى تَبَرُّمَهٗ مِنْ ذَلِكَ قَالَ إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنْ كَانَ فِي شَيْءٍ مِنْ أَدْوِيَتِكُمْ خَيْرٌ فَفِي شَرْطَةِ مِحْجَمٍ أَوْ شَرْبَةٍ مِنْ عَسَلٍ أَوْ لَذْعَةٍ بِنَارٍ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا أُحِبُّ أَنْ أَكْتَوِيَ قَالَ فَجَاءَ بِحَجَّامٍ فَشَرَطَهٗ فَذَهَبَ عَنْهُ مَا يَجِدُ.
অর্থ: হযরত আছিম বিন উমর বিন ক্বাতাদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত জাবির বিন আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আমাদের বাড়ীতে আসেন। বাড়ির একজন লোক উনার নিকট উনার ক্ষত রোগের কথা বললেন। হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কি সমস্যা? তিনি বললেন, ক্ষত হয়েছে যা আমার কাছে অসহনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, হে বৎস! আমার কাছে একজন হিজামাকারী ডেকে নিয়ে আসুন। তিনি বললেন, হে আবূ আব্দুল্লাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! হিজামাকারীকে দিয়ে কি করবেন? তিনি বললেন, ক্ষতস্থানে শিঙ্গা লাগাতে চাই। তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার শপথ! মাছি আমাকে উত্ত্যক্ত করবে কিংবা (ক্ষতস্থানে) কাপড় লেগে গেলে আমার কষ্ট হবে। হিজামা করাতে উনার অসম্মতি দেখে হযরত জাবির রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, আমি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইরশাদ মুবারক করতে শুনেছি, ‘যদি তোমাদের কোন ঔষধে কল্যাণ থেকে থাকে তাহলে তা আছে (১) হিজামা করানো (২) মধু পান করা এবং (৩) আগুনের টুকরা দিয়ে দাগা দেয়ার মাঝে। ’ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন, আমি আগুন দিয়ে দাগা লাগানো পছন্দ করি না। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি হিজামাকারীকে আনালেন। অতঃপর সে উনাকে হিজামা করল। এতেই তিনি আরোগ্য লাভ করলেন। সুবহানাল্লাহ! (মুসলিম শরীফ; মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং: ৫৫৫৫)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত খিদমত মুবারক-এ পবিত্র মি’রাজ শরীফ উনার রজনীতে উম্মতকে হিজামা বা শিঙ্গা লাগানোর বিষয়ে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের আবেদন:
মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ إِبْنِ مَسْعُودٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ حَدَّثَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ لَيْلَةِ أُسْرِىَ بِهِ أَنَّهٗ لَمْ يَمُرَّ عَلَى مَلإٍ مِنَ الْمَلاَئِكَةِ إِلاَّ أَمَرُوْهُ أَنْ مُرْ أُمَّتَكَ بِالْحِجَامَةِ.
অর্থ: হযরত ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পবিত্র মি‘রাজ শরীফ উনার রাত সম্পর্কে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, এই রাতে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের যে সম্প্রদায়ের সম্মুখ দিয়ে তিনি যাচ্ছিলেন উনারা সকলেই আবেদন করে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার উম্মতকে হিজামার মহাসম্মানিত নির্দেশ মুবারক দিন’। (সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ- মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং:৩৪৭৭, সুনানে তিরমিযী শরীফ- মহাসম্মানিত মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ নং: ২০৫২)
-আল্লামা মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
সর্বাবস্থায় মহাসম্মানিত সুন্নত মুবারক অনুযায়ী আমল করতে হবে। এটাই সম্মানিত শরীয়ত উনার হুকুম।
১৯ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী খাবার ‘পনির’
১৯ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক (২)
১৮ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সকল প্রকার সুন্নতী সামগ্রী সংগ্রহ করুন সুন্নতী কাঠের প্লেট।
১৮ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ইমামাহ বা পাগড়ী পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক (১)
১৭ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী লেবাছ “পাগড়ী
১৭ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পাগড়ীর উপর অথবা শুধু টুপির উপর সাদা রুমাল পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক (২)
১৬ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী জয়তুনের তেল
১৬ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পাগড়ীর উপর অথবা শুধু টুপির উপর সাদা রুমাল পরিধান করা খাছ সুন্নত মুবারক (১)
১৫ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন সুন্নতী ফল জয়তুন
১৫ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মহাসম্মানিত সুন্নতী খাদ্য খেজুর এবং তার উপকারিতা
১৪ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
‘আন্তর্জাতিক পবিত্র সুন্নত মুবারক প্রচার কেন্দ্র’ থেকে সংগ্রহ করুন খাছ সুন্নতী কাঠের লবণদানী
১৪ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)