‘ভারতের পাহাড়ী এলাকাগুলো সেনাবাহিনীতে সয়লাব, অথচ দেশে সেনা হটাও স্লোগান’
, ১১ই রবিউছ ছানী শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০৫ খমীছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৪ অক্টোবর, ২০২৫ খ্রি:, ২০ আশ্বিন, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) বিদেশের খবর
আল ইহসান ডেস্ক:
ভারতের প্রতিটি পাহাড়ে সেনার দাপট চলছে। কাশ্মীর, লাদাখ, নাগাল্যান্ড, আসাম কিংবা মণিপুর- সব জায়গাতেই সেনা ক্যাম্প, বাঙ্কার আর পাহাড়ের প্রতিটি গিরিপথে চেকপোস্ট চোখে পড়বে। শুধু কাশ্মীরেই সাত লাখ সেনা অবস্থান করছে। কেবল ভারত নয়, চীন, পাকিস্তান, নেপালেও রয়েছে সেনার উপস্থিতি।
অথচ বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা উপস্থিতি নিয়েই বারবার তোলা হচ্ছে প্রশ্ন। এখানে কয়েকটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় কিছু পাহাড়ি নেতা প্রতিনিয়ত ‘সেনা হটাও’ সেøাগান দিচ্ছে। এতে যোগ দিচ্ছে দেশের তথাকথিত বামপন্থি ও সুশীল সমাজের কিছু অংশও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারত নিজের পাহাড়ে সেনা নামিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ দমনের নামে রক্ত ঝরাতে দ্বিধা করে না। কাশ্মীরে প্রতিদিন গড়ে সাত-আটজন নিহত হচ্ছে সেনা অভিযানে। নাগাল্যান্ডে নাগা বিদ্রোহ দমন করতে অন্তত ৬০ বছর ধরে সেনা মোতায়েন রয়েছে। অরুণাচল প্রদেশে চীনের ভয়ের অজুহাতে প্রতিটি পাহাড়ি এলাকায় সেনাঘাঁটি তৈরি করেছে ভারত।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছে, ভারত নিজের নিরাপত্তাকে সামনে রেখে পাহাড় নিয়ন্ত্রণে সেনাদের ব্যবহার করছে; কিন্তু বাংলাদেশের পাহাড়ে সেনা মোতায়েন দেখলেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে মানবাধিকার আর গণতন্ত্রের বুলি আওড়ায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহীদুজ্জামান বলেন, ভারতের আচরণ দ্বিমুখী। নিজেদের পাহাড়ে সেনা দিয়ে দমন নীতি চালায়, অথচ বাংলাদেশের পাহাড়ে সেনা উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এটা কেবল রাজনৈতিক নয়, কূটনৈতিক চক্রান্তও। বাংলাদেশকে দুর্বল করার জন্য তারা পাহাড়কে অস্থিতিশীল রাখতে চায়।
১৯৯৭ সালের পার্বত্য শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ে সেনাক্যাম্পের সংখ্যা সাড়ে চারশ থেকে কমে দাঁড়ায় ২৩২-এ। এরপর থেকেই দেখা যায় ইউপিডিএফসহ নানা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। চাঁদাবাজি, অপহরণ, খুন, সম্ভ্রমহরণের নাটক সাজানোÑসবকিছুই বেড়ে যায়। তবুও প্রত্যেক ঘটনার পরই একটি গোষ্ঠী ‘সেনা হটাও’ সেøাগান তোলে।
নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি, এর পেছনে ভারত ও আমেরিকার প্রত্যক্ষ মদদ আছে। কারণ, ইউপিডিএফের অন্তত ছয়টি প্রশিক্ষণ ক্যাম্প রয়েছে ভারতের মিজোরামে। সেখান থেকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে তারা বাংলাদেশের ভেতরে হামলা চালাচ্ছে।
পাহাড়ে দায়িত্ব পালন করা এক ব্রিগেড কমান্ডার বলেন, আমাদের হাতে সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে। ইউপিডিএফ ভারতের মিজোরাম থেকে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ পাচ্ছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় তারা প্রতিনিয়ত অনুপ্রবেশ করছে। সেনাক্যাম্প ছাড়া এসব রোধ করা সম্ভব নয়। আমাদের অন্তত আড়াইশ নতুন ক্যাম্প স্থাপন জরুরি।
খাগড়াছড়ি জোনের এক লে. কর্নেল বলেন, আজ মিথ্যা সম্ভ্রমহরণের নাটক সাজানো হলো, কাল হয়তো আরো বড় ষড়যন্ত্র করা হবে। প্রতিটি ঘটনায় ‘সেনা হটাও’ সেøাগান তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, সেনা না থাকলে পাহাড়ের আইনশৃঙ্খলা কারা দেখবে?
একটি শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের কয়েকটি এজেন্সি পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলোকে সরাসরি অর্থায়ন করছে। অস্ত্র পাচার হয় মিজোরাম ও ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ভেতরে সেনা উপস্থিতি কমানোর জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে মানবাধিকার ইস্যু তোলা হচ্ছে, যাতে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হয়।
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর এমদাদ বলেন, বাংলাদেশের ভৌগোলিক বাস্তবতায় পাহাড় নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন। প্রতিটি পাহাড়ি গ্রুপ ভিন্ন মতাদর্শে চলে। সেনাক্যাম্প না থাকলে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। ভারতে যেমন পাহাড়ে সেনা ছাড়া কিছুই কল্পনা করা যায় না, তেমনি বাংলাদেশেও সেনা উপস্থিতি ছাড়া স্থায়ী শান্তি সম্ভব নয়।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহীদুজ্জামান বলেন, কেউ কেউ সেনা হটাও সেøাগান তোলে; কিন্তু তারা বলে না সেনা ছাড়া পাহাড়ে চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ কে থামাবে? এর পেছনে আন্তর্জাতিক রাজনীতি আছে। ভারত ও আমেরিকার কৌশল হলো, বাংলাদেশের পাহাড় অস্থিতিশীল রাখা, যাতে চট্টগ্রাম বন্দর ও পাবর্ত্য চট্টগ্রাম এলাকা তাদের দখলে নেয়া যায়।
ভারত দাবি করে, তার পাহাড়ে সেনা ছাড়া বিচ্ছিন্নতাবাদ দমন সম্ভব নয়। অথচ বাংলাদেশের পাহাড়ে সেনা রাখার বিষয়টিকে তারা আক্রমণাত্মকভাবে তুলে ধরে। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা ভারতের কূটনৈতিক দ্বিচারিতা।
ড. শাহীদুজ্জামান বলেন, ভারত প্রতিদিন কাশ্মীরে সেনা দিয়ে দমননীতি চালাচ্ছে। নাগাল্যান্ড ও মণিপুরে সেনাশাসন চলছে। কিন্তু বাংলাদেশে সেনা রাখলেই তারা মানবাধিকার খুঁজে বেড়ায়। এটা নিছক ভ-ামি। ভারতের সুরে দেশের কিছু দেশদ্রোহী ‘আমেরিকার দালাল’ সেনা হটাও সেøাগান তোলে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
বিশ্বের প্রায় দেশেই পাহাড়ি অঞ্চলে সেনার স্থায়ী উপস্থিতি আছে:
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- শুধু ভারত নয়, চীন, পাকিস্তান ও নেপালেও পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যাপক সেনা এবং নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য ও হিমালয় অঞ্চলে লাদাখ, কাশ্মীর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, ত্রিপুরাসহ নানা পাহাড়ি এলাকায় নিয়মিতভাবে সেনাঘাঁটি, চেকপোস্ট ও মাউন্টেন ইউনিট রয়েছে। ভারতের যুক্তি হচ্ছে সীমান্ত নিরাপত্তা, বিচ্ছিন্নতাবাদ দমন ও অবৈধ অস্ত্রের চালান রোধ করতে এসব বাহিনী অপরিহার্য।
চীনের ক্ষেত্রেও তিব্বত ও শিনজিয়াং সীমান্তবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলে ব্যাপক সামরিক উপস্থিতি আছে। বর্ডার কন্ট্রোল, সীমান্তভূমি সংরক্ষণ এবং সম্ভাব্য বিদ্রোহ বা বিদেশি অনুপ্রবেশ রোধে চীন সেখানে শক্তিশালী সেনা রখেছে।
পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চল গিলগিত-বালতিস্তান ও পাহাড়ি পথে সীমান্তীয় নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অস্থিরতা মোকাবিলায় স্থায়ী এবং প্যারামিলিটারি ইউনিট মোতায়েন রয়েছে।
নেপাল যদিও সৈন্য সংখ্যায় বড় আকারে নয়, তবুও হিমালয় অঞ্চলে সশস্ত্র পুলিশ ও সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটন ও অনুপ্রবেশ রোধে সচেষ্ট। সার্বিকভাবে দেখা যায়, বিশ্বের বহু পাহাড়ি দেশে সেনা মোতায়েনের প্রধান কারণগুলোয় প্রবলভাবে মিল আছে।
অধ্যাপক ড. শাহীদুজ্জামান বলেন, শুধু আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশে পাহাড় ও সীমান্তবর্তী এলাকায় সুনির্দিষ্ট কৌশলগত কারণে সেনাবাহিনী রাখা হয়। এটি নিরাপত্তা ও শান্তিরক্ষার একটি অংশ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
৫০ দিনে ৬০০ বার চুক্তি লঙ্ঘন করেছে ইসরাইল
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
‘ভারত সমর্থিত’ সাত সন্ত্রাসীকে হত্যার দাবি পাকিস্তানের
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ভারতে মুসলিম সহযাত্রীদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে আতঙ্ক ছড়ালো এক হিন্দুত্ববাদী
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয়তার সর্বনিম্ন পর্যায়ে ট্রাম্প
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দক্ষিণ খোরাসান: সুপ্ত সম্পদের ভা-ার ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
থাইল্যান্ডে ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৭৭
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সন্ত্রাসী সেনাবাহিনীর ‘জনবল সংকট’ থেকে সৃষ্টি হচ্ছে নানামুখী সংকট
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পাকিস্তানের দুটি শহরে ১৪৪ ধারা জারি
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পাকিস্তানের দুটি শহরে ১৪৪ ধারা জারি
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
অবৈধ অভিবাসীদের পোশাক ও মুখ তল্লাশি করতে পারবে যুক্তরাজ্যের পুলিশ
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইমরান খানের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা জানালো তার ছেলে
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইরানের স্বর্ণের বিশাল মজুদ আবিষ্কার
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)












