পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের আলোকে সম্মানিত যাকাত উনার আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৩৩)
, ১১ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ০৫ তাসি, ১৩৯০ শামসী সন, ৩রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রি:, ২০ই মাঘ, ১৪২৯ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
এ প্রসঙ্গে একটি ওয়াকিয়া বর্ণিত রয়েছে।
সালাবা ইবনে হাতিবের ওয়াকিয়া : পবিত্র সূরা তওবা শরীফ উনার ১০৩ নং আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পর নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ২ জন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনাদেরকে ‘সালিম গোত্রে’ এবং ‘জোহাইনা গোত্রে’ যাকাতের হুকুম-আহকাম লিখে পাঠালেন। সালাবা ইবনে হাতিবের কাছে এবং আরেক জন ‘সালিম গোত্রের’ ব্যক্তির কাছে। যিনি অনেক সম্পদশালী ছিলেন, উনার অনেক গরু-ছাগল, দুম্বা-বকরী ছিলো।
দুইজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা উনারা প্রথমে সালাবা ইবনে হাতিবের নিকট গেলেন। সেখানে গিয়ে তাকে যখন যাকাতের কথা বললেন এবং আয়াত শরীফ বললেন এবং সেই কাগজ মুবারক দেখালেন যেখানে কিভাবে যাকাত দিতে হবে দুম্বা, ভেড়া, মেষ ইত্যাদির। এটা দেখে সে বললো- আপনার বলেন কি? এটা দেখি কাফিরদের মতো ‘জিযিয়া কর’। নাঊযুবিল্লাহ! এটা কেমন কথা! মুসলমানদের কাছ থেকে এটা কেন নেয়া হবে? এটা বলে সে অনেক চু-চেরা করলো। শেষে বললো আপনারা যেখানে যাওয়ার যান। যাওয়ার সময় দেখা করে যাবেন।
উনারা যখন দ্বিতীয় ব্যক্তি ‘সালিম গোত্রের” নিকট গেলেন সেই ব্যক্তি অত্যন্ত খুশি হলেন। খুশি হয়ে উনার যতটুকু যাকাত দেয়ার কথা ছিলো তার চেয়ে বেশি দিতে চাইলেন। হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা বললেন, আমাদেরকে যেভাবে আদেশ মুবারক করা হয়েছে আমরাতো সেভাবেই নিবো। কিন্তু আপনি তো বেশি দিচ্ছেন। সেই ব্যক্তি বললেন, আমার তো ইচ্ছে করছে আরো বেশি দেয়ার জন্য। উনারা বললেন আমরা এটা কিভাবে নিবো? তাহলে আপনি আমাদের সাথে চলুন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে বিষয়টি জানাতে হবে। ওই ব্যক্তি সমস্ত উত্তম উত্তম দুম্বা, বকরী, ভেড়া ইত্যাদি দিলেন। ফেরার পথে সালাবার নিকট আবার গেলেন। সালাবা বললো, কই আপনাদের কাগজটি আমাকে দেখান। কাগজটি নিয়ে সে আবারও চু-চেরা করলো। বললো আচ্ছা! কি দিতে হবে, না হবে সেটা আমি চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিবো। নাঊযুবিল্লাহ! সে বার বার বলতে লাগলো এটা জিযিয়া করের মতো হয়ে গেলো! নাঊযুবিল্লাহ!
এটা মুসলমানদের কাছ থেকে নেয়া ঠিক হবে না। নাঊযুবিল্লাহ! তখন ওই দুই ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা এবং আরেক ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার যাকাতসহ ফিরে আসলেন। যখন উনারা দরবারে নববী শরীফ প্রবেশ করলেন, প্রবেশ করা মাত্রই নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, আফসোস! সালাবার জন্য। আর যিনি দ্বিতীয় ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনি তো অনেক বেশি বেশি দিয়েছেন যাকাত। তিনি এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ইত্যাদি ইত্যাদি নিয়ে এসেছি। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, ঠিক আছে বেশি দিলে গ্রহণ করা হবে। যেহেতু আপনি খুশি হয়ে দিচ্ছেন। আর সালাবার জন্য আফসুস। পরবর্তিতে এই আমলের জন্য পবিত্র আয়াত শরীফ নাযিল হলো-
وَمِنْهُم مَّنْ عَاهَدَ اللهَ لَئِنْ اٰتَانَا مِن فَضْلِهِ لَنَصَّدَّقَنَّ وَلَنَكُوْنَنَّ مِنَ الصَّالِـحِيْنَ. فَلَمَّا اٰتَاهُمْ مِّنْ فَضْلِهٖ بَـخِلُوْا بِهٖ وَتَوَلَّوْا وَّهُمْ مُّعْرِضُوْنَ. فَأَعْقَبَهُمْ نِفَاقًا فـِيْ قُلُوْبِـهِمْ اِلٰى يَوْمِ يَلْقَوْنَهٗ بِـمَآ اَخْلَفُوا اللهَ مَا وَعَدُوْهُ وَبِـمَا كَانُوْا يَكْذِبُوْنَ.
অর্থ : “আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট ওয়াদা করেছিলে, মহান আল্লাহ পাক তিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদেরকে দান করলে আমরা অবশ্যই ছদক্বা দিবো এবং অবশ্যই আমরা সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হবো। অতঃপর যখন তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহের মাধ্যমে দান করা হলো, তখন তাতে বখীলতা করেছে এবং কৃত ওয়াদা থেকে ফিরে গেছে এবং অস্বীকার করেছে। তারপর এরই পরিণতিতে তাদের অন্তরে নিফাকী (কপটতা) স্থান করে নিয়েছে সেদিন পর্যন্ত, যেদিন তারা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে গিয়ে মিলিত হবে। তা এজন্যে যে, তারা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে কৃত ওয়াদা লংঘন করেছিল এবং এজন্যে যে, তারা মিথ্যা কথা বলতো।” (পবিত্র সূরা তওবা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৭৫-৭৭)
এই আয়াত শরীফ যখন নাযিল করা হলো তখন মসজিদে নববী শরীফ-এ সালাবার এক আত্মীয় ছিলো। সে তা শুনতে পেল। সে শুনে তাড়াতাড়ি সালাবার কাছে গেল। গিয়ে বললো তুমি কি করেছো। তোমার উপরতো আয়াত শরীফ নাযিল হয়েছে। তোমার এই কুফরী আর নেফাকীর উপর। তুমি তাড়াতাড়ি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দরবার শরীফ গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করো। যাকাত দাও। যখন তাকে বলা হলো তখন সে বুঝতে পারলো। সে তার সবকিছু নিয়ে আসলো। নিয়ে এসে বললো- ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি দয়া করে আমার যাকাতগুলো কবুল করুন।
নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করলেন, তোমার এই যাকাত, এই টাকা পয়সা নেয়ার জন্য মহান আল্লাহ পাক তিনি নিষেধ করেছেন। তোমার যাকাত নেয়া যাবেনা। তখন সে ব্যক্তি তার মাথায় ধুলা-বালি নিক্ষেপ করতে করতে চলে গেলো।
পরবর্তীতে সে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীকে আকবর আলাইহিস সালাম উনার কাছে যাকাত নিয়ে আসলে তিনিও তার যাকাত গ্রহণ করেননি। তিনি বলেছিলেন, স্বয়ং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তোমার যাকাত গ্রহণ করেননি তাহলে আমি কিভাবে গ্রহণ করবো। তারপর যথাক্রমে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূকে আ’যম আলাইহিস সালাম এবং সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাদের খিলাফতকালেও সে যাকাত নিয়ে গেলে উনারাও তার যাকাত গ্রহণ করেননি। সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার খিলাফতকালেই তার মৃত্যু হয়।” নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ! নাঊযুবিল্লাহ!
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
ত্বাহারাতের ইস্তিব্রা ও ইস্তিন্ক্বার আহকাম
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ (৭)
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সম্মানিত হাম্বলী মাযহাব উনার প্রতিষ্ঠাতা ও ইমাম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক (৩)
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
“আত তাক্বউইমুশ শামসী”একটি নতুন সৌর সন (২)
২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
আসমাউর রিজাল, জারাহ ওয়াত তা’দীল, উছুলে হাদীছ শরীফ উনার অপব্যাখ্যা করে অসংখ্য ছহীহ হাদীছ শরীফ উনাদেরকে জাল বলছে ওহাবী সালাফীরা (৬)
২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছাহিবু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, আস সাফফাহ, আল জাব্বারিউল আউওয়াল, আল ক্বউইউল আউওয়াল, হাবীবুল্লাহ, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মাওলানা মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওয়াজ শরীফ (৫)
২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হক্কানী-রব্বানী আলিম তথা ওলীআল্লাহ উনাদের সাথে তায়াল্লুক বা সম্পর্ক রাখা পরকালে নাযাত লাভের অন্যতম উছীলা
২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হযরত কা’ব বিন মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার একটি ঈমানদীপ্ত পরীক্ষা
২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সারাবিশ্বে একই দিনে ঈদ পালন ও রোযা শুরু করার কথা বলার উদ্দেশ্য পবিত্র ঈদ ও পবিত্র রোযাকে নষ্ট করা, যা মূলত মুনাফিকদের একটি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত (৩০)
২৫ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আফদ্বালুল আউলিয়া, ইমামে রব্বানী, গাউছে সামদানী, নূরে মুকাররম, বদরুদ্দীন হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রতি সুসংবাদ
২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
কাইয়্যুমে আউওয়াল হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফাযায়িল-ফযীলত ও সংক্ষিপ্ত সাওয়ানেহ উমরী মুবারক
২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাক্বাম মুবারক
২৪ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)