ইতিহাস
আফগানিস্তানেও উগ্রতাবাদী ওহাবী-সালাফীদের অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা
, ২৬শে জুমাদাল ঊলা শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০১ সাবি’, ১৩৯২ শামসী সন , ২৯ নভেম্বর, ২০২৪ খ্রি:, ১৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) ইতিহাস
আফগান সাধারণ মুসলিম সমাজ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে অনেকে অজ্ঞতার কারণে হোক বা ইচ্ছাকৃত বিভেদ সৃষ্টির লক্ষে হোক তাদেরকে ‘কট্টরপন্থী’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকে। অর্থাৎ আফগান সমাজ তাদের মতে ভিন্ন মতাদর্শীদের প্রতি অসহনশীল একটি সমাজ। কিন্তু বাস্তবতা আসলে কি?
সর্বপ্রথম আমাদের জেনে রাখতে হবে যে, মাওলানা রূমী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিচরণস্থল আফগানিস্তান। দেশটি আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের অনুসারী; বিশুদ্ধ তাওহীদের দেশ যা শরীয়ত ও তরীকতের সকল দিক বাস্তবায়িত করছে।
দেশটির অধিবাসীদের প্রায় ৯০ শতাংশ বা তার বেশি মাযহাবগত হানাফী, আক্বীদাগত মাতুরিদি এবং তাছাউফগত নকশবন্দিয়ায়ে মুজাদ্দিদিয়া তরিকার অনুসারী; যা আমাদের এই উপমহাদেশের জমহুর মুসলিমদের ন্যায়।
সুদীর্ঘ সময় ধরে আফগানিস্তান আহনাফ ও আহলুল্লাহগণের সুদৃঢ় একটি কেল্লা হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে, যার নমুনা ইতিহাসে বিরল। আর এই সুদীর্ঘ ইতিহাসে সেখানে আক্বীদা নিয়ে ফিতনা-ফাসাদ ও কোন্দলের কোন নমুনা পাওয়া যায় না।
মূলত ফাসাদাত শুরু হয় রুশ দখলদারিত্বের পর যখন সেখানে আরব থেকে একটি বড় সংখ্যক ওহাবী-সালাফী উগ্রতাবাদী তাদের মতাদর্শ নিয়ে অনুপ্রবেশের মোক্ষম সময় মনে করে। এবং তারা ‘যোদ্ধা ছদ্মবেশে’ দেশটিতে অনুপ্রবেশ করে। মূলতঃ তাদের আগমন ছিল আফগানিস্তানের ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় অধ্যায় যার কুফল দীর্ঘদিন ধরে দেশটি ভোগ করেছে।
আরবীয় ওহাবী-সালাফীগুলো আফগানিস্তানের পবিত্র ভূমিতে আসার পর তাদের চিরাচরিত ফিতনা সেখানে শুরু করে। যেহেতু তারা তাদের মতাদর্শ ব্যতীত বাকি মুসলিমদের ‘বিদয়াতী’ এমনকি কাফির-মুশরিক বলে অজ্ঞতাসূলভ আচরণ করে থাকে; আফগানিস্তানে আগমনের পর তার ব্যতিক্রম হলো না। তারা সেখানে আফগান মুসলিমদের মাজার পূজারী, বিদয়াতী, মুশরিকীনসহ নানান ভাষায় আক্রমণ করতে লাগলো এবং আক্বীদার লড়াইয়ের জন্ম দেয়। কিন্তু আফগানিস্তান হলো উলামাদের পদধূলি বিধৌত দেশ। তাই তারা সেখানে তেমন সুবিধা করে উঠতে পারেনি।
বর্তমান আফগানিস্তান সরকার দ্বারা প্রচারিত মাসিক আরবী ম্যাগাজিন আস সুমূদের মধ্যে আরব যোদ্ধা যিনি রুশ বিরোধী যুদ্ধে আফগান যোদ্ধাদের সাথে লড়াই করেন এবং বর্তমান সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখেন সেই আবুল ওয়ালীদ লেখেন-
وكان المسؤول عنها هم العرب أنفسهم خاصة الشباب السلفي الوهابي من السعودية ومصر وغيرها. وكان ذلك الطابع الأغلب للشباب في الجبهات، فحدثت بينهم وبين الأفغان “صدامات عقائدية” الذين لم يكونوا غير شعب من “القبوريين الأحناف المشركين” في نظر هؤلاء الشباب
অর্থ: আর উহার (সেই ফিতনার) জন্য আরবরাই দায়ী ছিল, বিশেষ করে সৌদি, মিশর প্রভৃতি দেশ হতে আগত সালাফী ওহাবী যুবকরা। আর তা ছিল (আরব) ফ্রন্টসমূহের অধিকাংশ যুবকের চরিত্র। ফলে তাদের সাথে ও আফগানদের মধ্যে যারা ঐ সকল যুবকের নিকট ‘মাযার পূজারী হানাফী মুশরিক’ হিসেবেই পরিচিত ছিল তাদের আক্বীদার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। (মাজাল্লাতুস সুমূদ (২২ জুমাদাল উলা ১৪৪২ হিজরী), প্রবন্ধ: حقا-/ني : العالم الفقيه والمجا /-هد المجدد , লেখক : আবুল ওয়ালীদ, পর্ব ২৮)
উল্লেখ থাকা প্রয়োজন, আবুল ওয়ালীদ আরবীয় প্রথম যুগের রুশ বিরোধী যোদ্ধা হলেও তিনি তাকফিরী ছিলেন না, তিনি ছিলেন মিশরীয় শাফেয়ী। তিনি বলেন ১৯৮৬ সন হতে তাকফিরীদের এহেন কর্মকা- তিনি দেখে আসছেন।
তথাকথিত ছহীহ আক্বীদার নামে এ সকল আজহালুল জুহালা তাকফিরীদের ফিতনা ও দ্বীন সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা, দ্বীনের অপব্যাখ্যা আফগান সমাজকে ক্ষেপিয়ে তোলে।
তাকফিরীদের আক্বীদা নিয়ে অপব্যখ্যা নিয়ে যথেষ্ট কঠোর ছিলেন স্থানীয় ওলামায়ে কেরাম। তারা তাদের বিভ্রান্তিকর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ব্যাপক লেখালেখি করতে থাকেন।
পরবর্তীতে ২০০১ এর ঘটনার পর ওইসব ওহাবীদের বেশিরভাগ আফগান ছেড়ে চলে যায়, কিন্তু কিছু ওহাবী-সালাফীবাদের বীজ রেখে যায়। পরবর্তীতে তা বিকশিত হয়। বিশেষ করে যখন দায়েশী ফিতনা শুরু হয়। তখন স্থানীয় সামরিক অভিযান চালিয়ে তাদের দমন করে, পাশাপাশি এই নির্দিষ্ট মতাদর্শের বিরুদ্ধে ইলমী অভিযান শুরু করেন, যা আজও চলমান।
ওহাবী-সালাফীবাদের উগ্রতা কতদূর পৌঁছে গিয়েছিলো তা কতিপয় মহান উলামাদের শাহাদাত প্রমাণ বহন করে যাদের দোষ ছিল তারা ওহাবী-সালাফীবাদের বিরুদ্ধে কলমযুদ্ধ চালান যা জ্ঞান দিয়ে মোকাবেলার যোগ্যতা তাদের ছিল না।
শুধু আফগানিস্তান নয়, বিভিন্ন দেশ এই নির্দিষ্ট মতাদর্শের ব্যাপারে অনেক কঠোর। মালয়েশিয়া তাদের ব্যান (নিষিদ্ধ) করেছিলো, চেচনিয়ায় তাদের দেখা মাত্র হত্যার বিধান করেছে।
-মুহম্মদ ইয়াসির।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
তাতার বিরোধী যুদ্ধে হযরত আমীর খসরু দেহলভী চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আজকের নগরসভ্যতার জনক মুসলমানগণই
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজি
০৭ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলিম সোনালী যুগের পাঠাগার
০৩ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
আগলাবী সালতানাতের মুসলিম নৌবহর (১)
৩১ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
কায়রোর ঐতিহাসিক আল আযহার জামে মসজিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
স্বর্ণালী যুগে মুসলমানদের বিজয় রহস্য এবং বিধর্মীদের স্বীকারোক্তি (১)
২৯ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পারস্যের এক গভর্নরের সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণের ঘটনা
২৩ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পবিত্র আযানের জন্য ২২ জন মুসলমানের শহীদ হওয়ার ঈমানদীপ্ত ঘটনা
১২ অক্টোবর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)