ইজতিহাদ সংক্রান্ত মাওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (২)
, ০৯ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০২ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ১৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
ছাহিবু সাইয়্যিদি সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ, ছাহিবে নেয়ামত, আহলু বাইতি রসূলিল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ক্বায়িম মাক্বামে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, রহমাতুল্লিল আলামীন মামদূহ মুর্শিদ ক্বিবলা সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দায়িমীভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওহী মুবারক দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওহী মুবারক ব্যতীত কোনো কথা মুবারক বলেননি, কোনো কাজ মুবারক করেননি এবং কোনো কিছু সমর্থন মুবারকও করেননি। উনার হাটা-চলা মুবারক, নড়া-চড়া মুবারক, খাওয়া-দাওয়া মুবারক, শ্বাস-প্রশ্বাস মুবারক, চোখ মুবারক উনার পলক মুবারক, দৃষ্টি মুবারক, ঘুম মুবারক এবং মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র স্বপ্ন মুবারকও মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওহী মুবারক উনার অন্তর্ভুক্ত। সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰى. اِنْ هُوَ اِلَّا وَحْىٌ يُّوْحٰى
‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ওহী মুবারক ব্যতীত নিজ থেকে কোনো কথা মুবারক বলেন না, কোনো আমল মুবারক করেন না, কোনো সম্মতি মুবারক প্রকাশ করেন না।’ সুবহানাল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা নজম শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৩-৪)
মহান আল্লাহ পাক তিনি আরো ইরশাদ মুবারক করেন-
وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الْاَقَاوِيْلِ. لَاَخَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِيْنِ. ثُـمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِيْنَ. فَمَا مِنْكُمْ مِّنْ اَحَدٍ عَنْهُ حٰجِزِيْنَ
‘যদি তিনি আমার নাম মুবারক-এ বানিয়ে বানিয়ে কোনো কথা বলতেন, তাহলে আমি আমার কুদরতী ডান হাত মুবারক দ্বারা অর্থাৎ কুদরতীভাবে উনাকে পাকড়াও করে উনার প্রাণ রগ কেটে দিতাম অর্থাৎ উনাকে কঠিন শাস্তি দিয়ে মৃত্যুদ- দিতাম। তোমাদের কেউ উনাকে মহান আল্লাহ পাক উনার থেকে রক্ষা করতে পারতে না।’ না‘ঊযুবিল্লাহ! (সম্মানিত ও পবিত্র সূরা হাক্কাহ্ শরীফ : সম্মানিত ও পবিত্র আয়াত শরীফ ৪৪-৪৭)
কাজেই, তিনি নিজ থেকে কিছু বলেছেন, করেছেন বা সমর্থন করেছেন এরূপ আক্বীদাহ্ পোষণ করা কুফরী। একইভাবে ‘তিনি ইজতিহাদ করেছেন এবং উনার ইজতিহাদে ভুল হয়েছে।’ এরূপ আক্বীদাহ্ পোষণ করাও কুফরী ও জাহান্নামী হওয়ার কারণ।” না‘ঊযুবিল্লাহ!
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও আফসোসের বিষয় হচ্ছে- হাদীছ, তাফসীর, শরাহ, উছূল, আক্বাইদ, তাছাউফ ইত্যাদি কিতাবে বলা হয়েছে যে, ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইজতিহাদ করেছেন এবং উনার ইজতিহাদে ভুলও হয়েছে।’ না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! শুধু তাই নয়; আরো বলা হয়েছে যে, ‘এজন্য নাকি মহান আল্লাহ পাক তিনি উনাকে তিরস্কারও করেছেন।’ না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! কিতাবাদিতে এই কুফরী আক্বীদাকে ছাবিত করতে যেয়ে বর্ণনাগত কিছুটা পার্থক্য করে দুটি মাওযূ হাদীছ দিয়ে দলীল দেয়া হয়েছে। যেমন-
(২)
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন ইরশাদ মুবারক করেছেন,
لَوْ نَزَلَ الْعَذَابُ مَا نَجٰى اَحَدٌ مِّنَّا اِلَّا حَضْرَتْ عُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وحَضْرَتْ مُعَاذَ بْنَ سَعْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ وَفِىْ لَفْظٍ اٰخَرَ: لَوْ نَزَلَ الْعَذَابُ لَمَا نَجَا مِنْهُ غَيْرُ حَضْرَتْ عُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وحَضْرَتْ سَعْدِ بْنِ مُعَاذٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ
অর্থ: “যদি আযাব নাযিল হতো, তাহলে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি এবং হযরত মুয়ায ইবনে সা’দ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি অর্থাৎ উনারা দুজন ব্যতীত আমাদের মধ্য থেকে একজনও নাজাত পেতাম না।’ না‘ঊযুবিল্লাহ! শব্দগত কিছুটা পার্থক্য করে অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘যদি আযাব নাযিল হতো, তাহলে অবশ্যই হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি এবং হযরত সা’দ ইবনে মুয়ায রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি অর্থাৎ উনারা দু’জন ব্যতীত এই আযাব থেকে একজনও নাজাত পেতো না।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (নূরুল আনওয়ার, তাফসীরে জীলানী, রদ্দুর রওয়াফিদ্ব লি ইমামে রব্বানী মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি, তাফসীরে বায়যাভী, শিফা, শারহুয যারক্বানী, তাফসীরে দুররে মানছূর ইত্যাদি)
তারপর উছূলের কিতাবে বলা হয়েছে,
فَظَهَرَ اَنَّ الْحَقَّ هُوَ رَأْىُ حَضْرَتْ عُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَاَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَخْطَاَ حِيْنَ عَمِلَ بِرَأْىِ حَضْرَتْ اَبِىْ بَكْرٍ عَلَيْهِ السَّلَامُ
অর্থ: “কাজেই এটা স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার অভিমতই সঠিক ছিলো। আর নিশ্চয়ই নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার অভিমত অনুযায়ী আমল করার কারণে ভুল করেছেন।” না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! (নূরুল আনওয়ার)
আর ‘ফিক্বহুল আকবারসহ’ আরো অনেক কিতাবে উল্লেখ রয়েছে,
وَقَدْ كَانَتْ مِنْهُمْ زَلَّاتٍ وَّخَطَايَا
অর্থ: “হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কখনও কখনও পদস্খলন ও ভুল হতো।” না‘ঊযুবিল্লাহ! (আল ফিক্বহুল আকবার লিইমামে আ’যাম রহমতুল্লাহি আলাইহি, আক্বাইদ, উছূল, শরাহ ও তাফসীর গ্রন্থাবলী)
ফলে, শত শত বছর ধরে মানুষ এই কুফরী আক্বীদাকে তাদের অন্তরে লালন করে আসছে এবং লেখালেখি ও বলাবলির মাধ্যমে প্রচার-প্রসার করে আসছে যে, ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইজতিহাদ করতেন এবং উনার ইজতিহাদে কখনও কখনও ভুল হতো।’ না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! না‘ঊযুবিল্লাহ! আর তারই প্রমাণ বহন করছে- হাদীছ, তাফসীর, ফিক্বাহ্-ফতওয়া, শরাহ, উছূল, আক্বাইদ, তাছাউফ ও ইতিহাসের মু’তাবার কিতাবগুলো। সেখানে শুধু এই কুফরী আক্বীদাহ্ লিপিবদ্ধই হয়নি; বরং কোনো কোনো লেখক উনাদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে এই কুফরী আক্বীদাকে ছাবিত করতে আপ্রাণ ব্যর্থ চেষ্টাও করেছে। না‘ঊযুবিল্লাহ!
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আল আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে মানহানীকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৩০)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৫)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি তিনজন উনাদের মুহব্বত ফরয করে দিয়েছেন-
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩০)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৪)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইত্তিবা বা অনুসরণ করার ক্ষেত্রে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কোন মেছাল নেই
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (২৯)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৩)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












