সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (২৯)
, ১১ জুমাদাল ঊখরা শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ০৪ সাবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ১৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ
হযরত আফরা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনার এবং উনার দুই কিশোর আওলাদ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুমা উনাদের বেনযীর দৃষ্টান্ত মুবারক:
হযরত আফরা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি ছিলেন বিশিষ্ট আনছার মহিলা ছাহাবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা। উনার ৭জন ছেলে সন্তান ছিলেন। বদরের সম্মানিত জিহাদ মুবারক উনার সময় তিনি জানতে পারলেন যে, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে যেই নিকৃষ্ট লোকটি সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে, সেই কাট্টা কাফির আবূ জাহিল মুশরিকদেরকে নেতৃত্ব দিয়ে নিয়ে আসতেছে। তখন তিনি উনার দুইজন সন্তান হযরত মু‘আয রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে এবং হযরত মু‘আওয়িয রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে বললেন যে, ‘নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে কাট্টা কাফির আবূ জাহিল। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সেই কাট্টা কাফির আবূ জাহিল মুশরিকদেরকে নেতৃত্ব দিয়ে নিয়ে আসতেছে। কাজেই যেভাবেই হোক এই সম্মানিত জিহাদ মুবারক-এ তাকে হত্যা করতেই হবে। যদি আপনারা তাকে হত্যা করতে না পারেন, তাহলে আপনাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। সুবহানাল্লাহ! প্রয়োজনে আপনারা শহীদ হয়ে যাবেন, তাতে কোনো আফসোস নেই; কিন্তু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুশমন কাট্টা কাফির আবূ জাহিলকে হত্যা করতেই হবে। তাকে হত্যা না করে বাড়িতে আসতে পারবেন না। ’ হযরত আফরা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা তিনি উনার দুইজন সন্তান উনাদের থেকে এই বিষয়ে ওয়াদা মুবারক নিলেন এবং উনারা দু’জনও অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে ওয়াদা মুবারক দিলেন যে, ‘মহান আল্লাহ পাক উনার ক্বসম! আমরা যেভাবেই হোক এই সম্মানিত জিহাদ মুবারক-এ নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুশমন কাট্টা কাফির আবূ জাহিলকে হত্যা করবো; অন্যথায় বাড়িতে ফিরে আসবো না। যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা শহীদ হয়ে যাবো। কিন্তু যেভাবেই হোক কাট্টা কাফির আবূ জাহিলকে হত্যা করবোই। ’ সুবহানাল্লাহ! উনাদের মধ্যে যিনি বড় উনার বয়স মুবারক ছিলেন প্রায় ১৫ বছর আর যিনি ছোট উনার বয়স মুবারক ছিলেন প্রায় ১৪ বছর। মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছেন,
قَالَ حَضْرَتْ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ إِنِّيْ لَفِي الصَّفِّ يَوْمَ بَدْرٍ إِذْ الْتَفَتُّ فَإِذَا عَنْ يَمِيْنِيْ وَعَنْ يَسَارِيْ فَتَيَانِ حَدِيْثَا السِّنِّ فَكَأَنِّيْ لَمْ آمَنْ بِمَكَانِهِمَا إِذْ قَالَ لِيْ أَحَدُهُمَا سِرًّا مِنْ صَاحِبِهِ يَا عَمِّ أَرِنِيْ أَبَا جَهْلٍ فَقُلْتُ يَا ابْنَ أَخِيْ وَمَا تَصْنَعُ بِهِ قَالَ عَاهَدْتُ اللهَ إِنْ رَأَيْتُهُ أَنْ أَقْتُلَهُ أَوْ أَمُوْتَ دُوْنَهُ فَقَالَ لِي الآخَرُ سِرًّا مِنْ صَاحِبِهِ مِثْلَهُ قَالَ فَمَا سَرَّنِيْ أَنِّيْ بَيْنَ رَجُلَيْنِ مَكَانَهُمَا فَأَشَرْتُ لَهُمَا إِلَيْهِ فَشَدَّا عَلَيْهِ مِثْلَ الصَّقْرَيْنِ حَتَّى ضَرَبَاهُ وَهُمَا ابْنَا حَضْرَتْ عَفْرَاءَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهَا
অর্থ: “হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন, বদরের সম্মানিত জিহাদ মুবারক উনার দিন সম্মানিত জিহাদ মুবারক উনার কাতারে দাঁড়িয়ে আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলাম, আমার ডানে ও বামে দুনিয়াবী দৃষ্টিতে অল্প বয়স্ক দু’জন বালক রয়েছেন। উনাদের মত অল্প বয়স্ক দু’জন বালক উনাদের পাশে আমি নিজেকে নিরাপদ বোধ করছিলাম না। এমতাবস্থায় উনাদের একজন চুপে চুপে এসে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন- ‘চাচাজান! আবূ জাহিল কোনটি আমাকে দেখিয়ে দিন? আমি বললাম- ‘ভাতিজা! আপনি তাকে দিয়ে কী করবেন?’ তিনি বললেন, ‘মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে আমি ওয়াদা মুবারক করেছি, তাকে দেখলে অবশ্যই হত্যা করবো; অন্যথায় নিজেই শহীদ হয়ে যাব। ’ এরপর দ্বিতীয়জন তিনিও চুপে চুপে এসে আমাকে একইভাবে জিজ্ঞাসা করলেন। আমি এত খুশি হলাম যে, দু’জন পূর্ণবয়স্ক মানুষের মাঝে আমি ততটুকু খুশি হতাম না। অতঃপর আমি উনাদের দু’জনকে ইশারায় আবূ জাহিলকে দেখিয়ে দিলাম। তখন উনারা বাজ পাখির ন্যায় দ্রুত গতিতে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে তাকে আঘাত করলেন। (বাজ পাখি যেমন ছোঁ মেরে চোখের পলকে মুরগির বাচ্চাকে নিয়ে যায়, তদ্রƒপ উনারা দু’জন চোখের পলকে কাট্টা কাফির আবূ জাহিলকে তরবারী দিয়ে আঘাত করে ধরাশায়ী করে ফেললেন। সুবহানাল্লাহ!) উনারা হলেন হযরত আফরা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা উনার দুই ছেলে। ” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ্)
অন্য বর্ণনায় রয়েছেন, হযরত মু‘আয রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বলেন, ‘আমি যখন আবূ জাহিলকে চিনে নিলাম, সাথে সাথে তাকে উদ্দেশ্য করে রওয়ানা করলাম। মুশরিকরা তার নিরাপত্তার জন্য চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে। তারপরও আমি অতি দ্রুত গতিতে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম এবং আমি আমার তরবারী দিয়ে তাকে অত্যন্ত কঠিনভাবে আঘাত করলাম। আমার এক আঘাতে তার পায়ের গোছা শরীর থেকে আলাদা হয়ে সে মাটিতে থুবড়ে পড়ল। আমার ভাই হযরত মু‘আওয়িয রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনিও আমার ন্যায় অতি দ্রুত গতিতে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে অত্যন্ত কঠিনভাবে আঘাত করেন। তারপর তিনি আবূ জাহিলের উপর চড়ে বসে তার গলায় ছুরি চালাতে থাকলেন। মুশরিকরা আবূ জাহিলকে বাঁচানোর জন্য উনার দিকে তীর, বর্শা নিক্ষেপ করতে লাগল। চতুর্মুখী আক্রমণে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়লেন। তিনি শহীদ হয়ে আবূ জাহিলের পাশেই পড়ে রইলেন। আবূ জাহিল পুরোপুরিভাবে ধরাশায়ী হয়ে গেলো। হযরত ইকরামা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু (আবূ জাহিলের ছেলে, তিনি তখনও সম্মানিত ঈমান গ্রহণ করেননি) তিনি আমার বাম কাঁধের উপর তরবারীর দ্বারা খুব কঠিনভাবে আঘাত করলেন। ফলে আমার বাম হাত মুবারক কেটে যায় এবং তা ঝুলতে থাকে। পরে আমি এই অবস্থায় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুবারক খিদমত-এ হাযির হই। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আমার হাত মুবারক যথাস্থানে লাগিয়ে দেন। সাথে সাথে আমার হাত মুবারক পূর্বের থেকে আরো শক্তিশালী হয়ে গেলেন। সুবহানাল্লাহ!
-মুহাদ্দিছ মুহম্মদ আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে মানহানীকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (৩০)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৫)
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি তিনজন উনাদের মুহব্বত ফরয করে দিয়েছেন-
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’ইয়াদ শরীফ মেহমানদারী করার মাধ্যমে উদযাপনে শাফায়াত মুবারক লাভ
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মাঝে ফানা ও বাক্বা সারা কায়িনাত (৩০)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৪)
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে ইত্তিবা বা অনুসরণ করার ক্ষেত্রে হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের কোন মেছাল নেই
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (৩)
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
ইজতিহাদ সংক্রান্ত মাওযূ হাদীছ ও তার খন্ডনমূলক জবাব (২)
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খ্বাতামুন নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সম্মানিত সম্বোধন মুবারক করার বিষয়ে কতিপয় মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র লফ্য বা পরিভাষা মুবারক
০১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












