ইতিহাস চর্চা হওয়া উচিত ছিলো হযরত ওলী-আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী, রাজা-বাদশাহদের রাজত্ব অনুযায়ী নয়
, ২১ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২১ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ২০ মে, ২০২৫ খ্রি:, ৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ইতিহাস
গতানুগতিক পাঠ্যপুস্তক ও ইতিহাস গ্রন্থগুলোতে ইতিহাস শিক্ষা দেয়া হয় শাসকদের রাজত্বের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী। যেমন শাসক বাবরের পর হুমায়ূন, হুমায়ূনের পর আকবর, আকবরের পর জাহাঙ্গীর এভাবেই ইতিহাসের গ্রন্থগুলো রচিত হয়। কোনো একটি যুগের ইতিহাস রচনা করা হয় ঐ যুগের শাসককে কেন্দ্র করে। কিন্তু মুসলমান শিক্ষার্থীদের ইতিহাস শিক্ষা এরূপ হওয়া উচিত নয়।
মুসলমান শিক্ষার্থীদের ইতিহাস শিক্ষা হওয়া উচিত- ওলীআল্লাহ উনাদের সিলসিলার ধারাবাহিকতা অনুযায়ী। উদাহরণস্বরূপ ইতিহাস শিক্ষা হতে হবে এভাবে, সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সময়কার ঘটনাবলী উনাকে কেন্দ্র করে বর্ণিত হতে হবে। উনার পরবর্তী সময়কার ঘটনা বর্ণনা করতে হবে উনার খলীফা হযরত বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে কেন্দ্র করে। সম্মানিত সিলসিলার খিলাফতের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী ইতিহাসের ধারাবাহিকতা বর্ণিত হতে হবে।
কিন্তু তা না করায় মুসলমান শিক্ষার্থীরা পবিত্র ঈমান-আক্বীদার দিক দিয়ে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়-
১) রাজত্বের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী ইতিহাস বর্ণনা করার কারণে শিক্ষার্থীদের মাথায় এটি প্রবেশ করছে যে, রাজা-বাদশাহরাই ছিলো সর্বেসর্বা। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণই ভুল। রাজা-বাদশাহদের রাজত্ব নির্ভর করতো ওলীআল্লাহগণ উনাদের সন্তুষ্টির উপর। বহু মুসলমান নামধারী রাজা-বাদশাহরা ওলীআল্লাহদের বিরুদ্ধাচরণ করে ধ্বংস হয়েছিলো।
বিপরীতে এই ধারণাও শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রবেশ করে যে, মুসলমান রাজা-বাদশাহদের কারণে মুসলিম শাসন স্থাপিত হয়েছিলো। এই ধারণাটিও সম্পূর্ণ ঠিক নয়। সুলত্বানুল হিন্দ, হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফায়িয-তাওয়াজ্জুহ না পেলে শিহাবুদ্দীন মুহম্মদ ঘোরী তিনি যালিম হিন্দু পৃথ্বিরাজের বিরুদ্ধে বিজয়ী হতে পারতেন না।
হযরত আবুল হাসান খারকানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ছোহবত মুবারক না পেলে ‘মূর্তি সংহারক’ খ্যাত মুশরিকদের ত্রাস সুলতান মাহমুদ তিনি ভারতে দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করতে পারতেন না। এরকম যুগে যুগে আরো অনেক দ্বীনদার ধর্মপরায়ণ রাজা-বাদশাহ রয়েছেন; যারা দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কাজ করেছেন। কিন্তু উনাদের মূলে ছিলো হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের নেক-দৃষ্টি, ফায়িজ-তাওয়াজ্জুহ ও মুবারক দিক-নির্দেশনা।
২) রাজা-বাদশাহকেন্দ্রিক ইতিহাস বর্ণনা করার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বস্তুতান্ত্রিক চেতনা ঢুকে যায়। তাদের মধ্যে রাজা-বাদশাহ, আমীর-ওমরাহ হওয়ার খায়েশ কাজ করে এবং আল্লাহওয়ালা হওয়ার চেতনা তাদের মধ্যে গঠিত হয় না।
৩) তৃতীয়ত, রাজা-বাদশাহকেন্দ্রিক ইতিহাস বর্ণনার কারণে অনেকক্ষেত্রে অত্যাচারী-অযোগ্য ও গুমরাহ শাসকগোষ্ঠীর প্রশংসা পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত হয়। যেমন গুমরাহ শাসক আকবরের সময়কার ইতিহাস বর্ণনা করার ক্ষেত্রে গতানুগতিক পাঠ্যপুস্তকে আকবরের প্রশংসা করা হয়ে থাকে। কিন্তু এই একই সময়কার ইতিহাস যদি হযরত মুজাদ্দিদে আলফে ছানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে কেন্দ্র করে রচনা করা হয়, সেক্ষেত্রে আকবর নিঃসন্দেহে গুমরাহ ও যালিম হিসেবে সাব্যস্ত হবে।
গুমরাহ শাসকের প্রশংসা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে মুসলমান শিক্ষার্থীরাও গুমরাহীর পথে ধাবিত হয়। নাউযুবিল্লাহ!
৪) রাজা-বাদশাহকেন্দ্রিক ইতিহাস বর্ণনার আরেকটি গুরুতর ত্রুটি হচ্ছে, এতে করে সমসাময়িক মুসলিম সমাজের চিত্র ফুটে উঠে না। যার ফলে আম মুসলমান সমাজ তার অতীত থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়।
বর্তমান সময়ে অনেক নাস্তিক-গুমরাহ ব্যক্তি এরূপ দাবি করে থাকে যে, বোরকা পরা, পর্দা করা এগুলো বাংলাদেশের মুসলমানদের সংস্কৃতি নয়। এধরনের বক্তব্য দেয়ার মূল কারণ, অতীতে মুসলিম সমাজে ওলীআল্লাহগণ উনাদের ভূমিকাকে পাঠ্যপুস্তকে ফুটিয়ে তোলা হয়নি। ফলশ্রুতিতে অতীতে বাংলাদেশের মুসলমান সমাজের আরবী-ফার্সীকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা, ধার্মিকতা এগুলো সম্পর্কে বর্তমান মুসলমানরা জানে না।
সুতরাং মুসলমান সমাজকে রক্ষা করতে হলে শাসকনির্ভর ইতিহাস বর্জন করে- ওলীআল্লাহদের জীবনী মুবারক কেন্দ্র করে ইতিহাস রচিত করতে হবে। তাহলেই মুসলমান সমাজে আল্লাহওয়ালা হওয়ার চেতনা গঠিত হবে এবং মুসলমান সমাজ তার সত্যিকারের পথ খুঁজে পাবে।
-গোলাম মুর্শিদ।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পান্থনিবাস ও সরাইখানা নির্মাণে মুসলমানদের অনবদ্য অবদান
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহের পরহেজগারিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৭)
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের প্রথম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ-ই কি আজকের ঢাকেশ্বরী মন্দির?
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২টি চন্দ্রমাসের নাম এবং নামকরণের সার্থকতা (২)
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক খেমকারান যুদ্ধ: যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয়তাবোধের উদ্ভব
২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












