ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ সংরক্ষণ
, ৫ই শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ০৮ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ২২ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র বরকতময় ইসম বা নাম মুবারক যে কারণে ইতিহাসের পাতায় ও মু’মিনদের মনে অত্যান্ত মর্যাদার সাথে লেখা হয়ে আছে তাহলো তিনি ছিলেন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার সংরক্ষক বা হেফাযতকারী। ইয়ামামার যুদ্ধে বহু সংখ্যক হাফিযে কুরআন শহীদ হলে সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি এ ঘটনায় অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার কাছে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ সংকলনের প্রস্তাব পেশ করেন। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম তিনি সেই সম্মানিত প্রস্তাব মুবারক গ্রহণ করেন। অবশেষে যায়েদ ইবনে সাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার উপর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ সংকলনের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। হযরত যায়েদ ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি বিভিন্ন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদের সহায়তায় কঠোর পরিশ্রম করে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার একখানা পা-ুলিপি তৈরী করেন। এটি ছিল সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার খেলাফতকালে সর্বজন স্বীকৃত পা-ুলিপি। সুবহানাল্লাহ! সাইয়্যিদুনা হযরত ছিদ্দীক্বে আকবর আলাইহিস সালাম উনার জীবদ্দশায় পা-ুলিপিখানা উনার কাছে সংরক্ষিত ছিলো। উনার সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার এ পা-ুলিপিখানা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইসি সালাম উনার নিকট সংরক্ষিত থাকে। আর সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনার সম্মানিত বিছালী শান মুবারক প্রকাশের পর ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি অত্যন্ত যতœসহকারে নিজের কাছে উক্ত পা-ুলিপিখানা সংরক্ষণ করে রাখেন। সুবহানাল্লাহ!
‘বুখারী শরীফ’-এ বর্ণিত রয়েছে- “হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। একদা হযরত হুযায়ফাহ্ ইবনে ইয়ামান রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট আগমন করেন, আর তখন তিনি ইরাকীদের সাথে থেকে আর্মেনিয়া ও আযারবাইজান জয় করার জন্য সিরিয়াবাসীদের সাথে জিহাদ করতেছিলেন। লোকের বিভিন্ন রীতিতে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ পাঠ হযরত হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনাকে উদ্বিগ্ন করে তুলে। হযরত হুযায়ফা রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু তিনি সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনাকে বলেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! ইহুদী এবং নাছারাদের ন্যায় এই উম্মত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কিতাব কুরআন শরীফ নিয়ে ইখতিলাফ করার পূর্বে আপনি উনাদেরকে রক্ষা করুন।
‘তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট (এ কথা বলে লোক) পাঠান যে, (দয়া করে) আপনার নিকট রক্ষিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার সহীফাহসমূহ (পা-ুলিপিখানা) আমাদের নিকট পাঠিয়ে দিন। আমরা তা বিভিন্ন মাসহাফে (কিতাবে) অনুলিপি করে পুনরায় আপনার সম্মানিত খিদমত মুবারক পেশ করবো। সুবহানাল্লাহ! তখন ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি তা সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম উনার নিকট পাঠিয়ে দেন। ’ সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি হযরত যায়েদ ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা উনাকে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা উনাকে, হযরত সাঈদ ইবনে ‘আছ রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা উনাকে এবং আব্দুল্লাহ ইবনে হারিছ ইবনে হিশাম রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা উনাকে অর্থাৎ উনাদেরকে তা অনুলিপি করতে নির্দেশ দেন। তারপর উনারা তা বিভিন্ন মাসহাফে অনুলিপি করেন। আর সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি কুরাইশ গোত্রীয় এই তিনজন ছাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহুম উনাদেরকে বলে দিয়েছিলেন যে, যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার কোন স্থানে হযরত যায়েদ ইবনে ছাবিত রদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু উনার সাথে আপনাদের ইখতিলাফ হবে, তখন আপনারা তা কুরাইশদের রীতিতেই লিপিব্ধ করবেন। কেননা নিশ্চয়ই মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ কুরাইশদের ভাষায় নাযিল হয়েছেন। উনারা সেই অনুযায়ী কাজ করেন। সুবহানাল্লাহ!
‘অবশেষে যখন উনারা সহীফাসমূহ (পা-ুলিপিখানা) বিভিন্ন মাসহাফে অনুলিপি করেন, তখন সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি উক্ত সহীফাসমূহ (পালিপিখানা) ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট ফেরত পাঠান। ’ সুবহানাল্লাহ! আর উনারা যা অনুলিপি করেছিলেন, তার এক এক কপি সম্মানিত ইসলামী খিলাফত উনার এক এক অঞ্চলে পাঠিয়ে দেন। আর এছাড়া যে কোনো সহীফায় বা মাসহাফে লিখা ‘কুরআন শরীফ’ উনাকে জ্বালিয়ে দিতে নির্দেশ মুবারক দেন। ” সুবহানাল্লাহ! (বুখারী শরীফ, ফাতহুল বারী, ‘উমদাতুল ক্বারী, মেশকাত, মেরক্বাত ইত্যাদি)
এভাবে ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ্ আলাইহাস সালাম উনার দয়া-ইহসান মুবারক-এ সাইয়্যিদুনা হযরত যুন নূরাইন আলাইহিস সালাম তিনি সঠিক এবং সুন্দরভাবে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ সংকলন করেন। যার অবিকল পা-ুলিপি আজ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছেন।
সুতরাং যখন মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার লিখন ও পঠনে সম্মানিত মুসলমান উনাদের মাঝে চরম এক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিলো, তখন ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম উনার নিকট সংরক্ষিত মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার পা-ুলিপিখানাই সম্মানিত মুসলমান উনাদেরকে সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন। ইবনাতু আবীহা, উম্মুল মু’মিনীন সাইয়্যিদাতুনা হযরত আর রবি‘য়াহ আলাইহাস সালাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র কুরআন শরীফ উনার সর্বজন স্বীকৃত পা-ুলিপিখানা সংরক্ষণ করে সমস্ত জিন-ইনসান এবং তামাম কায়িনাতবাসী সকলের প্রতি অত্যন্ত দায়া-ইহসান মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ! তাই তিনি সমস্ত জিন-ইনসান, তামাম কায়িনাতবাসী সকলের অন্তরে চিরস্মরণীয় হয়ে ছিলেন, আছেন এবং অনন্তকাল থাকবেন। সুবহানাল্লাহ!
মুহম্মদ আল আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
যে নিজে পর্দা করে না ও অধীনস্থদের পর্দা করায় না সে দাইয়ূছ
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হাক্বীক্বী মৃত্যুকে স্মরণ করার মধ্যেই শহীদী দরজা মিলে
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন রোগই ছোঁয়াচে নয়, ছোঁয়াচে বিশ্বাস করা কুফরী
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হযরত আব্বাদ ইবনে বিশর ইবনে ওয়াকাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৩)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা কবীরা গুনাহ ও অসন্তুষ্টির কারণ
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বক্ষেত্রে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে নেয়াই ঈমানদারের পরিচয়
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












