ইমামুল মুসলিমীন, মুজাদ্দিদে মিল্লাত ওয়াদ দ্বীন, হাকিমুল হাদীছ, ইমামুল আইম্মাহ, মুহ্ইস সুন্নাহ ইমামে আ’যম সাইয়্যিদুনা হযরত ইমাম আবূ হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি (১৫)
(বিলাদাত শরীফ- ৮০ হিজরী, বিছাল শরীফ- ১৫০ হিজরী)
, ০৫ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৪ হিজরী সন, ২৬ ছানী ‘আশার, ১৩৯০ শামসী সন , ২৬ মে, ২০২৩ খ্রি:, ১৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
সমঝ ও বিচক্ষণতা-২
খ. লোকটি মাসয়ালা জিজ্ঞাসা করলো, নামাযে প্রবেশ করা হয় ফরযের মাধ্যমে না পবিত্র সুন্নত উনার মাধ্যমে? তিনি বললেন, ফরযের মাধ্যমে। লোকটি বলল, ভুল হয়েছে। তিনি আবার বললেন, পবিত্র সুন্নত উনার মাধ্যমে। সে বলল, তাও ভুল। অতঃপর সে নিজেই সঠিক কথা ব্যক্ত করে বলল, উভয়টির মাধ্যমেই মানুষ নামাযে প্রবেশ করে। কেননা তাকবীরে তাহরীমা ফরয এবং রফয়ে ইয়াদাইন সুন্নত।
গ. তৃতীয় মাসায়ালা জিজ্ঞাসা করলো, চুলার উপর ডেগ রয়েছে। তাতে গোশত ও শুরা। উপর থেকে একটি পাখি এতে পড়ে মরে যায়। এমতাবস্থায় ডেগের তরকারি খাওয়া জায়িয হবে কিনা? তিনি বললেন, খাওয়া জায়িয হবে। সে বলল, ভুল হয়েছে। তিনি বললেন, জায়িয হবে না। সে বলল, তাও ভুল। অতঃপর লোকটি নিজেই প্রকৃত মাসয়ালা ব্যাখ্যা করে বলল, যদি পূর্বেই তরকারি রান্না করা পাতিলের মধ্যে শুরা টগবগ না করে, তাহলে শুরা ফেলে দিয়ে গোশতগুলো ধুয়ে আবার রান্না করা হবে। আর যদি তরকারি রান্না হয়ে থাকে, তাহলে গোশত ও শুরা উভয়টি ফেলে দেয়া হবে।
ঘ. চতুর্থ মাসায়ালা জিজ্ঞাসা করলো, এক মুসলমানের ইহুদী স্ত্রী মারা যায়। তার পেটে রয়েছে বাচ্চা। এমতাবস্থায় তাকে কোথায় দাফন করা হবে? তিনি বললেন, মুসলমানদের কবরস্থানে। সে বলল, ভুল হয়েছে। তিনি আবার বললেন, ইহুদীদের কবরস্থানে দাফন করা হবে। সে বলল, তাও হলো ভুল। হযরত ইমাম আবূ ইউসুফ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি চিন্তা করতে লাগলেন। অতঃপর লোকটি নিজেই সঠিক সমাধান ব্যক্ত করে বলল, তাকে ইহুদীদের কবরস্থানে দাফন করা হবে, তবে পিঠ রাখা হবে পবিত্র ক্বিবলা উনার দিকে। যাতে বাচ্চার চেহারা ক্বিবলামুখী থাকে। কেননা মায়ের পেটে বাচ্চার চেহারা থাকে মায়ের পৃষ্ঠের দিকে।
জনৈক ব্যক্তি একবার সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার খিদমতে হাজির হয়ে আরয করল, হুযূর! এক জায়গায় আমি কিছু টাকা হিফাযতের জন্য রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন শত চেষ্টা সত্ত্বেও সে জায়গার কথা স্মরণ করতে পারছি না। অথচ টাকার খুবই দরকার। সাইয়্যিদুনা ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, হে ব্যক্তি এটাতো কোন ফিক্হী মাসয়ালা নয়। আমি কি সমাধান দেব? আগন্তুক ব্যক্তি বড় অনুনয়-বিনয় করে বলল, হুযূর! একটা সমাধান বলে দিন। হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন যাও, ওযু করে সারারাত নামায পড়তে থাক। উক্ত ব্যক্তি বাড়ি গিয়ে ওযু করে নামায শুরু করে দিল। দু চার রাকায়াত পড়তে না পড়তেই টাকার কথা মনে পড়ে গেল। সে দৌড়ে এসে সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে সংবাদ দিল যে, হুযূর! আপনার নছীহত মুবারক কাজে লেগেছে। হারানো টাকা পেয়ে গেছি। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, হে ব্যক্তি! শয়তান কিভাবে এটা বরদাশত করবে যে, তুমি সারারাত নামায পড়তে থাক। তাই দু চার রাকায়াত পড়তে না পড়তেই মনে করিয়ে দিয়েছে। তবে তোমার উচিত ছিল শুকরিয়া স্বরূপ বাকি রাত নামাযের মধ্যে কাটানো।
একবারের ঘটনা। সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার এক প্রতিবেশির একটি ময়ূর চুরি হয়ে গেল। লোকটি বড় মুহব্বতের সাথে ময়ূরটাকে পালছিল। চুরি হওয়ায় সে খুব কষ্ট পেল। ইমামুল মুহাদ্দিসীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে এসে ঘটনা ব্যক্ত করলো। ইমামুল মুহাদ্দিসীন, সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তাকে বললেন ধৈর্য ধারণ করো। মহান আল্লাহ পাক তিনি মিলিয়ে দিবেন। ফজরের নামাযের সময় হযরত ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি যখন মসজিদে আসলেন তখন কথা প্রসঙ্গে লোকদেরকে এটা বললেন যে, তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তির লজ্জা করা উচিত, যে প্রতিবেশির ময়ূর চুরি করে মসজিদে নামায পড়তে এসেছে। আবার ময়ূরের পালক তার মাথায় আটকে রয়েছে। একথা শুনে যে ব্যক্তি মযূর চুরি করেছিল সে তাড়াতাড়ি মাথায় হাত বুলাতে লাগল। ইমামুল মুহাদ্দিসীন, সাইয়্যিদুনা ইমামে আ’যম রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বুঝতে পারলেন যে, এই ব্যক্তিই চোর। পরে তাকে গোপনে ডেকে বুঝালেন এবং মযূর ফেরত দেয়ার ব্যবস্থ করলেন। (তাযকিরাতুন ন’ুমান ৩৫৬)
ইমাম মুহম্মদ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এক ব্যক্তির ঘরে চোর ঢুকে তার সমস্ত মাল-সামানা চুরি করতে লাগল। ইত্যবসরে বাড়িওয়ালার ঘুম ভেঙ্গে গেলে চোরেরা তাকে ধরে কসম খাওয়ালো যে, তুমি যদি হৈ চৈ কর কিংবা কারো কাছে সাহায্য চাও অথবা কাউকে আমাদের পরিচয় বলে দাও তাহলে তোমার স্ত্রীর উপর তিন তালাক। বাড়িওয়ালা প্রাণের ভয়ে কসম খেতে বাধ্য হলো। চোরেরা নির্বিঘেœ সবকিছু চুরি করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। লোকটি সকালে বাজারে গিয়ে দেখে চোরেরা মহা আনন্দে তার মাল-সামানা বিক্রি করতে লেগে গেছে, কসমের কারণে লোকটি কাউকে কিছু বলতে পারল না, কেননা বলতে গেলেই তার স্ত্রীর উপর তিন তালাক বর্তাবে। আবার এ দৃশ্য সে সহ্যও করতে পারছিল না। (অসমাপ্ত)
সংকলিত
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












