ইতিহাস
উত্তর আফ্রিকায় যেভাবে মুসলিম শাসনের ভিত শক্তিশালী হয়েছিলো
, ১১ ই শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৪ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ২৮ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) ইতিহাস
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে আফ্রিকা বিজয়ের জন্য যেসকল সিপাহসালারগণ অবদান রেখেছেন উনাদের মধ্যে উকবা ইবনে নাফে রহমতুল্লাহি আলাইহি অন্যতম। তিনি যখন আফ্রিকায় অবস্থান করছিলেন তখন কুসাইলা নামের এক খ্রিষ্টান বার্বার শাসক উনাকে গাদ্দারীর মাধ্যমে শহীদ করে এবং উত্তর আফ্রিকার কায়রোয়ান (বর্তমানে তিউনিসিয়া) পর্যন্ত বিস্তীর্ণ পুরো মুসলিম অঞ্চল দখল করে। সে সময় মুসলিম ফৌজ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিজয়াভিযানে ব্যস্ত থাকায় দখলকৃত অঞ্চল পুনরুদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করতে কিছুটা দেরি হয়ে যায়।
এরপর উমাইয়া শাসক মালিক ইবনে মারওয়ানের শাসনামলে হাসান ইবনে নুমান রহমতুল্লাহি আলাইহিকে সেই মুসলিম ভূখন্ড পুনরুদ্ধারের দায়িত্ব দেয়া হয়। দায়িত্ব পাওয়া মাত্রই ঝড়ের বেগে ৪০ হাজার দক্ষ মুসলিম সেনা নিয়ে তিনি উত্তর আফ্রিকায় উপস্থিত হন।
আফ্রিকায় উপস্থিত হয়েই তিনি বার্বারদের উপকূলীয় নগরী কারটেজিনার উপর আক্রমণ করেন। রোম, ফিরিঙ্গি ও বার্বার গোত্র একত্রে মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামে। কিন্তু তারা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয় এবং পালিয়ে যায়।
কারটেজেনিয়া বিজয়ের পর হাসান ইবনে নুমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি কোহে উরাস অবরোধ করেন। যা বর্তমানে মাউন্ড ইউরেশিয়া নামে পরিচিত। সেখানে বিশাল একটি কেল্লা ছিলো যাতে অবস্থান করছিলো বার্বারদের মূল সেনাদল এবং এক জাদুকর দাবীদার নারীর বিপুল অনুসারী। এই নারীর তিন ছেলেই ওই অঞ্চল শাসন করতো। প্রতিকূল পরিবেশের জন্য এ অঞ্চল বিজয় করা মুসলিমদের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জের মতো ছিল। হাসান ইবনে নুমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি যখন মাউন্ট ইউরেশিয়া পৌঁছেন তখন সেই নারী জাদুকরের অনুসারীরা প্রতিরোধ গড়ে এবং সে সময় আবহাওয়া অত্যন্ত প্রতিকূল থাকায় যুদ্ধকৌশল হিসেবে মুসলিম বাহিনী কিছুটা পেছনে সরে এসে কায়রোয়ান শহরের পেছনের সীমান্তে অবস্থান করতে থাকে।
সে নারী ভেবেছিল মুসলিমরা শুধুমাত্র সম্পদের লোভে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন। তাই সে মারাকিশ থেকে তিউনিসিয়ার শেষ সীমানা পর্যন্ত পুরো অঞ্চলের সমস্ত নগরী আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। শস্যক্ষেত, বাণিজ্য, ও জনবসতি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে করে স্থানীয় বার্বার গোত্র যারা তাকে সমর্থন করে আসছিলো সৈন্য দিয়ে তারা সেই নারীর থেকে সমর্থন তুলে নেয় এবং মুসলিম বাহিনীর সাথে যোগ দেয়।
পরবর্তীতে হাসান ইবনে নুমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বার্বারদের সাথে নিয়ে পুনরায় সেই কেল্লা অবরোধ করেন। বেশ কয়েকদিন অবরোধ থাকার পর কেল্লা থেকে বাইরে বের হয়ে আসে ওই নারীর অনুসারী এবং সেনাদল। মুসলিম বাহিনীর সাথে সামনাসামনি যুদ্ধে পরাজিত ও নিশ্চিহ্ন হয় তারা। যুদ্ধে সেই জাদুকর দাবীদার নারীও নিহত হয় এবং তার তিন ছেলে মুসলমানদের হাতে বন্দি হয়। এরপর মুসলমানরা পুনরায় উত্তর আফ্রিকার কায়রোয়ান (বর্তমানে তিউনিসিয়া) পর্যন্ত বিস্তীর্ণ পুরো মুসলিম অঞ্চল দখলমুক্ত করেন।
যে বার্বার গোত্র মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলো তারাও মুসলমানদের দয়া, ইনসাফ এবং মহত্ত্ব দেখে দ্বীন ইসলাম উনার ছায়াতলে চলে আসে। পরবর্তীতে এই বার্বার গোত্রই উত্তর আফ্রিকাতে মুসলিম শাসনের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। পাশাপাশি, ওই নারীর বন্দি হওয়া তিন সন্তানও মুসলমান হয়ে যায়।
এই মহাবিজয়ের পর সুদীর্ঘকাল উত্তর আফ্রিকার মাটিতে পা দিতে সাহস পায়নি বিধর্মীরা। এমনকি কোনো বিদ্রোহ পর্যন্ত হয়নি। এই বিজয়ের কিছুদিন পরই হাসান ইবনে নুমান রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ইন্তেকাল করেন।
সম্পাদনায়: মুহম্মদ শাহজালাল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কেমন ছিলো মোঘল সালতানাতের গোলন্দাজ এবং অশ্বারোহী বাহিনী
০৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
পান্থনিবাস ও সরাইখানা নির্মাণে মুসলমানদের অনবদ্য অবদান
২৬ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৯)
১৫ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
মুসলমানদের শিক্ষা-দীক্ষার বিরোধিতায় বিধর্মী-অমুসলিমরা
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার হিন্দু ধনিক-বণিক, বেনিয়া শ্রেণী, ব্যাংকার প্রভৃতির সাথে এক গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুসলিম
১৪ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
ইউরোপকে যেভাবে সমৃদ্ধ করেছেন আফ্রিকান মুসলমানরা
১২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
গুজরাটের সুলতান মুজাফফর শাহের পরহেজগারিতা এবং ভ্রাতৃত্ববোধ
০২ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
ব্রিটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে ব্রিটিশ ভূমিকা (৩৭)
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
কেমন ছিলেন ইসলামী ইতিহাসের প্রথম আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
০১ নভেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
ঐতিহাসিক মুসলিমবাগ ঈদগাহ-ই কি আজকের ঢাকেশ্বরী মন্দির?
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
১২টি চন্দ্রমাসের নাম এবং নামকরণের সার্থকতা (২)
২৯ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
ঐতিহাসিক খেমকারান যুদ্ধ: যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয়তাবোধের উদ্ভব
২৫ অক্টোবর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার)












