উলামায়ে সূ’ ধর্ম ব্যবসায়ীদের পরিচিতি ও হাক্বীক্বত (৭)
, ১২ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১২ ছানী আ’শার, ১৩৯২ শামসী সন , ১১ মে, ২০২৫ খ্রি:, ২৮ বৈশাখ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
যুগে যুগে উলামায়ে সূ:
সৃষ্টির শুরু থেকেই উলামায়ে সূ’রা ছিলো। কিতাবে উল্লেখ করা হয় প্রথম উলামায়ে সূ’ হচ্ছে ইবলীস। সে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের মুআল্লিম বা শিক্ষক ছিলো। ৬ লক্ষ বছর ইবাদত করেছে। আসমান-জমীনের সমস্ত জায়গায় সিজদা করেছে। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক উনার একটি আদেশ মুবারক অমান্য করার কারণে সে চির মালঊন হয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় উলামায়ে সূ হয়ে গেছে। নাঊযুবিল্লাহ! মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন,
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْا إِلَّا إِبْلِيْسَ أَبٰى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ
অর্থ: মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেন, আর যখন আমি বললাম, হে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম! আপনারা জ্বিন সহ আমার যিনি খলীফাহ, আবুল বাশার হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সিজদা করুন। সকলেই সিজদা করলো। কিন্তু সে (ইবলীস) অস্বীকার করলো, অহংকার করলো, সে সিজদা করলো না। যার কারণে সে কাফির হয়ে গেল। নাঊযুবিল্লাহ! (পবিত্র সূরা বাক্বারাহ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৪)
এখানে একটা বিষয় ফিকিরের। ইবলীস একটি আদেশ মুবারক অমান্য করার কারণে এতো আমল করার পরেও যদি সবচেয়ে বড় নাফরমান হয়ে যায়। তাহলে যারা বড় বড় মুফতী মাওলানা দাবী করে, অহরহ হারাম কাজ করে যাচ্ছে তারা কতবড় উলামায়ে সূ হবে?
মরদূদ দরবেশ বালয়াম বিন বাউরাকে বলা হয় দ্বিতীয় উলামায়ে সূ। সে তিনশত বছর ইবাদত করেছিলো। সে উপরে তাকালে সিদরাতুল মুনতাহা এবং নিচে তাকালে তাহতাছছারা পর্যন্ত সবকিছু দেখতে পেতো। তার সমস্ত দোয়া কবূল করা হতো। কিন্তু সে হযরত মূসা কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে বেয়াদবী করার কারণে ৩০০ বছর পর সেও গোমরাহ হয়ে ইবলীসের মতো মরদূদ হয়ে যায়। তার সম্পর্কে পবিত্র কুরআন শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ الَّذِىْ اٰتَيْنَاهُ اٰيَاتِنَا فَانسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِينَ
অর্থ: “আর আপনি তাদের নিকট বর্ণণা করুন, সে লোকের অবস্থা, যাকে আমি নিজের নিদর্শনসমূহ দান করেছিলাম, অথচ সে তা পরিহার করে বেরিয়ে গেছে। আর তার পেছনে লেগেছে শয়তান, ফলে সে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। নাউযুবিল্লাহ! (পবিত্র সূরা আ’রাফ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১৭৬)
বনূ ইসরাইলের উলামায়ে সূ’দের সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
عَنْ حَضْرَتْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا وَقَعَتْ بَنُوْ إِسْرَائِيْلَ فِى الْمَعَاصِىْ نَهَتْهُمْ عُلَمَاؤُهُمْ فَلَمْ يَنْتَهُوْا فَجَالَسُوْهُمْ فِىْ مَجَالِسِهِمْ وَوَاكَلُوْهُمْ وَشَارَبُوْهُمْ فَضَرَبَ اللهُ قُلُوْبَ بَعْضِهِمْ بِبَعْضٍ وَلَعَنَهُمْ عَلٰى لِسَانِ دَاودَ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَعِيْسَى ابْنِ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ ذٰلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوْا يَعْتَدُوْنَ قَالَ فَجَلَسَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ مُتَّكِئًا فَقَالَ لَا وَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهِ حَتّٰى تَأْطِرُوْهُمْ عَلَى الْحَقِّ أَطْرًا
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, বনূ ইসরাঈলরা যখন পাপাচারে লিপ্ত হয়ে গেল, তখন তাদের আলিমরা প্রথমে তাদেরকে সেটা থেকে নিষেধ করলো। যখন তারা বিরত হলো না, তখন ঐ আলিমরাও তাদের সাথে ওঠাবসা শুরু করলো, তাদের সাথে একত্রে খাদ্য খেতে লাগলো ও মদ পান করতে লাগল। অতঃপর মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের (আলিমদের) কারো কারো অন্তর কারো কারো (পাপীদের) অন্তর দ্বারা কলুষিত করে দিলেন। তখন মহান আল্লাহ পাক তিনি হযরত দাঊদ আলাইহিস সালাম এবং হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম উনাদের যবান মুবারকে তাদের উপর লা’নত করলেন। এই লা’নত ছিলো তাদের অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন করার কারণে। বর্ণনাকারী বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বালিশ মুবারকে হেলান দেয়া অবস্থায় ছিলেন। এই কথা মুবারক বলে তিনি হেলান দেয়া থেকে সোজা হয়ে বসলেন এবং বললেন-
لَا وَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهِ حَتّٰى تَأْطِرُوْهُمْ عَلَى الْحَقِّ أَطْرًا
ঐ মহান সত্তা মুবারক উনার ক্বসম! যাঁর কুদরতী হাত মুবারকে আমার প্রাণ মুবারক, তোমরাও ততক্ষণ পর্যন্ত মহান আল্লাহ পাক উনার শাস্তি থেকে রেহাই পাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা অত্যাচারী ও পাপীদেরকে পাপকার্য থেকে নিষেধ করবে। (তিরমিযী শরীফ : পবিত্র হাদীছ শরীফ নং ৩০৪৭, আবূ দাঊদ শরীফ, মুসনাদে আহমদ ইত্যাদি)
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
প্রসঙ্গ: পবিত্র হজ্জ পালনের আহকাম (২)
১৫ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৫ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদের প্রতি বিশুদ্ধ আক্বীদা-হুসনে যন পোষণ করা ঈমান
১৫ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হযরত আহলু বাইত শরীফ আলাইহিমুস সালাম উনাদেরকে উত্তম লক্বব মুবারকে স্মরণ করতে হবে
১৫ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার শান মুবারকে অবমাননাকারীদের যুগে যুগে ভয়াবহ পরিণতি (২)
১৫ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৪ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৪ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
যে সকল ওলামায়ে সূ’রা মন্দির ও মূর্তি পাহারা দিয়েছে, হিন্দুদের পূজায় গিয়েছে, তাদেরকে পূজা করতে সাহায্য-সহযোগীতা করেছে, সমর্থন করেছে, সম্মতি প্রকাশ করেছে, তাদের সাথে মুছাফাহা ও মুয়ানাক্বা করেছে, তাদেরকে সম্মান করেছে, তা’যীম করেছে, তাদের সম্পর্কে সম্মানসূচক শব্দ ব্যবহার করেছে এবং সম্মানসূচক শব্দ দ্বারা সম্বোধন করেছে, বাহ বাহ দিয়েছে এবং বেশী বেশী মূর্তি তৈরী করতে বলেছে এবং বেশী বেশী পূঁজা করতে বলেছে তারা প্রত্যেকেই মূর্তিপূজারী ও মুশরিক হয়ে কাট্টা কাফির ও মুরতাদ হয়েছে (১১)
১৪ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
১৪ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সারাবিশ্বে এক দিনে ঈদ পালন সম্ভব কি? একটি দলীলভিত্তিক বিশ্লেষণ.... (১২)
১৪ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
বখিলতা ছেড়ে দিয়ে যার যার সাধ্য-সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাখাওয়াতি গুণ অর্জন করা অপরিহার্য কর্তব্য
১৪ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার)