উলামায়ে সূ’ ধর্ম ব্যবসায়ীদের পরিচিতি ও হাক্বীক্বত (৮)
, ১৭ যিলহজ্জ শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৪ আউওয়াল, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৩ জুন, ২০২৫ খ্রি:, ৩১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
যুগে যুগে উলামায়ে সূ:
(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
শাসক আকবরের দ্বীনে ইলাহীর কথা সবারই জানা রয়েছে। কিন্তু এই দ্বীনে ইলাহীর মূল হোতা কারা ছিলো? এর মূল হোতাও ছিলো উলামায়ে সূ’রা। শের শাহ শূরীর নিকট পরাজিত শাসক আকবরের পিতা হুমায়ূন যখন সপরিবারে পলায়ন করছিলো তখন বর্তমান পাকিস্তানের অমরকোটে এক রাজপ্রাসাদে আকবরের জন্ম। প্রথম জীবনে লেখাপড়ার সুযোগ না পেলেও বৈরাম খাঁর নিকট যুদ্ধ বিদ্যায় হাতেখড়ি তার। অপরিণত বয়সেই তাকে সাম্রাজ্যের দায়িত্ব নিতে হয়েছিলো। সে প্রথম দিকে ধার্মিক এবং ওলীআল্লাহ উনাদের ভক্ত ছিলো। এক যুদ্ধে বিজয়ের পর নগ্ন পায়ে হেঁটে সুলত্বানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ মুঈনুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার দরবারে উপস্থিত হয় সে। বলা হয়ে থাকে যে, হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আজমীর শরীফে যেই বড় ডেগ রয়েছে সেটাও তার হাদিয়াকৃত। সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার প্রতি তার অগাথ বিশ্বাস ভক্তির কারণে আলিমদেরকে সে মুহব্বত করতো। এই সুযোগে মোল্লা মুবারক নাগরী, আবুল ফজল, ফয়েজীর মত ধূর্ত উলামায়ে সূ’রা শাসকের নৈকট্য লাভ করে এবং পবিত্র দ্বীন ইসলাম সম্পর্কে তাকে বিভ্রান্ত করে। আকবরের মূর্খতার সুযোগে তাকে ‘দ্বীনে ইলাহী’ নামে নতুন ধর্ম প্রবর্তন করতে উৎসাহিত করে। নাঊযুবিল্লাহ!
একবার বাদশাহ শাহজাহানের শরীরে চুলকানি রোগ হয়। এক ডাক্তার বললো, চুলকানি রোগ সারাতে বাদশাহকে রেশমি কাপড়ের পোশাক পরতে হবে। কিন্তু পুরুষের জন্য রেশমি কাপড় পরা হারাম এটা বাদশাহর জানা ছিলো। বাদশাহ তখন ঐ সময়কার কথিত আলিমদের কাছে ফতওয়া চাইলো। দিল্লীর বাদশাহর সুস্থতার জন্য ফতওয়া লাগবে আর তা পাওয়া যাবে না, তা তো হবার নয়। প্রায় ৩০০ মুফতী ফতওয়া দিলো, ‘প্রয়োজনে বাদশাহর জন্য রেশমি কাপড় পরা জায়িজ’। বাদশাহর নিকট ফতওয়া দাতা আলিমদের নাম পেশ করা হলো। বাদশাহ তালিকা দেখলো, সেখানে ৩০০ আলিমের দস্তখত রয়েছে। কিন্তু শাহী মসজিদের খতীব হযরত মোল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কোনো দস্তখত নেই। বাদশাহ বললো, এই ৩০০ জনের ফতওয়ায় হবে না, শাহী মসজিদের খতীব উনার দস্তখত লাগবে। হযরত মোল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিকট ফতওয়া চাওয়া হলে তিনি বললেন, এখানে একা একা ফতওয়া দেয়া যাবে না, আমি পবিত্র জুমুআর দিন সবার সম্মুখে মসজিদে প্রকাশ্যে ফতওয়া দিবো। জুমুআর দিন বাদশাহ, কথিত তিনশ আলিমসহ সকল মুছল্লিগণ উপস্থিত হলেন, হযরত মোল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মিম্বরে উঠে প্রকাশ্যে ঘোষণা করলেন- ‘মুফতি আওর মুস্তাফতি হার দো কাফেরান্দ’। অর্থাৎ ‘যে ফতওয়া চেয়েছে এবং যারা ফতওয়া দিয়েছে উভয়ই কাফির হয়ে গেছে। ’
হযরত মোল্লা জিউন রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি জানতেন, বাদশাহর চুলকানি হয়েছে এটা ঠিক, কিন্তু সেই চুলকানি এত মারাত্মক নয় যে, এতে বাদশাহর মৃত্যু হবে। এছাড়া চুলকানি রোগের আরো হালাল ওষুধ আছে। হালাল বাদ দিয়ে কেন হারামকে গ্রহণ করতে হবে?
এরকম নিকৃষ্ট উলামায়ে সূ’রা বর্তমান যামানায়ও বিদ্যমান রয়েছে। গত কয়েক বছর আগে যখন করোনা গযব নাযিল হলো তখন প্রথম দিকে উলামায়ে সূ’রা ছোঁয়াচে রোগের বিরুদ্ধে ফতওয়া দিলো। সরকারের কুফরী প্রজ্ঞাপনের পর তারা ফতওয়া পরিবর্তন করে ছোঁয়াচে রোগের পক্ষে ফতওয়া দিলো। মসজিদে মুছল্লিদের যেতে নিষেধ করলো, নামাযের কাতারে ফাঁক ফাঁক হয়ে দাঁড়াতে ফতওয়া দিলো। এই সবগুলো কাজই ছিলো সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ। এরা কিন্তু বছরের পর বছর বুখারী শরীফ পড়েছে, পড়িয়েছে। সেখানেই রয়েছে ‘ছোঁয়াচে বলতে কোনো রোগ নেই। ’ কিন্তু তারপরও তারা সরকারের এই কুফরী প্রজ্ঞাপনের বিরোধিতা না করে এর পক্ষেই লিখিত ফতওয়া দিয়েছে, সাধারণ মুছল্লিদেরকে উৎসাহিত করেছে। নাঊযুবিল্লাহ! হাজার হাজার মানুষের নামায নষ্ট করেছে এই উলামায়ে সূ’র দলেরা। যার কারণে দেখা গেলো বড় উলামায়ে সূ’টা যখন মারা গেলো তখন তার লাশে পচন ধরলো, দুর্গন্ধ বের হলো। এভাবেই তাকে দাফন করা হলো।
এই কিছুদিন আগেও দেখা গেলো এরা মুশরিকদের মন্দির পাহারা দিলো, তাদের পূজায় সাহায্য-সহযোগিতা করলো। নাঊযুবিল্লাহ! এমনকি তারা মুশরিকদেরকে আরো বেশি করে মূর্তি বানানোর জন্য বললো। নাঊযুবিল্লাহ!
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












