ইতিহাস
উসমানীয় সালতানাতের ঐতিহ্যবাহী সিপাহী ইউনিট
, ১৭ই রজবুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ২১ ছামিন, ১৩৯২ শামসী সন , ১৭ জানুয়ারী, ২০২৫ খ্রি:, ০৪ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) ইতিহাস

উসমানীয় সালতানাতের সুদীর্ঘ ইতিহাসে উসমানীয় বাহিনীতে বিভিন্ন শ্রেণীবিভাগ লক্ষ্য করা যায়। সাধারণ সেনা, কমান্ডার, এলিট ফোর্স জেনিসারী ইত্যাদি। তবে উসমানীয় বাহিনীতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা ছিলো সিপাহী ইউনিট।
‘সিপাহী’ শব্দটার সাথে আমরা কমবেশী সবাই পরিচিত। বাংলা ভাষায়ও ‘সিপাহী’ শব্দটির প্রচলন আছে। মূলত সিপাহী শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে। পৃথিবীর ইতিহাসে ভাষার মধ্যে দুই সুলতান হলো আরবী ও ফার্সি। অনেক ভাষার মধ্যেই তাই ফার্সি শব্দ রয়েছে।
এই সিপাহীদের আলবেনিয়ায় বলে ‘সিপাহিউ’, রোমানিয়ায় বলে ‘সেপুহ’, আর্মেনিয়ায় বলে ‘সিপাহিস’ আর গ্রিসে বলে ‘স্পাহেয়া’ বা ‘স্পাহেজা’। বসনিয়া, পর্তুগিজ, সার্বিয়া, বুলগেরিয়া ও মেসিডনিয়ায় বলে ‘সিপাইও’ বা ‘সেপয়’, মালয়েশিয়ার ওদিকটাতে আবার বলে ‘সিফাইন’।
সিপাহীরা ছিল উসমানীয় তুর্কীদের নিয়ে গড়ে ওঠা এক দুর্বার ঘোড়সওয়ার যোদ্ধা। সিপাহীরা দুধরণের ছিলো। একটি ‘তিমারলি সিপাহী’, আরেকটি ‘কাপিকুলু সিপাহী’। তিমারলি সিপাহীরা ছিলো প্রাদেশিক সিপাহী আর কাপিকুলু সিপাহীরা ছিলো উসমানীয় হাউজহোল্ড ডিভিশন। তিমারলিদের সাজানো হয়েছিলো সেসব উসমানীয় তুর্কীদেরকে নিয়ে যারা উসমানীয় মিলিটারির সদস্য ছিলো।
তিমারলিদের সুলতান কর্তৃক ভূমি দেওয়া হতো, যেখানে তারা অন্যান্য নাগরিকদের মতোই বসবাস করতো। এই অভিজাত বাহিনীর লোকেরা সেসমস্ত ভূমিতে কৃষকদের সঙ্গেই বসবাস করতেন। রাজস্ব খাত থেকে তাদের প্রশিক্ষণের খরচ তোলা হতো।
উসমানীয় এই ক্যাভালরি মিলিটারী ডিভিশনকে এলাকাভিত্তিক প্রশাসনের দায়িত্ব দেওয়া হতো। উসমানীয় সুলতান প্রশাসনের পাশাপাশি সিপাহীদের উসমানীয় উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক পদেও স্থান দিতেন। সেই প্রশাসন থেকেই একজন সিপাহী উপার্জন করতেন। তিমারলি সিপাহীগণ তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বসবাসরত লোকদের রাজস্ব উত্তোলন করতেন এবং বিনিময়ে জনগনের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতেন। তিমারলি সিপাহীগণ তাদের এলাকা থেকে সৈন্যও সংগ্রহ করতেন।
তিমারলি সিপাহীগণ তাদের জায়গীর হতে সৈন্য সংগ্রহ করতেন, যাদেরকে ‘জেবেলু’ নামে অভিহিত করা হতো। যুদ্ধের সময়ে তিমারলি সিপাহীগণ ও তাদের নিয়োগ করা সৈন্যবৃন্দ একজন রেজিমেন্ট বেয়ের অধীনে জড়ো হতেন যাদেরকে ‘আলেয়’ বেয় বলা হতো। ‘আলেয়’ বেয়গণ তার সিপাহী ও সৈন্যদের নিয়ে ‘সানজাক’ বেয়ের অধীনে জড়ো হতেন। আর সানজাক বেয়গণ বা প্রাদেশিক শাসকগন জড়ো হতেন বেয়লারবেয়দের অধীনে। ইউরোপের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ডাক আসলে রুমেলি বা বলকানের সিপাহীগণ রুমেলি বেয়লারবেয়ের অধীনে রাইট ফ্ল্যাংকে যুদ্ধ করার সৌভাগ্য পেতেন।
আনাতোলিয় সিপাহীরা তাদের ঘোড়সাওয়ারী ও তীরন্দাজি স্কিল দিয়ে প্রতিপক্ষের হ্যাভি ক্যাভালরি ইউনিটকে কুপোকাত করে ফেলতো। বলকানের সিপাহীরা ব্যবহার করতো বৃত্তাকার ঢাল, তলোয়ার বর্শা ও বল্লম। তাদের ঘোড়াগুলোও রণসজ্জায় সজ্জিত থাকতো। আর আনাতোলিয় সিপাহীরা চামড়া বর্ম ব্যবহার করতো। সাথে থাকতো তুর্কী ধনুক ও তুর্কী তলোয়ার ‘কিলিজ’। তাছাড়াও উভয় বাহিনী কিছু মুগুড় ও কুড়াল জাতীয় অস্ত্রও ব্যবহার করতো। যেমন- বোযদোগান ও শেশপান মুগুর, আয়দোগান, তেবের ও সাগের কুড়াল।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
উত্তর আফ্রিকায় যেভাবে মুসলিম শাসনের ভিত শক্তিশালী হয়েছিলো
১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
মহাসম্মানিত নূরুল ফাতহ মুবারক এবং কাশ্মিরের হযরতবাল মসজিদ সম্পর্কিত একটি মশহুর ঘটনা
২৯ জানুয়ারি, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সম্মানিত খিলাফত মুবারক উনার সময়কার একটি ঈমানদীপ্ত ঘটনা
২১ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে ভারতীয় লুটেরা সেনাবাহিনীর নজীরবিহীন লুটপাটের ইতিহাস
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সম্মানিত দ্বীন ইসলাম উনার ইতিহাসে স্বর্ণ পরিশোধন ও রফতানি
১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
দিল্লির সুলতান হযরত শামসুদ্দীন আলতামাশ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার গুনাহমুক্ত জীবন
০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
তাতার বিরোধী যুদ্ধে হযরত আমীর খসরু দেহলভী চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি
০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
আজকের নগরসভ্যতার জনক মুসলমানগণই
০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
আফগানিস্তানেও উগ্রতাবাদী ওহাবী-সালাফীদের অনুপ্রবেশের অপচেষ্টা
২৮ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ঐতিহাসিক হেজাজ রেলওয়ে” যে রেলপথকে বলা হয় ‘বিশ্বের সব মুসলমানের সম্পত্তি’
২১ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
মুসলমানগণই আধুনিক কাগজ শিল্পের প্রতিষ্ঠাতা
১৪ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
ইতিহাস চর্চা ও সংরক্ষণে মুসলমানদের অবদান
১০ নভেম্বর, ২০২৪ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার)