ঘটনা থেকে শিক্ষা
কর্তব্য কাজে দৃঢ়তা এনে দেয় সন্তুষ্টি ও নিয়ামত
, ১৫ শাওওয়াল শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৫ হাদি আশির, ১৩৯২ শামসী সন , ১৪ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রি:, ১ বৈশাখ, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
একদিন হযরত আবূ সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমামুল মুত্তাক্বীন হযরত নিজামুদ্দীন বলখী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে বললেন, “আমি এসেছিলাম আপনার নিকট বাইয়াত হওয়ার জন্য। আপনার মত মহান ব্যক্তিত্বের ছোহবত ইখতিয়ার করা (সংসর্গে থাকা) একান্ত জরুরী মনে করছি। ”
ইমামুল মুত্তাক্বীন হযরত নিজামুদ্দীন বলখী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার আবেদন মঞ্জুর করলেন। উনাকে স্বীয় ছোহবত দানের জন্য বাইয়াত করালেন।
পরের দিন ইমামুল মুত্তাক্বীন হযরত নিজামুদ্দীন বলখী রহমতুল্লাহি আলাইহি খানকা শরীফ উনার দায়িত্বে নিয়োজিত খাদিমকে বলে দিলেন, আজ থেকে আবূ সাঈদ উনার থাকার স্থান অন্যান্য ছূফী উনাদের সাথেই করে দাও। এখন থেকে তার জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে না। বরং অপরাপর ছূফী উনারা যে খাবার খেয়ে থাকে সেও সেখান থেকে খাবে। কারণ এতদিন সে ছিল আমার শায়খ তথা পীর ছাহেব ক্বিবলা উনার আওলাদ। সুতরাং শায়েখ উনার মতই তা’যীম-তাকরীম করা আমার দায়িত্ব ছিল। এখন থেকে সে আমার মুরীদ। সুতরাং তাকে মুরীদের মতই থাকতে হবে।
শায়েখ উনার যেমন আদেশ তেমনি কাজ। পরের দিন থেকে সাধারণ ছূফী-সাধকগণের সাথে উনাকে থাকতে দেয়া হলো। তরবিয়ত (লালন-পালন) চললো মুরীদের মতই।
আর হযরত আবূ সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় শায়েখ উনার খিদমতস্বরূপ পেলেন শায়েখ উনার আওলাদ উনার কবুতরের পাহারাদারী।
এক সময় অবস্থা এমন হলো যে, প্রতি রাতে কবুতর হারিয়ে যায়। কে বা কারা কবুতর চুরি করে তার কোন তথ্য পাওয়া যাচ্ছিল না। পরিশেষে ইমামুল মুত্তাক্বীন হযরত নিজামুদ্দীন বলখী রহমতুল্লাহি আলাইহি সেই কবুতর পাহারা দেয়ার জন্য হযরত আবূ সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকেই নিয়োগ করলেন। আর তিনি এ দায়িত্বকে মহান আল্লাহ পাক উনার বিশেষ নিয়ামত মনে করে যথাযথভাবে পালনে ব্রতী হন; কিন্তু তারপরও কবুতর হারানো রোধ হলো না। পূর্বের মত প্রতি রাতেই কবুতর চুরি হচ্ছিল।
তিনি সেই ব্যাপারে মহাচিন্তায় পড়ে গেলেন। রাত-দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করেও পীর ছাহেব ক্বিবলা উনার খিদমত সুষ্ঠুভাবে পালিত না হওয়ায় তিনি মিয়্যমান। বাড়ীতে প্রবেশের সমস্ত পথ বন্ধ করার পরও কিভাবে প্রতি রাতেই কবুতর চুরি হয় তা নিয়ে উনার ভাবনার শেষ নেই।
বিশেষভাবে অনুসন্ধান চালানোর পর তিনি দেখতে পেলেন, শায়েখ উনার বাড়ীর ভিতর প্রবেশের শুধু একটা পথ খোলা। আর তা হলো পানি চলাচলের রাস্তা। তিনি ভাবলেন হয়তো এই পথ দিয়েই বিড়াল ভিতরে প্রবেশ করে কবুতর ধরে খেয়ে থাকে। আর প্রকৃতপক্ষে সেটাই ঘটেছিল।
সুতরাং তিনি রাতে বাড়ীতে প্রবেশের সমস্ত দরজা-জানালা বন্ধ করে পানি চলাচলের সেই রাস্তার কাছে দাঁড়িয়ে থাকতেন। আর এভাবে রাত-দিন একটানা পরিশ্রমের কারণে যখন শরীর অবসাদগ্রস্থ হতো তখন তিনি পানি চলাচলের সেই নালায় মাথা রেখে গর্তের মুখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতেন। এভাবেই অতিবাহিত হলো উনার রিয়াজত-মুশাক্কাতের অনেকগুলো দিন।
একদিন রাতে মুষলধারে বৃষ্টি হলো। তিনি পানি চলাচলের নালায় মাথা রাখার কারণে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে পীর ছাহেব ক্বিবলা উনার বাড়ীতে পানি জমে গেল। পরের দিন সকালে বাড়ীর লোকজন পানি চলাচলের নালা নিষ্কাশন করার জন্য দেয়ালের অপর দিক থেকে শক্ত বাঁশ দিয়ে প্রেসার (চাপ) দিচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে জোরে প্রেসার (চাপ) দেয়ার কারণে উনার মাথা মুবারক ছিদ্র হয়ে রক্ত বের হয়ে পানি লাল হয়ে গেল। এদিকে কোনভাবেই পানি নিষ্কাশণ করা যাচ্ছে না অপরদিকে পানি লাল হয়ে যাচ্ছে- যার জন্য উনারা ভাবনায় পড়ে গেলেন।
এদিকে হযরত আবূ সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি মাথা মুবারকে আঘাত পাওয়ার কারণে ভাবলেন, মনে হয় বিড়াল ভিতরে ঢুকতে না পেরে মাথায় আক্রমণ করেছে। সুতরাং তিনি বিড়াল বিড়াল বলে চিৎকার করতে লাগলেন।
চিৎকার শুনে লোকজন ছুটে এসে দেখতে পেলেন যে, পানি চলাচল করতে শুরু করেছে বটে; কিন্তু হযরত আবূ সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মাথা মুবারক থেকে তখনও ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। লোকজন চিৎকারের কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। তখন তিনি বিড়ালের প্রসঙ্গ এনে উনার ধারণামূলক ঘটনা বর্ণনা করলেন।
পরে উনাকে শায়েখ উনার কাছে নেয়া হলো। শায়েখ আদ্যপান্ত ঘটনা শুনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন। অতি অল্প সময়ে তিনি সুস্থতা লাভ করলেন। হযরত আবূ সাঈদ রহমতুল্লাহি আলাইহির এরকম স্বীয় কর্তব্য কাজে ইস্তিকামত (অটল), কর্তব্য-পরায়ণতা এবং সহিষ্ণুতা দেখে অত্যন্ত খুশী হয়ে খাছ (বিশেষ) উনার শায়েখ উনাকে তাওয়াজ্জুহ-ফয়েজ দান করলেন। সাথে সাথে খিলাফত দিয়ে মুসলিম উম্মাহর হিদায়েতের দায়িত্ব ভার অর্পণ করে দিলেন।
উল্লেখ্য যে, শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার খিদমতের মাধ্যমে প্রত্যেক মুরীদকে সন্তুষ্টি তালাশ করা কর্তব্য। তবেই তার পক্ষে মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মারিফত-মুহব্বত, সন্তুষ্টি-রেজামন্দি হাছিল করা সম্ভব। সুতরাং পবিত্র দরবার শরীফ উনার মধ্যে অবস্থান করা কালীন সময় যথা সম্ভব শায়েখ আলাইহিস সালাম উনার খিদমত করার কোশেশ করবে। মহান আল্লাহ পাকই তাওফিক দাতা।
-০-
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












