কৃষি মার্কেটে আগুন : পুকুর ধ্বংসের ভয়ংকর ফল
এডমিন, ০৪ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ২২ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি:, ০৫ আশ্বিন, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) আজকের পত্রিকা
নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও রাজধানীর তাজমহল রোডের পাশে একটি বড় পুকুর দেখেছে স্থানীয় অধিবাসীরা। দেখেছে এর কাছেই মিনার মসজিদ এলাকায় শতবর্ষী একটি পুকুর, যেটি ভরাট করে গড়ে তোলা হয় পার্ক। ১৯৭৮ সালে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মালিকানায় মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট গড়ে ওঠে, যার আয়তন ছিল পাঁচ একর। মার্কেট গড়ে তোলার সময় তাজমহল রোডের বড় পুকুরটিও ভরাট করা হয়। ওই সময় মার্কেটের পশ্চিম দিকে ছিল নৌঘাট। কিন্তু দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে নদী ভরাট করে গড়ে ওঠে বসতবাড়ি। ফলে কৃষি মার্কেট হারায় নৌ-যোগাযোগের পথ। আর গত বুধবার দিবাগত গভীর রাতে এ বাজারে আগুন লাগলে পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় তা নেভাতে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘণ্টা!
রাজধানীর যেকোনো অগ্নিকা- নেভাতে ও নিয়ন্ত্রণে আনতে আশপাশে পানি না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনা নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যদেরও এখন বেগ পেতে হচ্ছে। বঙ্গবাজারে আগুন লাগার পর তা নেভাতে হেলিকপ্টারে করে পানি নিয়ে আসতে হয়েছে। অথচ এই মার্কেটের পাশে উসমানী উদ্যানেই ছিল একটি বিরাট পুকুর। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তা শুকিয়ে ফেলা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো এলাকায় পুকুর থাকলে শুধু আগুন নেভানো নয়, জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজও সহজ হয়। জলাশয়ের অভাবে ভূমিকম্পের মতো বিপর্যয়ও আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগুন নেভানোর ক্ষেত্রে পুকুরগুলো কতটা কার্যকর ছিল, সাম্প্রতিক অগ্নিকা-গুলো তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ২১টি অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে ১৪টি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের সময় লেগেছে গড়ে প্রায় ১ ঘণ্টা। এসব স্থানে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের সর্বোচ্চ ১৬টি থেকে সর্বনিম্ন ২টি ইউনিট কাজ করেছে।
চলতি বছরের জুনে প্রকাশিত বিআইপির এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত ২৮ বছরে ঢাকা থেকে ৮৫ ভাগ পুকুর হারিয়ে গেছে। একটি আদর্শ শহরের মানদ-ে অন্তত ১০ থেকে ১২ ভাগ পুকুর প্রয়োজন। যেখানে ঢাকায় আছে মাত্র ২.৯১ ভাগ। গত বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে আগুন লাগে। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। এ মার্কেটের আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিটের সঙ্গে যোগ দেয় সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর বিশেষ দল। আশপাশে পুকুর না থাকায় পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায়নি। যে কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় লাগে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, পুকুর ধ্বংসের পরিণাম ভোগ শুরু হয়েছে। এখনই পুকুর রক্ষা করা না গেলে ভবিষ্যতে আরও চরম মূল্য দিতে হবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পুকুর ভরাট করে মার্কেট বা আবাসিক ভবন তৈরি হচ্ছে। ২০১৮ সালের পরিসংখ্যানে ঢাকা শহরে পুকুর ছিল ১০০টি। বর্তমানে এ সংখ্যা নেমে এসেছে ২৯টিতে। পর্যাপ্ত পুকুর না থাকায় আগুন নেভাতে বেশি সময় লাগছে। ক্ষয়ক্ষতিও বেশি হচ্ছে।’