সুওয়াল-জাওয়াব
জনৈক ওহাবী মালানার বক্তব্য হচ্ছে, দিবস পালন করা জায়িয নেই। এ বক্তব্য কতটুকু শরীয়ত সম্মত?
প্রসঙ্গ: ইসলামে বিশেষ দিবস পালন
, ১৩ ছফর শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০১ রবি’ ১৩৯১ শামসী সন , ৩০ আগস্ট, ২০২৩ খ্রি:, ১৬ ভাদ্র, ১৪৩০ ফসলী সন, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
জাওয়াব: পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা উনার নিজগৃহে সমবেত হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনাদেরকে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ সম্পর্কিত মুবারক ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছিলেন। এতে শ্রবণকারী উনারা আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার প্রশংসা অর্থাৎ তাসবীহ-তাহলীল মুবারক পাঠ করছিলেন এবং মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি (পবিত্র ছলাত শরীফ-পবিত্র সালাম শরীফ) পবিত্র দুরূদ শরীফ পাঠ করছিলেন। এমন সময় নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তথায় তাশরীফ মুবারক নেন এবং (পবিত্র মীলাদ শরীফ পাঠের অনুষ্ঠান দেখে) খুশি মুবারক প্রকাশ করে ইরশাদ মুবারক করলেন, আপনাদের জন্য আমার শাফায়াত মুবারক ওয়াজিব।” সুবহানাল্লাহ! (আত তানউয়ীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, মাওলূদুল কাবীর, দুররুল মুনাযযাম, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদিল মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, ইশবাউল কালামি ফী ইছবাতিল মাওলিদি ওয়াল ক্বিয়ামি, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী মীলাদে আহমদী)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের বর্ণনার দ্বারা প্রতিভাত হয়েছে যে, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সুমহান বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশের দিবস উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে মাহফিলের ইন্তেজাম করেছেন এবং স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উক্ত মাহফিলে তাশরীফ মুবারক নিয়ে খুশি মুবারক প্রকাশ করে সুসংবাদ প্রদান করে ইরশাদ মুবারক করেন যে, মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাদের জন্য সমস্ত রহমত মুবারকের দরজা খুলে দিয়েছেন, সকল হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা আপনাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। শুধু তাই নয়, আপনাদের মতো (ক্বিয়ামত পর্যন্ত) যারাই এরকম মাহফিলের ইন্তেজাম করবেন তিনিও আপনাদের ন্যায় ফযীলত ও নাজাত লাভ করবেন। আর হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার বর্ণিত হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে খুশি মুবারক প্রকাশ করে এই বলে সুসংবাদ প্রদান করেন যে, আপনাদের জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব বা অপরিহার্য করে দেয়া হলো। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো বর্ণিত হয়েছে- “হযরত আউস ইবনে আউস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আপনাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছেন পবিত্র জুমুয়াহ উনার দিন। এ দিনে হযরত আবুল বাশার ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি সৃষ্টি হয়েছেন এবং এ দিনেই তিনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেছেন।” (নাসায়ী শরীফ শরীফ: কিতাবুল জুমুয়া: হাদীছ শরীফ নং ১৩৮৫, মুসলিম শরীফ: কিতাবুল জুমুয়া, হাদীছ শরীফ নং ৮৫৫, তিরমিযী শরীফ: হাদীছ শরীফ নং ৪৯১, মুসনাদে আহমদ শরীফ: হাদীছ শরীফ নং ৮৯৫৪, ইবনে মাজাহ শরীফ: হাদীছ শরীফ ১৭০৫, আবূ দাঊদ শরীফ: কিতাবুছ ছলাত, হাদীছ শরীফ নং ১০৪৭, ইবনে খুজায়মা শরীফ: হাদীছ শরীফ নং ১৬৩২)
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
“হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি এই দিনকে মুসলমান উনাদের জন্য পবিত্র ঈদ উনার দিনরূপে নির্ধারণ করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি পবিত্র জুমুয়াহ উনার নামায আদায় করতে আসবে, তিনি যেন গোসল করেন এবং সুগন্ধি থাকলে তা শরীরে লাগান। আর মিসওয়াক করাও কর্তব্য।” (ইবনে মাজাহ শরীফ: হাদীছ শরীফ নং ১০৯৮, আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ: হাদীছ শরীফ নং ৭৩৫৫)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে পবিত্র জুমুয়া উনার দিবসকে সম্মানিত মুসলমান উনাদের জন্য ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাই উক্ত দিন উনার সম্মানার্থে মিসওয়াক করার জন্য, গোসল করার জন্য ও সুগন্ধি ব্যবহার করার জন্য বলা হয়েছে। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি যখন পবিত্র মদীনা শরীফ উনার মধ্যে তাশরীফ মুবারক নিয়ে দেখতে পেলেন যে, ইয়াহুদীরা পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন রোযা রেখে থাকে। তিনি উম্মতকে তা’লীম প্রদানের জন্য তাদেরকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। তখন ইয়াহুদীরা বললো, এই দিন হচ্ছে একটি নেক কাজের দিন। এই দিনে (ফির‘আঊন ও তার সৈন্যবাহিনী পানিতে ডুবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিলো। আর) হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি ও উনার সঙ্গী-সাথীরা উনাদের শত্রুদের যুলুম-নির্যাতন থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। এজন্য আমরা মহান আল্লাহ পাক উনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশার্থে রোযা পালন করি। তখন নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, হযরত কালীমুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে আমিই বেশি হক্বদার। (ইবনে মাজাহ শরীফ উনার রেওয়ায়েতে- তোমাদের চেয়ে আমরাই বেশি হক্বদার।) অতঃপর নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি স্বয়ং পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন রোযা রাখলেন এবং এই মুবারক দিনে সবাইকে রোযা রাখার হুকুম মুবারক দিয়েছেন। (বুখারী শরীফ: কিতাবুছ্ ছওম: বাবু ছিয়ামি ইয়াউমি আশূরা: হাদীছ শরীফ নং ২০০৪, ইবনে মাজাহ শরীফ: কিতাবুছ্ ছওম: বাবু ছিয়ামি ইয়াওমি আশূরা: হাদীছ শরীফ নং ১৭৩৪)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে পবিত্র আশূরা শরীফ দিবসকে পূণ্যের দিন, মহান দিন বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং উক্ত দিবস পালনার্থে স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি রোযা রেখেছেন এবং উনার উম্মত আমাদেরকেও রোযা রাখার জন্য আদেশ মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “সাইয়্যিদাতুনা হযরত উম্মুল মু’মিনীন আছ ছালিছাহ ছিদ্দীক্বা আলাইহাস সালাম উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন এবং বলতেন, তোমরা পবিত্র রমাদ্বান শরীফ মাস উনার শেষ দশকে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর শরীফ তালাশ করো।” (বুখারী শরীফ: কিতাবু ফাদ্বলিল লাইলাতুল ক্বদরি: বাবু তার্হারী লাইলাতিল ক্বদরি ফিল উইতরি মিনাল আশরি আওয়াখিরি: হাদীছ শরীফ নং ২০২০)
উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, স্বয়ং নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি পবিত্র রমাদ্বান শরীফ উনার শেষ দশকের দিনসমূহে ই’তিকাফ করতেন এবং বিজোড় রাত্রিসমূহে সজাগ থেকে লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করতেন এবং উম্মতকেও তালাশ করার জন্য আদেশ মুবারক করেছেন। সুবহানাল্লাহ!
উপরোক্ত বর্ণনাসমূহ ছাড়াও আরো অনেক বর্ণনা রয়েছে যা দ্বারা প্রতিভাত হয়েছে যে, দিবস পালন করা সম্মানিত দ্বীন ইসলামসম্মত অর্থাৎ ফরয ওয়াজিব উনার অন্তর্ভুক্ত এবং রহমত, নিয়ামত, মাগফিরাত, শাফায়াত, নাজাত ও কামিয়াবী হাছিলের কারণ। সুবহানাল্লাহ! (সমাপ্ত)
(মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ থেকে সংকলিত)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












