তাওয়াক্কুল করার প্রতিদান
, ৩০ ছফর শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ২৬ ছালিছ, ১৩৯৩ শামসী সন , ২৫ আগস্ট, ২০২৫ খ্রি:, ১০ ভাদ্র, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন-
مَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
অর্থ : যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার উপর তাওয়াক্কুল করে তথা ভরসা করে; তিনিই তার জন্য যথেষ্ঠ হয়ে যান। সুবহানাল্লাহ! (সূরা ত্বালাক্ব শরীফ, আয়াত শরীফ-০৩)
উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার ব্যাখ্যায় পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে একটি ওয়াক্বিয়া বর্ণনা করা হয়েছে।
বিশিষ্ট ছাহাবী সাইয়্যিদুনা হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- বনী ইসরাঈলের এক ব্যক্তি বনী ইসরাঈলের অপর এক ব্যক্তির নিকট এক হাজার দীনার কর্জে হাসানা তথা ঋণ চাইল। তখন সে ঋণদাতা বলল, কয়েকজন সাক্ষী উপস্থিত করো, আমি তাদেরকে সাক্ষী রাখব। ঋণগ্রহীতা বলল, (এখন তো আমার কোন সাক্ষী উপস্থিত নেই) কাজেই সাক্ষী হিসাবে মহান আল্লাহ পাক তিনিই যথেষ্ট। তারপর ঋণদাতা বলল, আচ্ছা ঠিক আছে। সাক্ষী যেহেতু নেই তাহলে একজন যামিনদার উপস্থিত করো যে তোমার অনুপস্থিতিতে তোমার ঋণ পরিশোধ করবে। সে ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি বলল, আমার কোন যামিনদারও নেই কাজেই যামিনদার হিসাবেও মহান আল্লাহ পাক তিনি যথেষ্ট। ঋণদাতা বলল, তুমি সত্যই বলেছ। এরপর নির্ধারিত সময়ে পরিশোধের শর্তে তাকে এক হাজার দীনার দিয়ে দিল।
ওদিকে ঋণ গ্রহীতা সামুদ্রিক সফর করল এবং তার প্রয়োজন সমাধা করে সে যানবাহন খুঁজতে লাগল, যাতে সে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তার কর্জে হাসানা তথা ঋণ পরিশোধ করতে পারে। কিন্তু সে অনেক খুজা খুজি করেও কোন যানবাহন পেল না। তখন সে কোন উপায় না পেয়ে এক টুকরো কাঠ নিয়ে তা ছিদ্র করল এবং ঋণদাতার নামে একখানা পত্র ও এক হাজার দীনার তার মধ্যে ভরে ছিদ্রটি বন্ধ করে সমুদ্র তীরে এসে বলল, আয় আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন! আপনি তো জানেন, আমি অমুকের নিকট এক হাজার দীনার কর্জে হাসানা চাইলে সে আমার কাছে সাক্ষী চেয়েছিল, আমি বলেছিলাম সাক্ষী হিসাবে আল্লাহ পাক তিনিই যথেষ্ট। এতে সে রাজী হয়। তারপর সে আমার কাছে যামিনদার চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম, যামিনদার হিসেবেও মহান আল্লাহ পাক তিনি যথেষ্ট, তাতেও সে রাজী হয়ে যায়। আয় আল্লাহ পাক! আমি তার কর্জে হাসানা (যথাসময়ে) পরিশোধের উদ্দেশ্যে যানবাহনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু পাইনি। তাই আমি আপনার নিকট সোপর্দ করলাম, (আপনি দয়া করে এ বাক্সটি তার নিকট পৌঁছে দিন। ) এই বলে সে কাষ্ঠখন্ডটি সমুদ্রে নিক্ষেপ করল। আর কাষ্ঠখন্ডটি সমুদ্রে প্রবেশ করল। অতঃপর লোকটি ফিরে গেল এবং নিজের শহরে যাওয়ার জন্য পুনরায় যানবাহন খুঁজতে লাগল।
এদিকে কর্জে হাসানা পরিশোধের নির্ধারিত সময়ে ঋণদাতা এই আশায় সমুদ্রতীরে গেল যে, হয়ত বা ঋণগ্রহীতা কোন নৌযানে করে তার মাল নিয়ে এসেছে। (কিন্তু সে অপেক্ষা করতে করতে কোন নৌযান না পেয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। ) এমন সময় তার দৃষ্টি একটি কাষ্ঠখন্ডের উপর পড়ল, সে কাষ্ঠখন্ডটি তার পরিবারের জ্বালানীর জন্য বাড়ী নিয়ে গেল। যখন সে তা (কুড়াল দিয়ে) চিরল(দু টুকরো করলো), তখন সে কাষ্ঠখন্ডটির ভিতর এক হাজার স্বর্ণ মুদ্রা ও পত্রটি পেয়ে গেল (যা ঐ ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়েছিলো)।
কিছুদিন পর ঋণগ্রহীতা এক হাজার দীনার নিয়ে এসে হাযির হল এবং বলল, মহান আল্লাহ পাক উনার কসম! আমি আপনার মাল যথাসময়ে পৌঁছিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে সব সময় যানবাহনের খোঁজে ছিলাম। কিন্তু আমি যে নৌযানে এখন আসলাম, তার আগে আর কোন নৌযান পাইনি। ঋণদাতা বলল, তুমি কি আমার নিকট কিছু পাঠিয়েছিলে? ঋণগ্রহীতা বলল, আমি তো তোমাকে বললামই যে, এর আগে আর কোন নৌযান আমি পাইনি। তখন ঋণদাতা ব্যক্তি বলল, তুমি কাঠের টুকরোর ভিতরে যা পাঠিয়েছিলে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তোমার পক্ষ হতে আমাকে তা আদায় করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ! তখন সে ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার শুকরিয়া আদায় করলো এবং অত্যন্ত আনন্দচিত্তে এক হাজার দীনার নিয়ে ফিরে গেল। (পবিত্র বুখারী শরীফ-২২৯১)
যেহেতু কর্জে হাসানা দাতা ও গ্রহীতা উভেয়েই মহান আল্লাহ পাক উনার উপর তাওয়াক্কুল করেছিলো তাই মহান আল্লাহ পাক তিনি তাদের জন্য যথেষ্ঠ হয়েছেন। অর্থাৎ যথা সময়ের মধ্যে তার ঋণ পরিশোধ করে দিয়েছেন। সুবহানাল্লাহ!
কাজেই উক্ত ওয়াক্বিয়া থেকে সহজেই অনুধাবন করা যায়, যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ পাক উনার উপর তাওয়াক্কুল করে তিনিই তার জন্য যথেষ্ঠ হয়ে যান। সুতরাং মহান আল্লাহ পাক তিনি যেন আমাদেরকে সর্বাবস্থায় উনার উপর তাওয়াক্কুল করার তৌফিক দান করেন। আমীন!
-মুহম্মদ হুসাইন নাফে’।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












