ত্বাহারাতের ইস্তিব্রা ও ইস্তিন্ক্বার আহকাম (পর্ব-৪)
, ২২ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ০১ আউওয়াল, ১৩৯২ শামসী সন , ৩১ মে, ২০২৪ খ্রি:, ১৭ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
اَلْاِسْتِبْرَاءُ (ইস্তিব্রা) এর পরিচয় ও আহ্কাম:
ইস্তিব্রা কাকে বলে:
اَلْاِسْتِبْرَاءُ (ইস্তিব্রা) শব্দটি بَرَأَ(বারায়া) শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ হলো পবিত্র করতে চাওয়া। এই اَلْاِسْتِبْرَاءُ (ইস্তিব্রা) দু’ভাগে বিভক্ত। যথা: (১) যে اَلْاِسْتِبْرَاءُ (ইস্তিব্রা) এর মাধ্যমে রেহেম শরীফকে (জরায়ুকে) অন্যের সন্তান হতে হায়েযের দ্বারা (মাসিক মাজুরতার দ্বারা) পবিত্রতার নিশ্চয়তা সম্পর্কে অবগত হওয়া। (২) যে اَلْاِسْتِبْرَاءُ (ইস্তিব্রা) এর মাধ্যমে ছোট ইস্তিন্জার রাস্তা (প্রস্রাবের রাস্তা) পবিত্র করতে চাওয়া।
এখানে اَلْاِسْتِبْرَاءُ (ইস্তিব্রা) বলতে ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) করার পর এতটুকু নিশ্চিত হতে হবে যে, ছোট ইস্তিন্জার রাস্তায় (প্রস্রাবের রাস্তায়) এমনকি বাহিরের শেষ প্রান্তেও অর্থাৎ পুরুষলিঙ্গের মাথায়ও যেন বিন্দু থেকে বিন্দুতম পরিমান ছিটে-ফোঁটা নিংড়ানো প্রস্রাব অবশিষ্ট না থাকে যা বের হওয়ার আশঙ্কা হয় বা পরিধেয় কাপড়ে লাগতে পারে। এভাবে পবিত্র হওয়ার জন্য কোশেশ করাকেই ইস্তিব্রা বলে।
এই ইস্তিব্রা করা কারো জন্য ফরয, কারো জন্য ওয়াজিব এবং কারো জন্য সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্। মহিলাদের জন্য মুস্তাহাব। মহিলারা সামান্য বিলম্ব করে পানি ব্যবহার করলেই মুস্তাহাব আদায় হবে। কিন্তু পুরুষদেরকে অবশ্যই ইস্তিব্রা করতে হবে। প্রস্রাবের মুকামে অর্থাৎ পুরুষলিঙ্গের মাথায় কুলুখ ধরা আমভাবে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ্। আর খাছভাবে ফরয, ওয়াজিব।
ইস্তিব্রা এর উদ্দেশ্য:
اَلْاِسْتِبْرَاءُ (ইস্তিব্রা) এর উদ্দেশ্য হল ছোট ইস্তিন্জার রাস্তা থেকে (প্রস্রাবের রাস্তা থেকে) অবশিষ্ট ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) বের করে পরিপূর্ণরূপে পবিত্রতা হাছিল করা। যা বের হয়ে কাপড়ে ও শরীরে লাগার কোনই আশঙ্কা নেই।
যেমন “মাওসূআতে আহকামুত্ ত্বাহারাত” কিতাবে উল্লেখ আছে-
وَالْاِسْتِبْرَاءُ اِسْتِنْقَاءُ الذِّكْرِ عَنِ الْبَوْلِ
অর্থাৎ اَلْاِسْتِبْرَاءُ (ইস্তিব্রা) শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো ছোট ইস্তিন্জা করার পর (প্রস্রাব করার পর) ছোট ইস্তিন্জার রাস্তা থেকে (প্রস্রাবের রাস্তা থেকে) অবশিষ্ট ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) কোশেশ করে বের করে পুরুষলিঙ্গ ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ধোয়া।
والاستبراء: طلب البراءة من البول، وهو أن يستفرغ بقية البول، وينقي موضعه ومجراه، حتى يبرئهما منه: أي يبينه عنهما.
অর্থাৎ اَلْاِسْتِبْرَاءُ (ইস্তিব্রা) শব্দের পারিভাষিক অর্থ হলো ছোট ইস্তিন্জা করার পর (প্রস্রাব করার পর) ছোট ইস্তিন্জার রাস্তা থেকে (প্রস্রাবের রাস্তা থেকে) অবশিষ্ট ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) বের করে পুরুষলিঙ্গ ভালোভাবে পরিষ্কার করে ধোয়ার ইচ্ছা পোষণ করা। আর তা এভাবে যে ছোট ইস্তিন্জা করার পর (প্রস্রাব করার পর) ছোট ইস্তিন্জার (প্রস্রাবের) রাস্তায় এমনকি বাহিরের শেষ প্রান্তেও যেন অর্থাৎ পুরুষলিঙ্গের মাথায় যেন বিন্দু থেকে বিন্দুতম পরিমান ছিটে-ফোঁটা নিংড়ানো ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) পুরুষলিঙ্গে অবশিষ্ট না থাকে, এতটুকু নিশ্চিত হতে হবে । ইহাকেই اَلْاِسْتِبْرَاءُ (ইস্তিব্রা) বলে। (মাওসূআতে আহকামুত্ ত্বাহারাত” ১৩তম খ- ১৪৯ পৃষ্ঠা .)
“শরহে বুলূগুল মারাম” কিতাবের ১১তম খ-ের ১২ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
من كل ذلك نعلم أنه يجب على المسلم أن يَتنزَّهَ عن البول ويَتحرَّزَ أن يُصيبَ ثوبَه أو بدنَه.
অর্থ: “উপরোক্ত বর্ণনা থেকে আমরা এটাই জানতে পারলাম যে, মুসলমানদের জন্য ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) থেকে ইস্তিব্রা করা ওয়াজিব। আর “ইস্তিব্রা করার নিয়ম হলো ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) থেকে পুরুষলিঙ্গ এমনভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা যাতে করে পেশাবের রাস্তায় ও পুরুষলিঙ্গের মাথায় বিন্দু থেকে বিন্দুতম পরিমান ছিটে-ফোঁটা নিংড়ানো ছোট ইস্তিন্জা (প্রসাব) অবশিষ্ট না থাকে; এ বিষয়ে সতর্ক থাকা। যা পরিধেয় কাপড়ে এবং শরীরে লাগতে পারে”।
“শরহে বুলূগুল মারাম” কিতাবের ১ম খ-ের ৩১০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
وَالْحِكْمَةُ فِي ذَلِكَ حُصُولُ الظَّنِّ بِأَنَّهُ لَمْ يَبْقَ فِي الْمَخْرَجِ مَا يَخَافُ مِنْ خُرُوجِهِ،
অর্থ: “ইস্তিব্রা সম্পর্কে উপরোক্ত বর্ণনা থেকে এ ফায়ছালাই হাছিল হলো যে, ছোট ইস্তিন্জার (প্রস্রাবের) রাস্তায় ও পুরুষলিঙ্গের মাথায় বিন্দু থেকে বিন্দুতম পরিমান ছিটে-ফোঁটা নিংড়ানো ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) অবশিষ্ট থাকবে না; যা ছোট ইস্তিন্জার রাস্তা দিয়ে (প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে) বের হওয়ার আশঙ্কা হয়”।
“আল মাজমুআ” কিতাবের ৩য় খ-ের ৩৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
الْمُخْتَارُ ..... وَالْمَقْصُودُ أَنْ يَظُنّ أَنّهُ لَمْ يَبْقَ فِي مَجْرَى الْبَوْلِ شئ يُخَافُ خُرُوجُهُ
অর্থ:“ইস্তিব্রা সম্পর্কে উপরোক্ত বর্ণনা থেকে নির্ভরযোগ্য কথা হলো এই যে,“ইস্তিব্রা করার মাক্বছূদ হলো ছোট ইস্তিন্জার (প্রস্রাবের) রাস্তায় ও পুরুষলিঙ্গের মাথায় বিন্দু থেকে বিন্দুতম পরিমান ছিটে-ফোঁটা নিংড়ানো ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) অবশিষ্ট থাকবে না; যা ছোট ইস্তিন্জার রাস্তা দিয়ে (প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে) বের হওয়ার আশঙ্কা হয়”।
কাজেই উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটাই প্রমাণিত হলো যে, স্বাভাবিকভাবে ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) করার পর, ইস্তিব্রা করে ছোট ইস্তিন্জার রাস্তা থেকে (প্রস্রাবের রাস্তা থেকে) অবশিষ্ট ছোট ইস্তিন্জা (প্রস্রাব) বের করে পরিপূর্ণরূপে পবিত্রতা হাছিল করা। যা বের হয়ে কাপড়ে বা শরীরে লাগার কোনই আশঙ্কা নেই। আর দ্বিতীয়ত ছোট ইস্তিন্জার (প্রস্রাবের) ছিটা যেন পায়ে, শরীরে ও কাপড়ে না লাগে সে ব্যাপারেও সাবধান ও সতর্ক থাকতে হবে। অন্যথায় এই ইস্তিন্জার কারণে (প্রস্রাবের কারণে) ক্ববরের আযাব ভোগ করতে হবে।
-আল্লামা মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
আখেরী রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
পবিত্র ছোহবত মুবারক গ্রহণের ফাযায়িল-ফযীলত, গুরুত্ব-তাৎপর্য ও আবশ্যকতা:
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
যে নিজে পর্দা করে না ও অধীনস্থদের পর্দা করায় না সে দাইয়ূছ
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
হাক্বীক্বী মৃত্যুকে স্মরণ করার মধ্যেই শহীদী দরজা মিলে
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
শরীয়তের দৃষ্টিতে কোন রোগই ছোঁয়াচে নয়, ছোঁয়াচে বিশ্বাস করা কুফরী
১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, ম্যানিকিন ও ছবি নাজায়িয ও হারাম
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
হযরত আব্বাদ ইবনে বিশর ইবনে ওয়াকাশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (২)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৩)
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা কবীরা গুনাহ ও অসন্তুষ্টির কারণ
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে সর্বক্ষেত্রে ফায়সালাকারী হিসেবে মেনে নেয়াই ঈমানদারের পরিচয়
১১ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার)












