দাড়ি ও গোঁফের আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় (৮)
, ০৭ যিলক্বদ শরীফ, ১৪৪৫ হিজরী সন, ১৭ ছানী আশার, ১৩৯১ শামসী সন , ১৬ মে, ২০২৪ খ্রি:, ০২ জৈষ্ঠ্য, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
দাড়ি রাখা সুন্নত না ফরয?
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে আরো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে-
عَنْ حَضْرَتْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهٗ أَمَرَ بِإِحْفَاءِ الشَّوَارِبِ وَإِعْفَاءِ اللِّحْيَةِ.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করে বলেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি গোঁফ ছোট করার ও দাড়ি লম্বা করার আদেশ দিয়েছেন।
অতএব, উপরোক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের দ্বারাও দাড়ি রাখা ফরয-ওয়াজিব প্রমাণিত হয়। কারণ, উক্ত পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার আদেশ-নিষেধ মান্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর উক্ত পবিত্র হাদীছ শরীফ উনাদের মধ্যে সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উম্মতকে দাড়ি রাখার আদেশ দিয়েছেন। সুতরাং দাড়ি রাখা পুরুষের জন্যে ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।
তাছাড়া পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে দাড়ি সম্পর্কীয় যতগুলো পবিত্র হাদীছ শরীফ বর্ণিত হয়েছে, তার প্রায় প্রতিটিতেই (اَمْرٌ) ‘আমর’ বা আদেশসূচক শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন-
أَعْفُوْا- اَوْفُوْا- اَرْخُوْا- وَفِّرُوْا
অর্থাৎ উল্লেখিত শব্দগুলো দ্বারা দাড়ি রাখার আদেশ দেয়া হয়েছে। আর উল্লেখিত সবগুলো শব্দই আমর বা আদেশসূচক। আর আমাদের হানাফী মাযহাবের গ্রহণযোগ্য উসূল হলো- যতক্ষণ পর্যন্ত ‘আমর’-এর বিপরীত কোন দলীল-প্রমাণ পাওয়া না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ‘আমর’ দ্বারা ওয়াজিব সাব্যস্ত হবে।
আর তাই ইমাম, মুজতাহিদ তথা ফিক্বাহবিদগণ উনাদের কিতাবে দাড়ি রাখা ফরয-ওয়াজিব বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন- বিশ্ববিখ্যাত আলিমে রাব্বানী, হাফিযুল হাদীছ, হযরতুল আল্লামা শাহ সূফী রুহুল আমীন বশীর হাটী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত ও প্রসিদ্ধ কিতাব ‘ফতওয়ায়ে আমিনীয়ার’ ১ম খ-, ৯০ পৃষ্ঠায় লিখেন- “এক কব্জা পরিমাণ দাড়ি রাখা ফরয। কেননা ফরয ত্যাগ করা হারাম।
মিশকাত শরীফ উনার বিখ্যাত শরাহ ‘আশয়াতুল লুময়াত’ ১ম খ- ২২৮ নম্বর পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে-
وكزاشتن ان بقدر قبضه واجب است
অর্থ: এক মুষ্ঠি পরিমাণ লম্বা দাড়ি রাখা ওয়াজিব।
তাছাড়া দাড়ি রাখা ফরয হওয়ার আরেকটি প্রমাণ হলো এই যে, সকল ইমাম-মুজতাহিদ একমত যে, এক মুষ্ঠির কমে দাড়ি কাটা হারাম। আর মূলতঃ হারাম থেকে বেঁচে থাকা বা বিরত থাকা শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভুক্ত।
সুতরাং অকাট্যভাবে প্রমাণিত হলো যে, দাড়ি রাখা ফরয-ওয়াজিবের অন্তর্ভূক্ত। দাড়ি কাটা সকলের ঐক্যমতে হারাম।
যেহেতু দাড়ি কাটার কারণে নানাবিধ কবীরাহ গুনাহ সংঘটিত হয়, যেমন- দাড়ি কাটার কারণে আকৃতির বিকৃতি ঘটে, বিজাতীয় ও বিধর্মীদের অনুসরণ করা হয়, মেয়ে লোকের সাদৃশ হয়ে যায়। যা মহান আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ হতে লা’নত বা অসন্তুষ্টি প্রাপ্তির কারণ। যেহেতু উল্লিখিত কাজগুলো শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হারাম কাজের অন্তর্ভুক্ত। আর শরীয়ত উনার উসূল হলো-
مَا اَدَّى اِلَى الْحَرَامِ فَهُوَ حَرَامٌ
অর্থ: যে কাজ হারামের দিকে নিয়ে যায়, সে কাজও হারাম।
কাজেই দাড়ি কাটার কারণে নানাবিধ হারাম কাজ সংঘটিত হয়, সেহেতু দাড়ি কাটা হারাম। আর তাই ফিক্বাহর বিখ্যাত কিতাব ‘দুররুল মুখতার’ ৪র্থ খ- ৫৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে-
وَاِذَا يَحْرُمُ عَلَى الرَّجُلِ قَطْعُ لِحْيَتِهٖ
অর্থ: বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্য হয় বিধায় পুরুষের জন্যে নিজ দাড়ি কাটা হারাম করা হয়েছে। মিশকাত শরীফ উনার বিখ্যাত শরাহ “আশয়াতুল লুময়াত” ১ম খ- ২২৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে যে-
حلق كردن لحيه حرام است
অর্থ: দাড়ি মুন্ডন করা হারাম।
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, পুরুষের জন্য দাড়ি কাটা হারাম। (চলবে)
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












