দুনিয়ার মুহব্বত সকল গুনাহের মূল
, ২২ রবীউল আউওয়াল শরীফ, ১৪৪৭ হিজরী সন, ১৮ রবি’, ১৩৯৩ শামসী সন , ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রি:, ০২ আশ্বিন, ১৪৩২ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
জিন-ইনসানসহ যত মাখলূকাত রয়েছে, যাদেরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি সৃষ্টি করেছেন মহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সন্তুষ্টি মুবারক অর্জন বা হাছিল করার জন্য। তারা যদি সেটা বুঝতে পারতো, তাহলে অবশ্যই তারা দুনিয়াবী জিন্দেগীকে প্রাধান্য না দিয়ে আখিরাত বা পরকালকেই প্রাধান্য দিতো।
সেটাই মহান আল্লাহ পাক তিনি বলে দিয়েছেন যে, হাক্বীক্বত দুনিয়াবী জিন্দেগী ক্রীড়া-কৌতুক এবং খেল-তামাশার মত এবং প্রকৃত জিন্দেগী হচ্ছে- যেটা মহান আল্লাহ পাক তিনি বলেছেন যে, “পরকালই প্রকৃত জিন্দেগী, যদি তারা সেটা বুঝতো। ”
কাজেই দুনিয়াবী জিন্দেগী- তার তাৎপর্য, তার অবস্থা বা বুরায়ী প্রত্যেক মুসলমানকেই সেটা জানতে বা বুঝতে হবে। এ প্রসঙ্গে বলা হয় যে, হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি একদিন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র হুজরা শরীফে গেলেন সাক্ষাত মুবারক করার জন্য। সেখানে গিয়ে যখন উনি বসলেন। তখন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি খেজুরের চাটাইয়ের মধ্যে শোয়া ছিলেন। নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি উঠে বসলেন, উনি যখন বসলেন, যেহেতু উনি খেজুরের চাটাইয়ের মধ্যে শোয়া ছিলেন, উনার মহাসম্মানিত নূরুল আত্বহার মুবারক অর্থাৎ পিঠ মুবারকে সেই চাটাইয়ের দাগ পড়ে গিয়েছিলো এবং হুজরা শরীফে মশকের ভিতরে সামান্য কিছু পানি ছিলো। একটা পাত্র মুবারকে কিছু যবের আটা ছিলো। সেটা দেখে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি কাঁদতে লাগলেন।
মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনি কাঁদতেছেন কেন? কি কারণ? উনি বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ, ইয়া হাবীবাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনার শান মুবারক দেখে আমার কান্না আসতেছে, কারণ মহান আল্লাহ পাক তিনি আপনাকে সৃষ্টি না করলে আসমান-যমীন, আরশ-কুরসী, লৌহ-কলম, বেহেশ্ত-দোযখ কোন কিছুই সৃষ্টি করতেন না। মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার রুবূবিয়ত প্রকাশ করতেন না। সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু-কেন্দ্রস্থল হচ্ছেন আপনি। আর আপনার এই শান মুবারক! সত্যিই আপনি কায়িনাতবাসীর জন্য আদর্শ।
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, “আমার কি শান?” তিনি বলেন, আপনি এমন সাধারণ শান মুবারক প্রকাশ করছেন অথচ যারা রোম-পারস্যের শাসক, যারা চির জাহান্নামী, যারা মৃত্যুর সাথে সাথে জাহান্নামে চলে যাবে, তাদের কত শান-শওকত, কত বিলাসিতা, তাদের কথা স্মরণ হয়ে এবং আপনার এ শান মুবারক দেখে আমার কান্না পাচ্ছে। তখন মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, হে হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম! আপনি কি জানেন, আমার মধ্যে আর দুনিয়ার মধ্যে কি সম্পর্ক রয়েছে? আমার মধ্যে আর দুনিয়ার মধ্যে সম্পর্ক হচ্ছে- একজন ঘোড় সাওয়ারীর ন্যায়। অর্থাৎ একজন ঘোড় সাওয়ারী ঘোড়ার উপর সাওয়ার হয়েছে, ভ্রমণ করছে, ভ্রমণ করার কারণে সে ক্লান্ত বা পরিশ্রান্ত হয়ে গিয়েছে, তার কিছু বিশ্রামের দরকার রয়েছে। সে বিশ্রামের জন্য একটা গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিলো, অতঃপর সেখান থেকে চলে গেলো। ঠিক একটা গাছের ছায়ার সাথে একজন ঘোড় সাওয়ারী বা মুছাফিরের যতটুকু সম্পর্ক, আমার সাথে দুনিয়ার ঠিক ততটুকু সম্পর্ক।
অতএব, একজন ঘোড় সাওয়ারী ক্লান্তি-শ্রান্তির কারণে যেমন গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নেয়, কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। সে নিজে নিজে স্বস্তিবোধ করলে, সেখান থেকে অল্পক্ষণ পরে চলে যায়, অর্থাৎ ছায়া ত্যাগ করে, ঠিক আমার এবং দুনিয়ার মধ্যে অতটুকুই সম্পর্ক, যতটুকু সম্পর্ক রয়েছে ঘোড় সাওয়ারী এবং গাছের ছায়ার মধ্যে।
কাজেই আমাদের জন্য দুনিয়ার মাল-সামানা, সম্পদ পাওয়া না পাওয়ার সাথে কোন সম্পর্ক নেই এবং এর জন্য কাঁদারও কিছু নেই। যেহেতু দুনিয়ার জন্য আমাদের সৃষ্টি করা হয়নি। বরং মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করার জন্য আমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। আর সেটা হচ্ছে- আমাদের মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য। যেটা অন্য হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন্ নাবিয়্যীন, নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নিশ্চয়ই দুনিয়াকে তোমাদের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। আর তোমরা সৃষ্টি হয়েছো পরকালের জন্য। ” সুবহানাল্লাহ!
মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে দুনিয়ার মুহব্বত থেকে হিফাজত করুন। আমীন।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
হযরত আব্বাস ইবনে মিরদাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
যাকাত সম্পর্কিত আহকাম, মাসায়িল ও ফাযায়িল (৪)
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাফরমানীমূলক কাজ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












