মন্তব্য কলাম
দেশে ভেজাল ওষুধের দৌরাত্ম বাড়ছেই। ১২ হাজার কোটি টাকার ওষুধের এক-দশমাংশই নিম্নমানের। ভেজাল ওষুধে বহুবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। সরকার এখনই প্রতিরোধ না করলে দেশের জনস্বাস্থ্য মহাবিপর্যয়ের মুখে পড়বে।
, ১১ ই শা’বান শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৪ তাসি’, ১৩৯২ শামসী সন , ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রি:, ২৮ মাঘ, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) মন্তব্য কলাম

চিকিৎসা করা সম্মানিত সুন্নত উনার অন্তর্ভূক্ত। আর রোগের চিকিৎসা এবং রোগ উপশমের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি নিয়ামক হলো ওষুধ। কিন্তু এই ওষুধ নিয়েও দেশে চলছে স্বেচ্ছাচারিতা এবং অসৎ কারবার। দিন দিন ওষুধের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ইতোমধ্যে কয়েকটি কোম্পানির ২০০ ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে দফায় দফায়। এক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে ১০ থেকে প্রায় ৩০০% পর্যন্ত। দাম বাড়ানোর আগে বাজারে ওষুধ সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে কোম্পানিগুলো। এক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই জিম্মি হয়ে পড়েছে তাদের কাছে।
ঠিক এমন মুহুর্তে মরার উপর খাড়ার ঘা-স্বরূপ দৌরাত্ম বেড়েছে ভেজাল ওষুধের। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ফার্মেসীগুলোতে ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি বাড়ছে। মহানগরীর পাড়া-মহল্লার ফার্মেসীগুলোতে নিম্নমানের ওষুধের ছড়াছড়ি। মূল কোম্পানীর ওষুধের মতো হুবহু লেবেলে নকল ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। মূল কোম্পানির ওষুধের চেয়ে দাম কম হওয়ায় এসব ওষুধ কিনে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা। স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। রোগীর লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক, অস্থিমজ্জা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মূলত ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের নজরদারী না থাকায় নকল ওষুধ বিক্রির রমরমা ব্যবসা চলছে।
দেশে ২৪১টি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৩০ হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধ বানাচ্ছে। যে কোনো ওষুধ বাজারজাত করার আগে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমতি নিয়ে বাজারজাত করতে হয়। কিন্তু একবার বাজারজাত করার পর সেই ওষুধের গুণগত মান নিয়ে আর কোনো তদারকি হয় না। এই সুযোগেও অনেক নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ওষুধের মান কমিয়ে দেয়।
ওষুধ প্রশাসনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে এবং প্রশিক্ষণ ছাড়াই ফার্মেসি দিয়ে বসে পড়েছে ওষুধ ব্যবসায়। এসব ফার্মেসি ব্যবসায়ীরা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই হায়ার এ্যান্টিবায়োটিক, নিষিদ্ধ, ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও বিভিন্ন নিম্নমানের উত্তেজক নানা প্রকার ওষুধ বিক্রি করছে অবাধে। আরেক তথ্যে, বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির ৩০-৪০ ভাগ কমিশনের লোভে ওষুধ ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের ওষুধ বাজারে সরবরাহ করে থাকে।
বাজারে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ওষুধের এক-দশমাংশই নিম্নমানের। দেশের অতিলোভী একশ্রেণির চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রের সুবাদে এসব ওষুধের চাহিদা ও বিপণন ক্রমেই বাড়ছে। আর চাহিদা অনুযায়ী আকাশ, বাস ও রেল পথে ভারত থেকে আনা হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ। সংশ্লিষ্ট পৃথক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শুধু রাজধানীতেই প্রায় দেড় শতাধিক ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠান ভেজাল ওষুধ তৈরি ও নিষিদ্ধ-মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ আমদানির সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশে অবৈধ ওষুধের দোকানের সংখ্যা ২ লাখেরও বেশি। এরা অবাধে নকল ওষুধ বিক্রি করছে। এছাড়াও স্থলপথ ও আকাশপথেও ভারত, মিয়ানমার, দুবাই, সউদী আরব, পকিস্তান ও থাইল্যান্ড থেকে নিষিদ্ধ ওষুধ দেশে আসছে। চোরাইপথে আসা এসব ওষুধ প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ঢাকার মিটফোর্ড, চট্টগ্রাম, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেসিক সায়েন্স ও বায়ো কেমিস্টি সূত্রে জানা যায়, ১৯৮২ সালের ওষুধনীতিতে ১ হাজার ৭০৭টি বাণিজ্যিক ওষুধকে ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় বাতিল করা হয়েছিল। এর ফলে, নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বাজারে খুবই কম ছিল। কিন্তু বর্তমানে ওষুধনীতিতে ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয় ওষুধকে চিহ্নিত করা হয়নি। এর ফলে ছোট ছোট কোম্পানিগুলো বেশি মুনাফার জন্য নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
ওষুধ মানবজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। কিন্তু কিছু অসৎ ও মুনাফালোভী সিন্ডিকেট মেয়াদোত্তীর্ণ, নকল, ভেজাল এবং অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রি করে দেশের মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে। সরকারের উচিত হবে তাদের ধরে এনে আইনের কাঠগড়ায় তোলা। দুর্বৃত্তদের প্রতি কোনো ধরনের দুর্বলতা দেখালে দেশের জনস্বাস্থ্য হুমকির মধ্যে পড়তে বাধ্য হবে। পূর্বে ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে আমাদের দেশের ৫০০ শিশু কিভাবে মারা গিয়েছিলো সেটা সবারই জানা। যারা কেবল মুনাফা লাভের আশায়, এদেশের মানুষকে জিম্মি করে অনুমোদনহীন, ভেজাল, নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি ও আমদানি করে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যেতে চায়, তাদের অবশ্যই অর্থাৎ সেসব মুনাফালোভী হীনস্বার্থ উদ্ধারকারী নকল ভেজাল মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রেতাদের প্রচলিত আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন করতে হবে। তা না হলে আমাদের দেশে ভেজাল ওষুধের কারখানা শুধু বৃদ্ধি পেতেই থাকবে। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো শাস্তি থেকে যেন রাঘববোয়লরা বাদ না যায়।
ওষুধের ক্ষেত্রে অনাচারের অর্থই হচ্ছে মানুষের জীবন নিয়ে বাণিজ্য। জীবন নিয়ে প্রতারণা। পবিত্র কুরআন শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- “মানুষকে হত্যা করা কুফরী। ” পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন- “যে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মত নয়। ”
মূলত, চিকিৎসাক্ষেত্রে প্রতারণার দ্বারা উপরোক্ত দুই অপরাধ বা তদপেক্ষা বেশি অপরাধও প্রযোজ্য হয়। যে অপরাধবোধ ওষুধ প্রস্তুতকারী মালিক, বিক্রয় প্রতিনিধি, বিক্রয়কারী, আমদানিকারক এবং সংশ্লিষ্ট ডাক্তার তথা বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কারো মধ্যেই নেই বললেই চলে।
-আল্লামা মুহম্মদ ওয়ালীউর রহমান।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
কুরবানী আসে-যায় মৌসুমী কসাইরা অরক্ষা আর অবহেলাতেই থেকে যায়। তাদের অনেকে আহত হয়, পঙ্গু হয়, আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়- মৌসুমী কসাইদের প্রশিক্ষণ ও পৃষ্টপোষকতার পাশাপাশি ঈদুল আদ্বহায় বিশেষ স্বাস্থসেবা চালু করা দরকার।
১২ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
‘ইসলামভীতি মোকাবেলায় জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস’ হলেও কার্যকরী কিছুই হচ্ছে না ইসরাইলকে সহযোগিতা করতে আমেরিকায় ইসলামোফোবিয়ার বিস্তার আরো বাড়ানো হচ্ছে
০৫ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বাড়ছে পরকীয়া, বাড়ছে তালাক সমাজে বাড়ছে কলহ-বিবাদ, শিথিল হয়ে পড়ছে পারিবারিক বন্ধন দ্বীনী মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং সম্মানিত দ্বীন ইসলাম বৈরিতাই এর মুখ্য কারণ। সরকারের উচিত- জাতীয়ভাবে পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনার আদর্শ ও শিক্ষা প্রচার ও প্রসার করে এই সামাজিক সমস্যাটি দূর করা।
০৪ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
মানবতা বা মনুষ্যত্ব শব্দ উচ্চারণের অধিকার বিশ্ববাসীর আর নাই গাজার শিশুদের আর্তনাদ, গাজার মায়ের আহাজারি যে বিশ্ব শুনতে পায় না- “সে বিশ্ব বধির”। গাজার শেষ হাসপাতাল ধ্বংস
০৩ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
কেবল কুরবানীর পশুই বিক্রি হয় ১ লাখ কোটি টাকার পাশাপাশি চামড়া সংশ্লিষ্ট খাত, খামার সংশ্লিষ্ট কর্মসংস্থান, মশলার বাজার ইত্যাদি মিলিয়ে মোট কুরবানী অর্থনীতির আকার প্রায় ২ লাখ কোটি টাকার শুধুমাত্র চামড়াই নয় বর্তমানে বাংলাদেশে গরুও রপ্তানী হচ্ছে ভারতের গরু ব্যবসায়ী থেকে কুখ্যাত মোদীর মাথায় এখন হাত
০২ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
রাজনৈতিক সমালোচক মহল বলছেন দেশে এখন মাফিয়া ও লুটেরা সরকার চলছে তারা দেশের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের জন্য মরীয়া হয়ে উঠেছে দুদক, হামলা-মামলা দিয়ে দেশীয় ব্যবসায়ীদেরকে ত্রাসের মধ্যে আটকে রাখা হচ্ছে
০১ জুন, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) -
প্রসঙ্গ : কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের ধারণা ও ক্বিয়ামতের তথ্য
৩১ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ সাবত (শনিবার) -
পরিবেশবান্ধব চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার বাধা বলে যেসব তথাকথিত পরিবেশবাদীরা ট্যানারিগুলোকে স্থানান্তরিত করলো, আজকে চামড়া শিল্পের ধ্বংসে তাদের কর্মতৎপরতা কোথায়?
৩০ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল জুমুয়াহ (শুক্রবার) -
চামড়া সংরক্ষণে সারাদেশে সরকার ৬০০ চামড়া গুদামের কথা বললেও প্রয়োজন ছোট বড়ো মিলিয়ে হাজারেরও বেশী গুদাম পাশাপাশি শুধু চামড়া গুদামই নয় সরকারের উচিত সাভারের ট্যানারি শিল্পের সঙ্কটও নিরসন করা চামড়া শিল্পের সঙ্কট নিরসন করলে চামড়া খাতের রফতানি আয় ছাড়াবে হাজার কোটি ডলারেরও বেশি
২৯ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল খমীছ (বৃহস্পতিবার) -
বড় বড় কোম্পানীগুলোর কব্জায় গরুর খাদ্য। কুরবানীর গরুর উচ্চমূল্যও তাদের কারসাজির কারণে। গো-খাদ্যের দাম কমানোর পাশাপাশি কুরবানীর গরু প্রকল্পে সরকারের প্রণোদনা দেয়া উচিত।
২৮ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল আরবিয়া (বুধবার) -
সংস্কারের দাবিদার বর্তমান সরকারও প্রচলিত রপ্তানির বৃত্তের মধ্যেই আবদ্ধ। আম রপ্তানির ২৬টি বাধা দূরীকরণে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়। বাংলাদেশে বৎসরে ১ কোটি টন আম উৎপাদন সম্ভব ইনশাল্লাহ। হাজার হাজার কোটি টাকা রপ্তানিও সম্ভব ইনশাল্লাহ।
২৭ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সমালোচক মহলের মতে ‘দেশের বড় বড় সব ব্যবসা’ ‘সম্পদ’, ‘সার্বভৌমত্ব’ বিদেশীদের হাতে বিশেষ করে আমেরিকার হাতে তুলে দেয়ার জন্য বিভিন্ন কূটকৌশলী তৎপরতায় বিভোর অন্তর্বর্তী সরকার। সমন্বয়ক হাসনাতও আমেরিকার তাবেদারীর বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছে।
২৬ মে, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)