দ্বীন ইসলাম উনার ঈমানদীপ্ত ঐতিহ্য (৩০)
পবিত্র ঈমান রক্ষায় সাইয়্যিদুনা হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার অবর্ণনীয় যুলুম-নির্যাতন শিকার
, ০৭ মুহররমুল হারাম শরীফ, ১৪৪৬ হিজরী সন, ১৬ ছানী, ১৩৯২ শামসী সন , ১৪ জুলাই, ২০২৪ খ্রি:, ৩০ আষাঢ়, ১৪৩১ ফসলী সন, ইয়াওমুল আহাদ (রোববার) পবিত্র দ্বীন শিক্ষা
পূর্ব প্রকাশিতের পর
আরেকদিনের ঘটনা:
একদল কুরাইশ মুশরিক হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার দোকানে আসলো তাদের তরবারি নেয়ার জন্য। তিনি তখন সেখানে ছিলেন না। তারা অপেক্ষা করলো। কিছু সময় পরেই তিনি আসলেন। তারা জানতে চাইলো, তাদের তরবারীগুলো প্রস্তুত হয়েছে কিনা? কিন্তু আজ হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি অন্যমনষ্ক। কি যেন ভাবছেন। উনার চেহারা মুবারকে ঈমান উনার নূর মুবারক চমকাচ্ছেন। অন্তরে আনন্দের অনুভূতি। তাদের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বরং নিজে নিজেই বলছেন, ‘উনার বিষয়টি বড়ই আশ্চর্যের। ’ তারা তখন জানতে চাইলো, কার বিষয়টি হে হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু? আমরা তো আপনার কাছে আমাদের তরবারি চাচ্ছি। তা তৈরী কি শেষ হয়েছে? আবেগাপ্লুত হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি এবারও বলছেন, তোমরা কি উনাকে দেখেছো? তোমরা কি উনার কথা মুবারক শুনেছো? তারা হতভম্ব হয়ে পরস্পর পরস্পরের দিকে তাকাতে লাগলো। তাদের মধ্যে একজন রাগতঃস্বরে বললো, আপনি কি উনাকে দেখেছেন? তখন হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি তার কথা তাকে ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, তুমি কার কথা বলছো? তখন ঐ ব্যক্তি বললো, আপনি যাঁর কথা বলছেন আমিও উনার কথাই বলছি। তিনি ব্যাপারটাকে দাওয়াতের সঠিক সুযোগ মনে করলেন। তিনি এই সুবর্ণ সুযোগটি হাতছাড়া না করে বললেন, হ্যা, আমি উনাকে দেখেছি, উনার কথা মুবারক শুনেছি।
رَأَيْتُ الْحَقَّ يَتَفَجَّرُ مِنْ جَوَانِبِهِ وَالنُّوْرُ يَتَلَأْلَأُ بَيْنَ ثَنَايَاهُ
‘আমি দেখেছি যে, উনার চারদিক থেকে সত্য প্রবাহিত হচ্ছেন এবং উনার সামনের (নূরুল্লাহ মুবারক) দাত মুবারকে আলো (নূর মুবারক) জ্বলজ্বল করছেন, দ্যুতি ছড়াচ্ছেন। ’ সুবহানাল্লাহ!
এবার তাদের বিষয়টি বুঝতে আর বাকী থাকলো না। তাদের মধ্যে একজন চিৎকার দিয়ে বললো, আপনি কার কথা বলছেন হে উম্মে আনমারের গোলাম? হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি শান্তভাবে জবাব দিলেন, হে আমার আরব ভাইয়েরা! তোমাদের কওমের মধ্যে তিনি ব্যতীত আর কে আছেন, যাঁর চতুর্দিক থেকে সত্য প্রবাহিত হন, যার মহাসম্মানিত নূরুস সালাম মুবারক (জবান মুবারক) থেকে নূর মুবারকের আভা ছড়িয়ে পড়েন? হতভম্ব হয়ে তাদের আরেকজন চেচিয়ে বললো, আপনি কি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার কথা বলছেন? এবার হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি মাথা মুবারক দুলিয়ে বললেন-
نَعَمْ إِنَّه هُوَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْنَا لِيُخْرِجَنَا مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّوْرِ.
‘হ্যাঁ; তিনিই মহান আল্লাহ পাক উনার সম্মানিত রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! যিনি আমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনার জন্য প্রেরিত হয়েছেন। ’ সুবহানাল্লাহ!
এই কথা শুনার সাথে সাথেই উপস্থিত কুরাইশ হায়েনারা ঝাঁপিয়ে পড়ে উনার উপর। উনাকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলে। তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। দীর্ঘক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলে দেখেন ঐ যালিম লোকগুলো আর নেই। তিনি অসাড় অবস্থায় পড়ে আছেন মাটিতে। উনার সমস্ত শরীরজুড়ে তীব্র ব্যাথার যন্ত্রণা। সারা শরীর ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত। অতঃপর অনেক কষ্টে তিনি সেদিন বাড়ী ফিরে যান। (রিজালু হাওলার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১/৫৯)
লৌহবর্ম পরিধান করিয়ে নির্যাতন:
হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার সাহসিকতা দেখে কুরাইশ নেতারা হতভম্ব হয়ে যায়। ইতিপূর্বে কেউ সম্মানিত দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করে প্রকাশ্যে ঘোষণার দুঃসাহস দেখায়নি। অথচ উম্মে আনমারের এই গোলাম কুরাইশ নেতাদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে, তাদেরকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তারা হযরত আবু সুফিয়ান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু (তিনি তখনো ঈমান গ্রহণ করেননি) উনার নেতৃত্বে পবিত্র কা’বা শরীফ চত্বরে জরুরী পরামর্শ বৈঠকে বসলো। যেখানে ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা, আবু জাহিল ইবনে হিশামসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলো। তারা সিদ্ধান্ত নিলো যে, আরবের যারাই তাদের বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ করে সম্মানিত ইসলাম গ্রহণ করবে, উনাদের উপর স্ব স্ব গোত্রের লোকদের দ্বারা চরম নির্যাতন চালাবে। এতে হয় উনারা সম্মানিত ইসলাম ত্যাগ করবেন অথবা শহীদ হবেন। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হযরত খাব্বাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার উপরে নির্যাতনের দায়িত্ব অর্পিত হলো যালিম উম্মে আনমারের ভাই সিবা’ বিন আব্দুল উয্যা ও তার গোত্রের উপর।
-হাফিয মুহম্মদ ইমামুল হুদা।
এ সম্পর্কিত আরো সংবাদ
-
অ্যান্টার্কটিকা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় বিজ্ঞানীরা
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৪)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি; অস্বীকারকারীরা কাট্টা কাফির (১)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পর্দা করা ফরজ, বেপর্দা হওয়া হারাম
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
পবিত্র কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ উনাদের আলোকে মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র দু‘আ বা মুনাজাত (১১তম অংশ)
১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুছ ছুলাছা (মঙ্গলবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব আলাইহিস সালাম (৩)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার দুনিয়ার যমীনে অবস্থানকালীন সময়ে ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম শরীফ যে রোযা মুবারক রাখতেন সে রোযা মুবারক মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র ১২ই শরীফ উনার দিনে হওয়াটা ছিলো একটি বিরল ঘটনা (২)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মহাসম্মানিত হাযির-নাযির শান মুবারক (১)
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
প্রাণীর ছবি তোলা হারাম ও নাজায়িজ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
সাইয়্যিদুনা হযরত সুলত্বানুন নাছীর আলাইহিস সালাম উনার পবিত্র ওয়াজ শরীফ
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) -
আল্লাহওয়ালী মহিলা উনাদের তিনটি বৈশিষ্ট্য-
১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ ১২:০০ এএম, ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার)












